লাকাঁর গণিত
ঘুমে মরে থাকে মরা মাছির শোক।
দেবদূত নেমে এলে প্রাচীন শহরে
লাকাঁর গণিত অবোধ্য হয়—
পিতরের লজ্জিত মুখ রক্তিম ওড়নায় দোলে।
তার হলুদ চোখের তারায় ছলছল করে
বিদগ্ধ জোছনার ক্ষেত—
উন্মুক্ত অন্ধকারে মুগ্ধতা রেখো না
হে আকাশজাত, মুগ্ধ হয়ো না মৃত্যুর আগে—
কনিষ্ঠ আঙুল জন্মান্ধ হলে ঘুণপোকা খায়
অসহ্য বোধের স্বরাজ, আমাকে শুনিয়ে যায়
প্রেমের আত্মলিপি- মিছিলে সহস্র রোদের ঝাঁক
পায়রাগামী। তারা ডানা মেলে, সশব্দ উচ্চারণে-
পৃথিবীর ঘর ছেড়ে পালকের ওমে
লেপ্টে আছে সব নিবিড় জড়সড়ো—
আহত কাকের চোখে ভেজা চাঁদ ও শহরের গান।
মে’র মৃতবৎসা সন্ধ্যায়
দৃশ্যত যখন মরে যাও
ডানার নিচে চাকার দাগ অস্পষ্ট থাকে
তখনো বগলের ঘামে সূর্য ডোবে না
তখনো সমুদ্র শুকিয়ে যেতে অনেক দিন লেগে যায়।
হাড়ক্ষয়ী বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে, রোজ
রোজমেরির সুগন্ধ বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
একদিন, কোনো এক অন্ধ বিড়ালের ঋণ
এড়িয়েছ বলে কফিনের জানালা খুলে রাখা দায়
ভীষণ, ঝাউবনে ভয় নামে।
যখন তুমি সত্যিই মরে যাও কিংবা
দৃশ্যত মরে যাওয়া হয় এককাপ কফির ক্ষেতে
সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে-তখনো তুমি জানো না
বাঘের স্বর থেকেও বর্ণমালা চুরি হয়।
ওদেরও লবণের সংসার হয় রীতিমতো
ব্যাকরণিক নিয়ম মেনে।
আসলে কানের পাশ ঘেঁষে আসা প্রেম
বসন্ত এড়াতে পারে না
ক্যালেন্ডারের বুকে তাই মে’র সন্ধ্যা মৃতবৎসা
অকুলান স্নেহে দেয়াল ভিজে আসে।
কিছু অসংলগ্ন বার্তালাপ
আমরা যারা প্রেমে পড়ি
স্বচ্ছ চোখের ভেতর মৃত্যুর জন্য কাঙ্ক্ষিত
যারা মৎস্যকামের তাড়নে প্রার্থনারত,
তাদের উদ্দেশে কিছু সঙ্গত অসংলগ্ন বার্তালাপ-
এক.
আয়না সামনে রেখে টাই পরতে শুরু করবেন। অতঃপর দেখবেন ওটা টাই নয়। গুটি বসন্তের দাগওয়ালা সোনালু মরাল সাপ। অচঞ্চল জিভ বের করে আপনার গলা চেপে ধরে অকস্মাৎ! চীৎকার করে উঠতে উঠতে বুঝে নেবেন কণ্ঠার হাড়ে লেগে আছে সবুজাভ মৃত্যু, দায় বুঝে পায়রাগামী দৃশ্যে অতি দ্রুত মিলিয়ে যাবেন।
দুই.
সদ্যজাতের ঠোঁটে অস্ফুট শব্দ, কান দিয়ে ছুঁয়ে দেখুন। যে বিষ বয়ে নীলাক্ত হয়েছে অধর তাকে নিরাপদ রাখতে দিনমান তপস্যার প্রয়োজন। যোনিজ কোনো মুখ স্পর্শের ক্ষুধা সামনে এসে দাঁড়ালে, তাকে অপেক্ষা করতে বলবেন। দেখবেন, প্রতীক্ষার অসহনীয় জ্বালায় সহস্র কালের ক্ষুধা একদিন তাকেই খাদ্য করে নিয়েছে।
কেননা, ক্ষুধার কোনো প্রভু নেই।
তিন.
হাঁসের পুচ্ছে আগুন ধরিয়ে দেখা যেতে পারে, পুরাণের অই আগুন লেজে নিয়ে কতোদূর উড়ে যেতে পারে সে…উড়তে উড়তে মরে গেলে ঝলসানো মাংসের সুগন্ধ আপনার নাকে নেবেন। তুমুল আগ্রহে তাকে জিহবার স্বাদগ্রন্থিতে নিতে পারেন, অনুতাপহীন। কিছু অবোধ শাদা পালক বড়জোর এতিম হবে।
চার.
শ্মশানের মশাদের সাথে একরাত্রির বন্ধুত্বে নিজের শয়তানের সাথে পরিচিত হোন। দেখুন, কতটা প্রিয় হয়ে উঠতে পারে সে, একরাতের সঙ্গমে! মনে রাখবেন, কেবল আদিচেতনায় মানুষ ভেদ ভুলে যায়। কাজেই সে অ্যারাবিয়ান জিন না হিন্দুর প্রেত, সে ভাবনায় ব্যাকুল না হয়ে সঙ্গমে মন দিন। এক রাতের সুখের তাগিদে বিভাজন দূরে মরুক!
পাঁচ.
হলুদ বকের চোখে ভয় দেখুন, অনুভব করুন তাকে একবার। সর্পিল দাগ ব্যথিত করে কি না সহ্য করুন, সন্দেহভরা হৃদয়ে পাশ কাটিয়ে যাবেন না কখনো।
ছয়.
রোদক্ষরা দুপুরে জোর করে জাপ্টে ধরবেন নিজের বেগুনী রঙকে। প্রশ্ন করবেন তাকে, কে সে? কোন অধিকারে গর্ভকাল হতে সত্তাকে বয়ে চলেছে সে? প্রয়োজনে খুন করবেন ওকে। যামি গৌতমকে দেখে দেখে পৃথিবীকে আর কোনোদিন ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখতে হবে না।