কোলবালিশ
সারিবদ্ধ বিছানায় তুমিই একমাত্র কোলবালিশ
তোমাকে নিয়ে সে কী টানাটানি! জানো তো
বাঙালি ঘুমের সময় একা একা ঘুমাতে পারে না
এসময়টাতে তার কিছু চা-ই চাই। অথচ
এই সারিবদ্ধ চিলেকোটার অন্ধকারে
তুমিই একমাত্র কোলবালিশ, তাই
ঘুমানোর সময়টাতে প্রতিরাতে প্রবল কোলাহল
ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি, খিস্তি-খেউর
যে পারে সে পারে এবং নিয়ে যায় তেপান্তরে
কোলবালিশ কোলে টেনে গাঢ় ঘুম টুপটুপ ঝরে
রাত বাড়ে। ঘুমাতে দেয় না তাই বালিশ বসে থাকে
ঘুমায় না এতটুকু, হাঁটে চলে কথা বলে নিজেরই সাথে
আবার কখন কে কাছে টানে, ঘন নিঃশ্বাস ফেলে
চেপে ধরে দু উরুর মাঝে
শব্দশুয়োর
সেইসব শব্দেরাও একদিন পুরোপুরি উঠে আসবে আমাদের কবিতায়
যারা ছিল যবন, ম্লেচ্ছ, হরিজন। স্বপ্নহীন মাথামুণ্ডু বিন্যাসে জীবন
বারবার ঘোষণা দিয়ে যায়—কিছুই যায় না অস্বীকার করা, এমনকী
যেখানে সারারাত ধর্ষণে ধর্ষণে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে প্রকৃতির অবয়ব
তাকেও না
মাঝে মাঝে শুদ্ধচারী গল্পের রেশ ধরে এঁকেবেঁকে যেতে চাই
মেঘলা দিন, তল্লাটে তল্লাটে উড়ছে শ্বাসাঘাত ক্ষীণ। ওসব ক্রমশ
দূর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অনার্য শব্দগুলো মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে
তাকে কেউ পারবে না মুছে দিতে। এতটা সাহস সময়েরও নেই
মানুষের তো নে-ই
ঘাটের ওপারে বাঁধা সঙ্গম-ক্লান্ত ঘোর শব্দ শুয়োর
মাংসমজ্জা ঠেলে দাঁড়িয়েছে অস্পৃশ্য অশ্লীল পাথর
ঈশ্বরের বাড়ি
জানো তো আমার মাঝে যে ঈশ্বর বসবাস করে তার অনেক মৃত্যু
পথে পথে ঘোলা জলের কারসাজি তবু তার কথা মনে আসে
কত ক্ষীণ শ্বাসের পাশে পড়ে আছে চেনাজানা কিছু সংলাপ
কিছু সংগোপন যাবার বেলা নীরব কথোপকথন বারবার বলছে
সব গান মুছে যাবে কিছুই থাকে না গোপন
তার কথাই ঠিক। শাটেল ধরে তার বাড়ি গিয়েছিলাম
সে এক আদিম দিনের ঝরাপাতা পথ। কেউ মনে রাখলো না
স্মৃতিগত সব পথ একদিন পথিকও ভুলে যায়
হোক না বাদামি রঙ পুড়ে পুড়ে আরও গাঢ়
পানিভাঙা জীবন এবারে নেওয়ার হলে নিয়ে নেবে তার ঠিকানা
যেখানে পড়শি বেসে হেসে হেসে খেলা করে তাহাদের ঈশ্বর