ও নদী
জীবনের দুয়ার খুলে বেরিয়ে পড়েছি মর্গের জানালা দিয়ে
স্টেশন মাস্টারেরা আত্মকথনের ফাঁকে ব্যবচ্ছেদে ব্যস্ত
জ্যামের ধুলো-ধোঁয়ায় অনন্তকাল টিকে আছে তারা
ভাড়া নাই। পাহারাদাকে নিষ্ক্রিয় করেছি অভিশাপের মন্ত্রে
আজ। আশ্চর্য সন্ধ্যার বর্ণিল অন্ধকার পেরিয়ে
তোমাকে দেখেছি। আমি। জোয়ার ভাটার মাঝখানে
নিস্তব্ধ জলের মতো শান্ত!
কেন এমন হয়? ঘুমন্ত শিশুর পাশে নীরব ঘুঙুরের মতো বসে আছি।
আমারে ভুলি তবু—
তোমার হাসি! আশ্চর্য জাদুকরী
প্রিয় দাঁত ব্যথা। তোমারে বলবো না এ যন্ত্রণা
ব্যথার এ করুণ বিলাপ।
না থাকার বেদনা তো জানি!
আজ যে মরে গেছে, জন্মেছে
কে সে?
আমি তার রুহের ভেতরে ঢুকে পড়েছি—
দূরের শিখা নিভে গেলে
ছাইয়ের স্তূপে
কুকুরের কুণ্ডলীতে শুয়ে থাকি
তোমার উপস্থিতি নিম গাছের মতো
অশোক পাতা
মৃদু দুলছে বাতাস
কী যে বলবো—
চোখের ছায়াপথজুড়ে এ কী মায়াবী হরিণ
গ্রহণ করো হে, এই জরাজীর্ণ গ্রহ
০২.
অবরুদ্ধ কান্নার কারাগারে বেড়ে উঠছে লাউডগা
শেকলের বেড়িতে বাঁধা আর বাঁধ ভাঙার উল্লাস
দীর্ঘ শোকের আয়ুতে ফুটেছে বেদনার অফুরান ফুল
জলের মতো শান্ত তরঙ্গ ছুঁয়ে বয়ে যাচ্ছি জীবন
মৃত মাছের শেষকৃত্যে পৌঁছানোর সে কী বিদীর্ণ ললিতকলা
নন্দনের নাকফুল, ডুবে যেতে যেতে কী বলেছিল নাবিক
এয়ার ট্রাফিক, পাখিরা জানে কানুনের শিথিলতা
শব্দস্ফীতির ফাঁপরে কোন কান শুনতে পায় কিচিরমিচির?
হলুদ ফুলের বুনো ইশারা, ভাষাবিজ্ঞানীর ভণিতার মতো জটিল নয়
তবু শোকের তড়িৎ সিঁড়িতে দিয়েছি পা
নদের উজান গাঁয়, যে কৃষাণি বসে আছে
রক্তজবার ডালে বসেছে চড়ুই
লতারা দোলে হাওয়ার সঙ্গমে
ভাদ্রে, ভদ্রতা খুলে রাখে ডগ! গডের ঘ্যানঘ্যান
অবরোধক শ্বাস, পাশ ফিরে শুয়ে আছে
হাতপাখায় আঁকছে যে সংসার
কে নিয়েছে পাখাটা?
০৩.
ওহে নদী, কেন ওই পাড়ে লুকিয়ে রেখেছ সুখ
যে জানে না সাঁতার
যার নৌকা নেই
হসপিটাল থেকে নদীর দূরত্ব কত?
ওহে সুখ
অসুখের কারবারি
জ্যামের জীবন বড় ক্লান্তিকর
নদীর পাড়ে পৌঁছাতেই ফুরিয়ে যায় দম
কী রক্ষা করতে চেয়ে, হারিয়েছে কী কী
আম্রমুকুলের ঘ্রাণের মতো মৌসুমি আয়ু
( নৌক এপার-ওপার করতে করতে মরে যাবে
কোনো পার তারে করবে না গ্রহণ)
হায় সুখ! কেন ওই পারে থাকো? ও নদী…