অবসাদ সিনড্রোম
শিশির ভেজানো ঘাসে কি নিবিড় স্তব্ধতা
ইটের নিচের অন্ধকারে পিষ্ট ভায়োলেট ফুল
কেন হাওয়ায় সুবাস দেয়নি ভোরের জানালা?
ছাদ ফুঁড়ে চেয়ে থাকা মেঘবিলীন আকাশ
দেহের অন্তর্গত শিরায় শিরায় ক্ষুব্ধ ব্যথার তাণ্ডব
শুস্ক গ্রন্থি, চৌচির ঠোঁটে বিস্বাদ ছত্রাক
থমকে দাঁড়িয়ে ক্ষুধা ক্রুর হাসি হাসে
অবসাদ, ছত্রহীন অবসাদ বজ্রাঘাত হানে
দু’চোখ বেয়ে জীবাণু মহামারী দাহ।
স্নায়ুতে স্নায়ুতে উঁইপোকার খোঁড়াখুড়ি
কণ্ঠনালিতে অবরোধ পিণ্ড, স্ফীত ফুসফুস
হৃদপিণ্ড ছটফট করে অক্সিজেন চাই, বিশুদ্ধ অক্সিজেন চাই
আমি তলিয়ে যাচ্ছি জলগহ্বরে,
ঘূর্ণায়মান আবদ্ধ আয়তনে জড়িয়ে ধরা অক্টোপাস
মস্তিষ্কের কোষে কোষে ঝঞ্জা, আমি অচেতন বধির
অচেনা মানুষ, দুর্বোধ্য চারপাশ, ব্রেইন ফগ
আমি জেগে উঠি স্পর্শে অপার্থিব
পাথর চোখে চোখ রাখি, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের।
ক্ষমা করো
ম্লান রোদের বুকে অভিজাত বাতাসের খেলা
এ বন্ধনহীন গ্রন্থিল বেলা
কী অপরূপ অপরাহ্ন অমত্র্য, দগ্ধপ্রাণের প্রশস্তি।
পারো কি তুমি, হে আকাশ পশ্চিমামেঘ হতে সে সুন্দর ছড়িয়ে দিতে
পত্রহীন বৃক্ষের শাখার শিরায় শিরায়?
সহস্র পাহাড়ি নদীর বয়ে চলা গতিপথে আমি শুনি
মানুষের শোকের শব্দ! আর্তনাদ ভালোবাসার!
নিষ্প্রভ সূর্য লালে জেগে ওঠে ক্লান্তিতে
পলকহীন আতঙ্কিত মানুষের চোখে চোখে
বাতাসে বিষ! বাসস্থানে জীবাণুর বাস
চিরপ্রস্থানে ব্যথিত মানুষের এলিজিসংগীত
অরন্য শুকিয়ে যায় হুতাশে
ক্ষমা করো প্রকৃতি, ক্ষমা করো মানুষের অনাচার
জনপদহীন নগরী কেঁদে কেঁদে চায় সান্নিধ্য তোমার।
ঝিমিয়ে পড়া পৃথিবী আনুক উল্লাস প্রাণসঞ্চারী।
বসন্ত বেজে উঠুক প্রাণে প্রাণে
সুগন্ধি ফুল, বিনুনি, চুলের খোঁপায়। ঢাকঢোল বাঁশিতে
মহুয়ামাধুকী গন্ধভরা শরত, বর্ষার বৃষ্টির ঘ্রাণ।
কাঙ্ক্ষার প্রাচীর
এই নির্লিপ্ত গুণ্ঠন নীল জানে, কী সান্দ্র নিঃসঙ্গতা!
আঙুলের আসঙ্গ স্পর্শের ইশারা;
হৃদয়ের মৃদু কম্পন চলে যাওয়া এক অপরূপ প্রতিশ্রুতি।
ফেরাই কী রূপে! কী মিথ্যে কেঁপে ওঠে, অনুভবের বৈভব!
