নতুন স্পর্শের গল্প
স্পর্শের বাইরের স্পর্শ গুনে-গুনে কাটিয়েছি তিন তিন বছর
স্পর্শের বাইরের স্পর্শগুলোকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে টাইডাই করে
গড়েছি নতুন স্পর্শ, সাজিয়ে গুছিয়ে পরিধান করেছি অঙ্গে।
পাথর স্পর্শগুলোকে ভাস্কর্য করে রেখেছি মসজিদ-মন্দির-গির্জায়
এই তিন তিন বছর পৃথিবী ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টাতে চাইলে
আমি চিবিয়ে চিবিয়ে ছিবড়ে রক্তাক্ত করেছি স্পর্শের বাইরের
স্পর্শকে! ওরা হাত ধরাধরি করে আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে বলেছে,
আর কত? এবার ছেড়ে দাও! তুমিও গড়ো নতুন স্পর্শের
ইতিহাস। হৃদয় ভাঙার শব্দেরা উঁকি দিতে চাইলে কান্নারা
মুচকি হেসে বলেছে—রক্তাক্ত ছিবড়েগুলোকে ভাসিয়ে দাও
করতোয়ার জলে। শুনে আমি হেসেছি, বলেছি—ওগুলো দিয়ে
আমি আমার বৃদ্ধাশ্রমের ঘর সাজাবো। আর তখন তাকে
বানিয়ে বানিয়ে শোনাব নতুন কোনো স্পর্শের গল্প!
কী রহস্য
কীসের কটাক্ষ এত?
পানের বাটায় সাজানো কত রকমের মসলা—খয়ের,
ঝিরকি কাটা কাঁচা-শুকনা সুপারির মধ্যে পৃথিবীর
বুকের সমস্ত লাভারহস্য সযত্নে সাজিয়ে রেখেছ
কী পেয়েছ তাতে? ও লাভা কি তোমার নখের
চুনদাগের রহস্য ভেদ করতে পেরেছে? তাহলে
প্রথম খোপা বাঁধার কৌশলের মতো না দেখা কোকিলের
ডাক, ফুলের বিছানায় জ্যোৎস্নার মায়ায় মায়াবি আলোয়
লুকোচুরি বাসর খেলায় মেতেছিলে কী সুখে?
ব্রতকথা যদি পুকুরে ডালা ভাসানো সুরের মতো হয়,
তোমার চিবানো জর্দার কটু গন্ধের মতো স্পর্শহীন
হয়! তবে এত কিসের কটাক্ষ তোমার?
যদি নীল নহরের ওপারে গিয়ে দেখ কিছু নেই,
সব শূন্য তাহলে?
চিঠি
বিনিময় চুক্তিনামা, স্বর্ণালঙ্কার, সাজসজ্জা সযত্নে রাখা সিন্দুকে।
তুমি মনের পাতায় চব্বিশ ঘণ্টার সেবার লিস্ট সাজাও; আমি
ছুটি কর্মক্ষেত্রে, বাজারে, রান্নাঘরে, বিছানায়—বিছানায় তোমার
বণিতা চাই। বণিতা না হতে পারলে তোমাদের আড্ডায় আমি
খল নায়িকা, ঘুম কাতুরে, ব্যাকডেটেড কাঠখোট্টা বুড়ি…
জানি বলবে, আমার চেয়ে ঢের ভালো তোমার বন্ধুর বউ,
পাশের টেবিলের সহকর্মী। বলবে, তারা কী সুন্দর রান্না করে,
গান গায়, কবিতা পড়ে…বলবে তোমার একটা প্রেমিকা চাই—
যে তোমাকে বুঝবে, ভালোবাসবে, তোমার সেবা করবে,
আত্মীয় স্বজনের খবর নেবে…
বাবুর বাবা, বাবু কী কী খেতে পছন্দ করে তুমি বলতে পারবে?
বলতে পারবে কোন সাবজেক্ট বাবুর পছন্দ, কোনটা অপছন্দ?
ও খুব বেড়াতে যেতে চায় আমাদের সাথে, নিয়ে যাবে? জানি
তোমার খুব অফিসের চাপ, শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না আজকাল।
আমাদের সাথে নিয়ে বেড়ানো, কথা শোনার সময় নেই তোমার!
তবু বলি শোন, বাবুর চশমার পাওয়ার, আমার কোমরের ব্যথা বেড়েছে;
বেড়েছে গাইনোকলজি সমস্যাও। অপারেশনটা আর এড়ানো যাচ্ছে না।
ক্লিনিকের কাগজপত্রে সিগনেচার দেওয়ার জন্য একটু সময় বের করো, প্লিজ!
জানো, বাবু ওর কাজ নিজেই করে, আমার কাজেও সাহায্য করে! আর
কী সুন্দর ছবি আঁকে, কবিতা আবৃত্তি করে!
কত তোলা ভালোবাসার বিনিময়ে কত তোলা ভালোবাসা দিয়েছ
বাবুর বাবা? বলতো কত ঘণ্টা সময়ের বিনিমিয় কত ঘণ্টা?
মাসের শুরুতে সংসারের প্রয়োজনে কিছু টাকা দিলেই কি শতভাগ
বিনিময় হয়?
আচ্ছা, যে মেয়েটার সাথে তোমাকে রেস্টুরেন্টে, ডাক্তারের চেম্বারে,
বাজারে, পার্কে, রিকশাই আবার কখনো কখনো রাস্তায় হাঁটতে দেখা যায়
তার সাথে তোমার কী চুক্তিনামা? না না ঝগড়া করতে চাইছি না!
বলতে পারো নিছক কৌতূহলেই জানতে ইচ্ছে করছে—কী কী
বিনিময় করো তোমরা?