কাজী রহিম শাহরিয়ারের তিনটি কবিতা
নিষিদ্ধ প্রেম
বৃত্তের ভেতরে থাকে যদিও বা একান্ত স্বজন
তবুও নিষিদ্ধ প্রেম অতি প্রিয় অমৃতের ফল
সম্মুখে তেতুল দেখে যেন কোনো জিভে আসা জল
সেই ফল কাছে পেতে থাকে মন সদা উচাটন
বিবেকের বেড়া ভেঙে গোপনে নানান ছুতা দিয়ে
পেড়ে আনে সেই ফল বিচিত্র কালের কারিগর
বৈধতার প্রশ্ন রেখে নদী তার ভাঙে পাড়া-ঘর
বাক্যের খোয়াড় দিয়ে তুমি তাকে রাখবে ফিরিয়ে?
বিচিত্র প্রাপ্তির পিছে ছুটে চলা নদীর মতন
গন্তব্য বদল করে, ভুলে যায় নিড়ের নিশান
কখনো ভাটার টানে নিকট অতীতে ফিরে চায়
রহস্যের মরু-মাঠে খুঁজে ফেরে মরীচিকা মন
কখনো কাহারবা তালে নিরিবিলি গেয়ে যায় গান
ক্ষণিক সুখের লোভে চিরসুখ অজান্তে হারায়!
সহবাস
পাথরে ফুলের গান শুনবো বলে আমি কি বৃথাই
করেছি কসরত যেন প্রসবের ব্যথাক্রান্ত কুঁড়ি
অতল ঝর্ণায় থেকে জল যদি না-ই পায় নুড়ি
ঝর্ণার কী দোষ বলো? সহবাস তবে অযথাই?
আনিত্য সত্যের সঙ্গে থাকার নিবিড় অঙ্গীকারে
যতই জাবর কাটি, কেটে যায় বাসনা নিভৃতে
ছিঁড়ে যায় তোলা পাল, টান পড়ে চেতনার ভিতে
আজন্মের ফেরারি যে, সোজা পথে ফেরাবে কে তারে?
কপট বিশ্বাসে স্থির—মুখোশ যদিও বিশ্বাসের—
পরেছে আপন মুখে পার হতে সময়ের সিঁড়ি
যদিও মুখোশ তার খুলে যায় অজান্তেই ফের
তবুও আপন মনে পেতে বসে সামাজিক পিঁড়ি
আমিতো ওড়াই পাল বাসনার অথৈ সাগরে—
বারেক ভিড়ায় যদি বিশ্বাসের তরীটা সে ঘরে!
যেখানে হাওয়ার নাম
প্রেমতো নির্জন এক সুদূরের নক্ষত্রের নাম—
এখানে প্রেমের নাম মিশে যায় মেঘেদের চুলে
এখানে প্রেমের ঘর বোধের অস্পষ্ট উপকূলে
এখানে প্রেমের মানে হত্যা খুন বিষ্ঠা-বমি-ঘাম
সোনার অক্ষরে লেখা যদিও অনাদি অভিধানে
স্র্রষ্টা তো ঝর্ণার মতো ভালোবাসা-প্রেমের আধার
সৃষ্টির হৃদয়ে ভরে দিয়েছেন এক ভাগ তার—
এ দিয়েই তোলপাড় করেছেন আদমের প্রাণে!
প্রেমের পত্তন জানি বুকের পাঁজর থেকে তাঁর—
যেখানে হাওয়ার নাম লেখা ছিলো হাঁড়ের কিংশুকে
একাকী জান্নাতে বসে ভেবেছেন প্রসঙ্গ হাওয়ার
দুধের নদীর মতো স্বচ্ছ এক আশা নিয়ে বুকে
জীবনে বসন্ত তার একদিন এনেছে যে প্রেমে—
এখন কোন্ সে ভুলে চিড় তার ধরেছে হেরেমে?
কাজী মোহিনী ইসলামের তিনটি কবিতা
নির্মম দূরত্ব
সময়ের মহাসিন্ধু পার হয়ে
অন্তরে নির্মম দূরত্ব বজায় রেখে
নৈরাশ্যময় কাছাকাছি দু’জন!
স্পৃহাশূন্য পৃথিবীর চতুর্দিকে ভীরুতা তোমার
আমিতো আশার টুনটুনি পাখি আনিত্য চঞ্চল!
তবে কি জীবন বৃত্তান্তহীন?
নদীর বহুমুখী স্রোত সেও
বিচিত্রময়ী আকর্ষণ পার হয়ে সমুদ্রের দিকেই ধাবমান…
আমিতো অনঢ় অপার রহস্যময় মনের নাবিক হতে
সৃষ্টির গোপন সত্ত্বা, ছুঁয়েছি সুমেরু
কি অপূর্ব আশ্চর্য রাত্রির চেতনায়
জাগিয়েছি চির অক্ষয় সপ্তদর্শী মন
বিবেকের জাগরণ সেতো
ভোরের সূর্যোদয়ের মতই মহিমাময়…
সৃষ্টির স্মারক
একটি ধূসর পাহাড়কে সবুজ শোভায় সাজাবো বলে
রোজ পাহাড়টির পায়ের কাছে নিথর অরণ্য হই
. পাহাড়টি হাসে;
পাথর চোখের দৃষ্টিতে এ কোন বৃষ্টি তার?
বিলাসী তৃষ্ণায় পোড়ে চোখ
কি অদ্ভুত শরীরে রক্ত চলাচল
সমস্ত ইন্দ্রিয় জুড়ে সুতীক্ষ্ম বিদ্যুৎ চমকায়
তবু পাহাড়টি হাসে;
নিঃসীম নির্জন ঠোঁটে তার সহস্র বছরের স্তব্ধ বিলাস
অবশেষে সৃষ্টির স্মারক হাতে একটি জীবন
অক্ষমতাগুলো নির্বাক নক্ষত্র!
রাতের চাঁদ
কূলের তৃষ্ণায় নদীর কি আসে যায়
আপন নিয়মে সেতো ধাবমান
বাড়ায় শরীরী মায়া অর্থহীন ঘনিষ্ঠ মুহুর্তগুলো
শূন্যতায় কেবল বিভাজন…
পরকীয়া প্রেমের নিষিদ্ধ সুখে অতন্দ্র রাতের ঠোঁট
আফোটা কুঁড়ির ঠোঁটে শিশির চুম্বন এঁকে
কত লাজে রাঙা পাঁপড়ি ফোটায় ভরসার কোমল পরশ!
অথচ দারুণ বিস্ময় চিহ্নের মতো
বিলাসী তৃষ্ণায় পোড়ে রাতের উপোসী চাঁদ!