বাইরে কাঙ্ক্ষার কুয়াশা—ভেতরে জলের বুদ্বুদ,
এইসব ঘোরের ভোরে ছন্নছাড়া বাতাসে কেবল দ্বিধার রঙ
কেউ কেউ এ স্থিতিকালকে সভ্যতার কান্না বলে আখ্যা দেয়
বৃক্ষদের পট পরিবর্তন দুর্দশায় লীন
অদৃশ্য উদ্বেগ প্রাচীন এই নগরীর সড়কপথে
মানুষের মনে অন্তর্দহনের মতো বেজে চলে
হয়তো কেউ শোনে না উপলব্ধির সৈকতে ঢেউয়ের গর্জন
এই এক প্রগাঢ় মুগ্ধতা আমার, প্রলুদ্ধতা জাগরণের।
সূর্যের অতি সামান্য আলোয় চিন্তাগুলো ক্ষীণ হয়ে আসে।
প্রকৃতিসম্মত আমার নিঃশ্বাস বারতা দিয়ে যায়
আকাশ ও আমার মুখোমুখি আসা
আমাদের উত্থানের নীরব প্রাচীর।
সবুজের ধীর প্রস্থান, ঝরা হলুদের বাহুলগ্নকাল
বনলতা সেনের মতো দুই দণ্ডের শান্তি
মর্ম ভেদ করে সবটুকু আমাকে লুফে নিতে উদ্যত অহর্নিশ।
বিধাতার গান
আজন্ম নীরব সন্ধ্যাতারা
কোন বনে ফুটে রও থরথর বাতাসের অঙ্গসঙ্গে?
বোশেখি চোখে বিধাতা নাচে উদ্দাম
দুঃখ, শোক, তিরস্কার,
ভালোবাসা দিয়েছে যারে ঘোর মৌনতা অভিরাম।
তারই নামে কেন রচো বিবসকাল?
অতল জলে যারে ডোবাও ভাসাও
ভুল করে স্মরণে কেন বাঁধো ভুলে যাওয়া সংহরা?
নিদারুণ অবসাদে মোমের মত গলে বেদনার অলঙ্কার।
প্রলুব্ধ
আকাশ পেরিয়ে পায়ে চলার পথ
হলুদ-লাল-ধূসর পতিত পত্র আমার সঙ্গী
অজস্র অক্ষর অলঙ্কার আমার তাবৎ অঙ্গতন্ত্র বোধজুড়ে
সোনালি রোদ-সম্পাত শীতবিকেল, মৃদু গুঞ্জন
পেছনে ফেলে আসা সমুখের নির্বাত
এইসব ঘোরের দিনরাত
কোন সে পথ চলার পথ? এই সংযোগ অসংযোগ?
এইসব প্রাপ্তির ব্যবধান বিধান দিয়েছে কি জাগ্রত মুক্তি?
অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া আবৃত দুইটি পথে মানবীয় সংঘাত
সংশয়প্রশ্ন পায়নি উত্তর কোন পথ দেবে বিরোধ পরিত্রাণ
দ্য রোড নট্ ট্যাকেন, দ্য রোড নট্ ট্যাকেন
অতপর স্বল্প পদচিহ্ন নির্জন পথটিতে কবি খুঁজে নিয়েছিল দ্বন্দ্ব-সমাধান।
প্রদাহ
সবুজ অরণ্যঘেরা সিঁড়ি আবর্তিত ঘর
ইনডোর উদ্ভিদ
তোমাদের কাছে আমি ঋণী
আমাকে দিয়েছ আশ্বাস অকৃত্রিম নিঃশ্বাসের।
তবুও হোঁচট ফুসফুস অবরুদ্ধ চলে
নিস্তব্ধ শূন্য অন্ধকারে পাঁজর চেপে ধরে হৃদপিণ্ডের,
কালনাগের দংশন
ঘর্মাক্ত ক্ষীণ পাহাড়ি ঝর্ণা চপলতা ভুলে
স্তিমিত নিদ্রাহীন চোখে গতিহীনতার আক্ষেপ
আমাকে দূরদ্বীপে নিক্ষেপ করো যদি মেলে বিশুদ্ধ বাতাস,
বুকভরে অন্তঃস্থ সুখ
শয্যায় পড়ে থাক খোলাচুলের বাঁধুনি,
শিরশিরে গ্রীবাবন্ধ, জ্বরক্লিষ্ট রাত্রি
পার্সে তহবিল, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, সেল্ফে পুস্তক।
সুবহে সাদেকের আলো আছড়ে পড়ে
আলোপতঙ্গ বেডশিট জায়নামাজে
কে তুমি আমায় বাঁচিয়ে রাখো প্রেমে, প্রার্থনা-পরোয়ায়
উন্মুক্ত বায়বীয় বাহুতে বাঁধো আমার পরম আশ্রয়
ওফেলিয়া, ও ওফেলিয়া, সিক্ত প্রাণহীন ভাসে হগসমিল্ জোয়ারে।