শস্যমালা
বাজারের নাম শস্যমালা।
সুতিয়া নদীর পাশে অতনু দেহের মতো সাবলীল মানুষের ভিড়;
তামা-গলা সূর্যের সিথানে তবুু অরণ্যশোভন এই নীরবতা খান খান ভেঙে যাবে আজ।
সরব উত্থানে কোন উজ্জীবন
জড়িয়ে রয়েছে এই প্রাণের পেখম জনতার?
. তেমাথায় গোল হয়ে সুতিয়া নদীর পাশে অভিলাষহীন?
পণ্যের জঠরে বসে কেউ বুঝি জাদুর দোলক শুধু দু‘হাতে নাড়েন;
চিলতে রোদের মতো প্রতিপাদ্য সোনার হৃদয় এখানে দারুণ বেচাকেনা হয়
মনের ব্যঞ্জনে খুব শিখর ছুঁয়েছি বলে মানুষের
আজ বাঁশি হয়ে যাই; উড়ে আসি রঙিন ফানুস আমি হাওয়া হাওয়া পলাতক।
উলম্ব গতির দিকে মুখ করে প্রতিভায় জেগে আছে গগন শিরীষ;
একটি সজনে গাছ, পাতা নাই; ডালে ডালে নিরীহ বিকেল।
মনে হয় ভৌতিক কঙ্কাল—শুধু নিরন্ন আঙুলগুলো থাবা মেলে আছে।
পাঁচটি সতীর্থ পাখি এইমাত্র সহসা দুর্বার উড়ে গেলো;
জীবনের ভাঁজে ভাঁজে পরিবৃত স্বাধীনতা কোথায় লুকিয়ে থাকে এতটা সুলভ?
শুকনো নদীর বুকে ফসলের ঢেউ…
প্রতিবর্ণ সভ্যতার সবুজ আগুন বুঝি জল কেড়ে নিলো!
সুবর্ণ কৃষক ছাড়া লোল অভিশাপ তবে কে বোঝে এমন?
বনেদি বাড়ির দিকে ওই যে মেয়েরা তাই গগনবিদারি সুখ, তবু
নিরুপায় একটি বেদনা শুধু আঁচলে বেঁধেছে।
আর বুড়ো বৃক্ষের কোটরে থাকা কুণ্ডুলিত সাপের মতন
অনন্য খোঁপায় তারা গুঁজে নিচ্ছে ফুল, সাদা জবা।
মোড়ল বাঁশের মতো আমার যৌবন কেন স্ফীত হয়ে যায়?
নিজেকে খরচ করে সজল ঋণের বারে নুয়ে পড়ি।
আকাশ এখানে রোজ সহস্র মেঘের কুঁড়েঘর;
হিমের কুন্তলে আজ জেগে আছে রমণীসুলভ।
আহা নারী! আমাকে ছোবল দাও,
সভ্যতা বিলীন করে অরণ্যবাসরে সমধিক নীলকণ্ঠ হয়ে উঠি।
দৃষ্টিপাত
স্তন
দু’মুঠো জানালা তোমার।
উঁকি দিলে অন্তঃপুরে লেলিহান
. পরীর পৃথিবী যেন মানবী শরীর।
কতদূর লতাপাতা?
. বনের পশম?
. নাভির প্রদেশে ছত্রখান
. স্পর্শের গণ্ডগ্রাম?
. নির্জন?
চাঁদ, নিভে যাও।
সিঁদেল চোরের কাছে জোছনাকে
শত্রু মনে হয়।
পরম্পরা
এখানে মরণ অস্থির গায়ে দনকলসের পাতা
বাকল খুলেছে মহাকাল ঋষি, ভেষজের নীল ছাতা।
মাটির ডেরায় ডিমের আদল, ঘুমাও পরম গুরু
তোমাকে ফোটাই দাদাজান পাখি, এখানে তাবৎ শুরু..
০১.
যতটুকু ফেরা যায় সবটুকু রোদের গরিমা
কপালে মেখেছি। আজ শ্রমের অধিক
আলস্য মোড়ানো হাঁটা। চর্চিত পুঁথির পাতা
. গলার মাদুলি।
পেছনে
শতক শতক
কৃতির পদাঙ্ক ছুঁয়ে যতদূর হিমানী পাহাড়,
ততদূরে যায় না শেকড়।
তবু ছায়া, পয়মন্ত স্বাদ
গতায়ু হিজল থেকে কতদূর,
গজে গজে মাপি।
কতটা খণ্ডিত আছি? বধির শ্রবণে?
গল্পগুলো উপড়ে তুলেছি,
ওজন বাড়াবো।
হে বিমোহন ভার,
রক্ত কি রোধের পাখি? লোকান্তর মাঠে অন্ধ চোখ?
