গল্পগুলো রোদের
রোদ পোহাতে পোহাতেই আমি আলোর গল্প
শুনেছিলাম, দাদির কাছে। মাথায় হাত বোলাতে
বোলাতে তিনি বলতেন; ওই দেখ সূর্য কত বড়!
দেখ ভোর এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে।
আমি ছায়ার দিকে তাকিয়ে ঠিকই দেখতাম
অতবড় সূর্য হাঁটছে আমাদের পাশাপাশি!
এর অনেক পরে আমি যখন বাঁশি বাজাতে
শিখলাম; তখন দুপুরকে সাথে নিয়ে হেঁটেছি
বহুদিন। কড়া রোদে চিকচিক করা পাতার দিকে
তাকিয়ে খুঁজেছি আমার ভবিষ্যৎ! জানতে চেয়েছি
কী আছে কপালের লিখন! কী আছে হস্তরেখায়!
সবশেষে যখন নদীকে বুকে নিয়ে হাঁটতে শিখলাম,
তখন দেখলাম, মূলত ঢেউগুলোই রোদের প্রকার।
উজান কিংবা ভাটি বলতে আমরা যা বুঝি—
তার প্রকৃত অনুবাদ হচ্ছে মায়াচক্র। যে মায়ার
বাঁধন ছিঁড়ে গেলেই নিজেকে পরিত্যক্ত মনে হয়।
এপিটাফের বিসর্গপত্র
পাতাগুলো নীল। কথা ছিল হলুদ রঙে সাজানো থাকবে
তোমার সমাধি। অথচ যে অনাদি অক্ষরগুলো এখানে
পড়ে আছে, তা জানান দিচ্ছে—তোমাকে দেখতেই বিশ্বের
অপর প্রান্ত থেকে জড়ো হয়েছে হাজারো মানুষ!
না তোমাকে নয়—তোমার সমাধির বিসর্গপত্রে কিছু লিখতে!
অথচ তুমি নিজেই লিখে গিয়েছ তোমার মৃত্যুবিবরণী,
লিখে গিয়েছ যারা মহামারী শেষে বেঁচে থাকবে—তাদের
জীবিকাউৎস! লিখে গিয়েছ, এরপরে কারা শাসন করবে
পৃথিবী—আর কারা শাসিত হবে!
যারা তোমার শিয়রে দাঁড়িয়ে শার্ল বোদলেয়ারের কবিতা
পড়ছে; তারা কোনো দিনই দেখতে চায়নি সেই কবিকে!
জানতে চায়নি তিনি কেন প্রকৃতির কাছে কখনোই
আয়ুভিক্ষা চাইতেন না!
চাকতি নয়, চক্রের মতো কিছু
একটা গোল চাকতি হাতে নিয়েই তুমি বললে,
এটা জগৎ ঘুরে আসা একটুকরো মেঘ!
আমি বললাম—এটা তো বাষ্পের আঁধার!
তুমি বললে—না, উষ্ণতার অন্যনাম এটি!
আমি হাতে নিয়ে দেখলাম ঘূর্ণাবর্তের বিজলি
এসে পড়েছে আমার চোখে-মুখে। রাত জেগে
আছে, মধ্যচাঁদ বুকে নিয়ে। আমরা আরেকটি
গল্প শুনবো বলে একটি চক্রের মাঝে ডুবতে
চাইছি। কোনো তারাই বাধা দিচ্ছে না আর।