এই দেশের সবুজ প্রেম
এই দেশের সবুজ প্রেম—কাদামাটি মন—আলপনা আঁকা রঙধনু ছবি রেখে
সরল মাটির সবুজ আঁচল ফেলে, বৃদ্ধ পিতার অসুস্থ চাহনি পায়ে ঠেলে
ভোরের শিউলি বিছানো উঠোনে পূর্বপুরুষের পায়ের নিখাদ নিশ্বাস ফেলে
বিরানে পুড়িয়ে মায়ের মমতা—যাবো না—যাবো না, কোথাও যাবো না।
এখনো এদেশে মৃত্যুযাত্রী ভূমিপুত্রদের ব্যাকুল পিপাসা থাকে মধুর মা ডাক;
অবারিত সবুজের এই দেশ—এই মাটি ও নদীতে মিশে আছে
ভেসে আছে বাতাসে ঢেউয়ে সবচে সাহসী ভাই—যৌবনা কুসুম বোন;
আমারই ভূখণ্ড কিনেছি যে আমারই বুকের কঠিন পাটাতন ভেঙে।
একতারা সুর—নদীর কিনার—আলপথ দুর্বাঘাস পায়ে পায়ে মেখে
হেঁটে যাই মুগ্ধতায় কান পেতে অলিগলি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল;
আমি এ মাটিতেই থেকে যাবো সঞ্চয়িতা সঞ্চিতা বুকের মরমে জড়িয়ে
মাটির মেঝেতে শীতল পাটিতে শরীর বিছিয়ে সুখনিদ্রা স্বর্গের চেয়েও দামি।
আমি বাঁচি মুক্তিযোদ্ধার গায়ের গন্ধে পবিত্র নিঃশ্বাসে সাহসী তরীতে
আমি বাঁচি বৌদ্ধ খৃষ্টান হিন্দু মুসলমান ভাইয়ে ভাইয়ে বুকে বুক মিশে;
সব রক্ত একই সাথে মিশে থাকি পদ্মা মেঘনা যমুনা একই স্বপ্ন সাম্পানে;
প্রেমের গোলাপ ফোটে মান-অভিমানে বেলা অবেলা জীবনভেলা।
তামাটে শরীর এই মাটিতে বানায় ফসলের গান,
পূর্ণিমায় ডুবি বাউলের গানে—নতুন সকালে বুক পাতি প্রাচীন সাহসে
আপন সত্তায় পলিমাটি উর্বর যৌবনে চাষ করি কবিতার;
‘বউ কথা কও’ ব্যাকুল আকুতি সাদাসিধে সুখীঘর ভালোবাসি বাংলাদেশ।
হেঁটে যাচ্ছি দত্তপাড়ায়
আমি হেঁটে যাচ্ছি দত্তপাড়ায় যেখানে আমার শৈশব পড়ে আছে
যেখানে আমার মনমাতানো কীর্তন নাচ আনন্দবেদনা স্বপ্নতরী;
যেখানে আমার মনমন্দিরে মানুষ সত্য—মানুষেতেই ধর্ম পবিত্র বিশ্বাস
ফিরে পেতে চাই এখনো মমতাময়ী কাকীমার মুঠোভরা সাদাভাত।
শারদে জ্বলছে আগুন—পুড়ছে আমার প্রথম কবিতা প্রেমের স্বরলিপি
পুড়ছে আমার স্বপ্ন রঙধনু—নদীর নহলী স্রোতে ভাসে পোড়া গন্ধ;
আর্তনাদে বুক ভাঙে হৃদয় পুড়ছে দেউল পুড়ছে প্রার্থনা পুড়ছে
হেঁটে যাচ্ছি—পুড়ে যাচ্ছি মনে ও শরীরে—দানবের আগুন উৎসব।
হেঁটে যাচ্ছি দত্তপাড়ায় অনিমা দিদির কুয়োতলার শিউলি সকালে
পথ ধরে চোখ ভরে অপেক্ষা থাকতো তার হেঁটে যাবো এই পথে;
কাছে ডেকে বুক ভরে মেখে দিতো স্বপ্নবুনন স্নেহের সুঘ্রাণ
সব পুড়ে যাচ্ছে—পোড়ানোর মাতাল উৎসবে পোড়ে মানুষের বুক।
শারদে জ্বলছে আগুন—দত্তপাড়ায় দেবতার গান পুড়ে গেছে
ভিটেমাটি সব পোড়ে—আমার গায়ের গন্ধ পোড়ে—আমি পুড়ি;
মানুষের নষ্ট খেলায় মানুষ পোড়ে—থাকে না সেখানে কোনো প্রভু
হেঁটে যাচ্ছি দত্তপাড়ায় কাকিমাকে বুকে জড়িয়ে মা বলে ডাকবো বলে।
একটু ভালোবাসলে কী এমন হয়!
একটু ভালোবাসলে কী এমন হয়!
কী এমন সর্বনাশের আগুন জ্বলে!
এই আষাঢ় কিভাবে কেঁদে কেঁদে ফেরে
দেখেছো কখনো কষ্টের কেমন রঙ!
হিসেবের চারকোণ যে জীবন
মেঘনা যমুনা গড়াই মধুমতি স্রোতময়ী যে জীবন
কবিতার মতো লালটিপ স্বরবৃত্ত যে জীবন
সেখানেও থাকে দুঃখের গহীন—
চিত্তহরিণী পাপড়ির নিচে থাকে অদৃশ্য কষ্টের ভাঁজ
সেই বেদনায় ভালোবেসেছিলো রাধিকাও গোপন শিশিররাত্রি
লাবণ্যময়ী মাদাম বোভারি রোদলকে বেঁধেছিলো
গোপন তাবিজে
বৃক্ষশরীরে জড়িয়ে থাকে শরমহীন সোহাগিনী স্বর্ণলতা
অচিন পাখির মতো তুমি কেনো অধরা দূরের পাখি
একটু ভালোবাসলে কী এমন হয়!
কী এমন সর্বনাশের আগুন জ্বলে!
হিসেবের চারকোণ ছিঁড়ে ফেলো দেবতী প্রেমের
বেনারসি উড়ছে পাগলা হাওয়ায়
নকশি আঁচলে আঁকো নতুন যৌবন
তোমার সৌরভ উজ্জ্বলতা হীরক টুকরো রাশি রাশি।
অদৃশ্য ঝড়ের মতো জেগে থাকে মাতাল মধ্যরাত
শুষ্ক ঠোঁট কাঁপে যেন ঢেউখেলা অসহ্য রোদ্দুর
বর্ষার অবাধ্য নতুন জলের মতো ছুটে আসো দীঘল চুম্বনে
একটু ভালোবাসলে কী এমন হয়!
কী এমন সর্বনাশের আগুন জ্বলে!