পথ ভুলে গেছি।
অকুণ্ঠ সমাধিরেখা মনের বাতিক।
আজ পরিমাপ।
লক্ষ যোজন মাটির
. কসম।
কুকুরীর জন্য সংবেদনা
আঘাতে আঘাতে মানুষ দস্যু হয়ে যায়।
চিতই পিঠার মতো জালি জালি কলিজায়
রক্ত ফিনকি দিয়ে ওঠে তার।
বুকের গহিনে অদৃশ্য চুলোয় স্বপ্নরে পুড়ে দেয়
যে স্বৈর দহন,
তারই বিধ্বস্ত পাড়ে পড়ে থাকে একাকি
জ্বলন্ত অঙ্গার মানুষ।
অতঃপর আবুল কালাম
আরেক উদ্বাহু স্বপ্নের কোলে ঘুমোতে চায়।
ঔরসের রক্তের মতো যে ছিল আপন,
জান্তব পুরুষের টানে ছেড়ে গেছে বহুদিন
খান খান হৃদয়ের পাতে অশোধিত ঋণ কিছু রেখে গেছে সে।
ঐন্দ্রজালিক সময়কে যে মানে বান্ধব
উতরোল কান্নায় কে ফেরাবে তারে?
তবুও তো মনিবের আড়ালে গেলে নিরীহ পশু
কর্কশ চিৎকারে মমতার স্বকীয় চিহ্ন রাখে;
প্রেমের গলিত লালার ওপর অমিয় সৌরভ রেখে
মানুষ মানুষকে ছেড়ে যায় দ্ব্যর্থহীন।
তবুও আশা থাকে
বেদনার বিমূর্ত কফিনে লা-ওয়ারিশ কুকুরীর মতো
নির্বেদের আঙিনায় যদি সে ফেরে।
আবুল কালাম!
মানুষের কলিজা নিয়ে ধাপ্পা খেলে যে নিষ্ঠুর ,
অন্তহীন অঙ্কের অকূলপাথার নিয়ে
উদ্ধত যৌবনে তারও পড়ন্ত বিকেল নামে।
প্রেমের বিনয়ী জল হাতে পরিপূর্ণ মাটির বাসন—
অপেক্ষা করে সে।
প্রাণের কুকুরী, আহা, আপন মানুষ
. যদি ফিরে আসে…
লখিন্দরের গান
দশ.
কোথয় বেহুলা বধূ?
তোমাকে মীনাক্ষী বলি তীর্থমৃতযোগে
যূথিকা মালায়।
কত আর লগ্নি টানি জলে ভেসে ভেসে?
একি প্রেম? নাকি রোজ মাহেন্দ্র পতন?
শুল্কের বৈকুণ্ঠ জপি
যা লিখার চিন্ময় লিখুক কেরামান কাতেবিন।
থিবিসের কালো রোদে মহান্ত নায়ক
এসেছি নন্দন স্বামী বঙ্গীয় তৃষ্ণায়
গৃহে ফিরে গৃহহীন। স্মরণ কলঙ্কে
ভোগ দেয়। মহারথি নেই।
ফিরিঙ্গি-রহিত এই ধুলোর আকরে শুধু ঠনঠনে দিন।
আকণ্ঠ সবুজ গিলে রেখেছে রাক্ষস আর পাথুরে বৃষ্টির
হেমলক। নদী কি পথিক ছিল? নদী?
শ্যাওলা…
. রঙ…
. নোঙর…
ধোঁয়ায় সঙ্কীর্ণ–আয়ু নিরালা আকাশ
টুপির কায়িক ছায়া বাবার মাথায়।
ওগো রাম, সীতায় রাবণ ক্ষুধা; বাঁচার অসত্যে
নির্বাসনে লাভ নেই।
দাদার লাঠিতে ঘুণ; মায়ের কাঁকনে চাঁদ
ছাই হয়ে নামে
কার কালিমা লিখেছ কেরামান কাতেবিন
. স্কন্ধের শিলায়?
গুহার বাতাসে ইডিপাস বিদ্ধ শাপে
কোন পথে চামর দোলায়?
কার পাপে আদিম যিশুর মতো শূলবিদ্ধ মাটি
ও পাখি, ও বৃক্ষ,
ও আমার লাটিম ঘুরানো মাঠ,
আমি কি জেগে উঠবো ঘাসে
দিঘির পানিতে জিন? ভূধরে নিতম্ব রেখে
. দেখাবো সাহস
ক্রন্দসী বেহুলা ঘুমে,
সোনার রেকাবে তার এসেছি নোলক
মাছে-ভাতে স্বপ্নমোড়া গুপ্ত পুলসেরাত;
আমাকে দাঁড়াতে হবে।
কেরামান-কাতেবিন, দ্রাবিড় কিতাবে লিখ প্রত্ন-ইতহাস।
অ-হল্য জীবনচরে এইখানে দাঁড়ালাম ধৃষ্ট লাঠিয়াল:
আমার দখল নেবে কে আছে এমন?