কুহকজাল
জীবন মূলত সত্য আর মিথ্যার মধ্যবর্তী এক চাঞ্চল্যের নাম-
তৃষ্ণায় প্রেমে, সাফল্যের ধোঁয়াশায় কিছুটা রোদ আর কিছুটা কুয়াশায়
কে কখন কার পাশে ছিলাম!
আমরা ভুলতে বসি আমাদের অনিশ্চয়তাকে, আমরা ভুলে যেতেই ভালোবাসি!
ফুলও একদিন তার নিটোল সৌন্দর্য হারায়, ঝরে যায়
মানুষ বোঝে না
দিনে দিনে শুধু বাড়ায় দেনা—
ভালোবাসা ছেড়ে এসে কেবলই মন্দবাসার অভ্যাসে পড়ে যায়।
আঙুল
মনে করি, এই কবিতার একটি মোলায়েম শব্দ আমাকে অস্বীকার করে
মাঝ করতোয়ায় সাঁতার কাটতে গেছে-
মনে করি, টিপটিপ বৃষ্টির শিহরনজাগানিয়া জল
সেই শব্দটির গায়ে এসে পড়ছে মাঝেমধ্যেই।
মনে করি, সেই শব্দটি এবার উঠে আসতে চায় আমার আঙুলেই।
আমার আঙুল বেয়ে সে নেমে আসতে চায়
কবিতার খেরোখাতায়
আমি কি এখন তবে করতোয়ায় আমার আঙুল ডুবাতে যাবো!
না কি ভাববো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট নিয়ে
ফরেন এক্সচেঞ্জ কিংবা রেমিট্যান্স ফ্লো নিয়ে!
নিমেষেই আমার নিউরন চলে যায় চরম অর্থকষ্টে কাটানো
অর্ধসত্য দিনগুলোতে রাতগুলোতে
আমি সাঁতার কাটি—
করতোয়ায় নয়, দুঃসময়ে
তখন আমার আঙুল ডুবে থাকতো ব্রহ্মপুত্রে, দিনমান
অসহ্য ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়েও
আজ আমার আঙুল করতোয়ায় ডুবতে অসম্মতি জানায়।
মনে করি, এই আঙুল আমার নয়।
রেহাই
যত আয়োজন করেই তুমি
মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে নিয়ে
আমার কাছে আসো না কেন
আমি আমার দুধের বাচ্চাকে
এই পৃথিবীতে একলা ফেলে
কোথাও যাবো না
এই রকম কথা শুনেও যমদূত
একটুও কালক্ষেপণ না করে
তার কাজটুকু সেরে ফেলে
কাজের ব্যাপারে যমদূতের এমন দৃঢ়তাই
একজন নবজাতককে
এক নিমেষেই মাতৃহারা করে দেয়
এই ঘটনায় মাতৃদুগ্ধ তাকে
অভিশাপ দিয়েছিল কি না
আমাদের কারোর পক্ষে সে খবর রাখা সম্ভব হয়নি
তবে একজন শতবর্ষী শুভ্রকেশ বালক
একবার আকুতি করেই তাকে বলেছিল
কেমন করে যাই, বড্ড মায়া পড়ে গেছে…
তারও আগের ঘটনা,
এক যুবতীকে তার বিয়ের রাতে সাপে কাটলো
একটা রাত প্রেমিকের হাত ধরে
ছটফট করার সাধ ছিল মেয়েটির
যমদূতের তখনো সময় নষ্ট করার মতো
সময় ছিল না, এখনো নেই
কারণ কয়েক হাজার বছর আগে
ঈশ্বর নাকি তাকে বলেছিলেন
যদি সে তার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে যেতে থাকে
তবেই একদিন এই কুৎসিত কাজ থেকে
তাকে রেহাই দেওয়া হবে
লাশ
একটি কবিতার মাত্র একটি লাইন লেখার পর একটা আস্ত রাত পৃথিবীতে নেমে এলো
আমি এই রাতকে মেনে নিয়ে আমার নিজস্ব পুরুষকে নিয়ে মেতে উঠলাম প্রেমে
রাত যতই গড়িয়ে যায় আমাদের প্রেমলীলা ততই বাড়তে থাকে
আর এক লাইল লেখা সেই পোড়া কবিতাটি আমার অপেক্ষায় থেকে থেকে জীবনবাবুকে জানায় অভিযোগ
আমি নাকি প্রায়ই এমন করি
আমি নাকি শরীর বুঝি না
আমি নাকি শিহরণ বুঝি না
এইসব কথার মাঝখানেই জুড়ে বসে ক্লিওপেট্রার হাসি
কবিতাটি নড়েচড়ে বসে, মস্তিষ্কে
দ্বিতীয় লাইনটি পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, সে আসবে না
পৃথিবীতে আসাই নাকি আমাদের অকারণ বিলাসিতা
আমার নাকি নিজেরই জায়গা নেই
আমার নাকি কোনো কবিতা নাজিল করা সাজে না
আমি এই কথা মেনে নিয়ে আমার নিজস্ব পুরুষকে নিয়ে পুনরায় মেতে উঠলাম প্রেমে
কবিতাটি আমাকে ছেড়ে চলে গেলো একজন মৃতের শরীরে
সকালবেলা এই মৃত্যুসংবাদ আমার কানে এলে
আর দশজনের সাথে সাথে আমিও আহাজারি করি
মনে মনে মৃতের সব ভালো গুণের কথা ভাবার চেষ্টা করি, অথচ আমার কিছুই মনে পড়ে না
এমন সময় ভাবি, এসব নিয়ে সময় নষ্ট না করে আমার বরং একটা ভালো কবিতা লেখা দরকার
তখনই আমার চোখ পড়ে মৃতের আচমকা খুলে যাওয়া চোখে
আমার নিজেরই লাশের রক্তশূন্য চোখ আমি চিনে নিতে পারি।