কোভিড নাইনটিন-৪
শাবান মাসের ভরা পূর্ণিমা শেষ, ভাগ্যরাত্রির চন্দ্রপ্রহর কেটেছে
চৈতালি হাওয়ার ঝাপটা মেখে, তারপরও আরও এক রাত আজ
দ্বিপ্রহরের আকাশ দেখে নিজেকে মনে পড়ে—
সওদাগরি সময় শেষে হারানো আত্মার প্রেতাত্মারা হাঁফ ছাড়ে
চাওয়া পাওয়ার বাইরেও বিস্তর জীবন থাকে, সন্ধান করি—
ধ্রুপদী সত্যের, কোথা থেকে ভেসে আসে অলৌকিক জ্যোতি
চারপাশে যা দেখি মানুষ না, দুপেয়ে জানোয়ার ভরেছে পৃথিবী
পলাশবাড়ির কবিকুঞ্জে দাঁড়িয়ে আমি চন্দ্রহত হয়ে থাকি
ইউরোপ-মার্কিনে কাফন পড়িয়ে প্রিয় শহরে যমরাজ দাঁড়িয়ে-
গাইবান্ধা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, মৃতদের মিছিল হবে!
জিলহজের জোছনায় বুক ভাসাতে পারবে ক’জন, কে জানে?
কোভিন নাইনটিন ভাইরাসের ছোঁয়া নেই হু হু করা বাসন্তী চাঁদে
শুনেছি একটি মাত্র বাঘ আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু লাখ মানুষ মরছে
তবুও- মানুষের চেয়ে হিংস্র পাশবিক জন্তু আর কিছু কী আছে?
কাকা ডাকা জোছনা, গাছের সঙ্গে গাছের মিতালিতে বাসরি বাজে
ঝোপঝাড় কেঁপে ওঠে, দমকা হাওয়া নাকে-চোখে-ফুসফুসে—
তবুও মানুষ নামের পশুরা ঘুমায়, শুধু টিকটিকি জেগে থাকে বুকে।
চন্দ্রাহত হয় না যে, সে মানুষ নয়; আস্ত জানোয়ার, পশু হয়ে গেছে।
হিংস্র জন্তুদের গ্রাস থেকে নরম মৃত্তিকা একদিন নিশ্চই মুক্ত হবে।
কোভিড নাইনটিন-৫
তবু, এবারও ভ্যাবসা গরম ছিল চৈত্রের শেষ দিনটা—
করোনাক্লান্ত ঘরবন্দি সময়গুলোর প্রতিটি সন্ধ্যায় ছিল শিশিরছটা
এবারের চৈত্র অনেকটাই শান্ত, শীতের প্রভাবে বয়ে গেছে ফল্গুহাওয়া
এই ঋতুচক্র প্রজাপতি-মৌমাছি পতঙ্গে-বিহঙ্গের পুষ্পিত বিরহমালা
উত্তর আকাশে নিয়মিত সপ্তর্ষিমণ্ডল, পশ্চিমে জ্বলজ্বলে শুকতারা
বিকালের আকাশনীলায় রাতভর ঝিকিমিকি আলোর মেলা
প্রকৃতির প্রতিশোধে হত্যার শিকার প্রাণগুলো নক্ষত্রে উঁকি দেয়
জানায়- অভিমানের কথা, অভিশাপ দেয় রক্তের পরম্পরা।
হুট করে খসে পড়া ধুমকেতুর কান্নায় ভারী হয় পূবালি হাওয়া—
বৃদ্ধর অবয়ব, নারীর অবয়ব, শিশুর অবয়ব, প্রাণচঞ্চল ক্রীড়াবিদ,
এই গ্রহের সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকহাসানো মানুষটার আর্তনাদ
গুমোট করে তোলে নিঃশ্বাস, নক্ষত্রে সাজানো নকশিকাঁথায়
ঝরে যাওয়া প্রাণের বর্ণিল মালা হয়ে ওঠে মনুষ্যত্বের হাহাকার—
এই বসন্ত মানুষের মুখোশ খুলে দিয়ে গেছে—
মায়ের কবরে মাটি দিতে যায়নি নাড়িছেড়া ছেলে
আইসোলেশনে থাকা প্রিয়মুখের কথা মনে হলে সবাই হাত ধুচ্ছে
এবারের বসন্তে অবলা পৃথিবী নিজেকে বাঁচানোর প্রতিঘাত করেছে
শোকের সুরেলা বিউগেলে ধূসর গ্রহজুড়ে অবিরাম প্রাণকলি ফুটছে।