উল্টোপুরাণ
(উৎসর্গ: করোনাযুদ্ধে অবতীর্ণ মানবসম্প্রদায়)
হাঁচি
বাবা বলতেন—
যখন হাঁচি আসবে
একেবারে থেমে যাবি
হাঁচিতে শরীর হালকা হয় ঢের
অথচ এখন
হাঁচি এলে নাকি সংশয় জীবনের!
মেলামেশা
প্রথম যখন গ্রাম ছাড়ি
মাথায় হাত রেখে, চোখ মুছতে মুছতে মা বলেছিল—
বাবা, সবার সঙ্গে মিলে-মিশে থাকিস
তাহলে কোনোদিন তোর হবে না কোনো ক্ষতি
এখন জানছি, মেলামেশা মানে
সীমাহীন দুর্গতি।
মুখোশ
ছেলেবেলায় মেলা থেকে একবার
মুখোশ কিনে পরেছিলাম বলে
বাচ্চু কাকা মেরেছিল;
কাকার মেয়েটা তখন জ্বরে জ্বলছে!
এখন মুখোশ না-পরে বেরোলে
উত্তম-মধ্যম চলছে।
হ্যান্ডশেক
ক্যাম্পাসে দ্যাখা হলেই—হ্যান্ডশেক
অলিখিত নিয়ম ছিল তখন
না-হলে আড়ালে
বন্ধুরা বলতো—বেটা অসামাজিক!
এখন হাত এগিয়ে দিলে
মুখের ওপরেই বলে দিচ্ছে—ধিক্ তোরে ধিক্!
ঘরকুনো
আবুল হোসেন ঘরকুনো ছিল।
বিকেলে কিংবা ছুটির দিনেও
বাইরে বের হতো না বলে
বন্ধুমহলে খুব বদনাম ছিল তার
এখন সেই বন্ধুরাই
দিনরাত—ঘরকে করেছে সার।
আদর
বাইরের থেকে এসেই
কাছে নিয়ে আদর না-করলে
শিশুটি হতাশ হতো খুব
বসে থাকতো মুখ গোমড়া করে
এখন ঘরে ফিরলে
সে-ই যাচ্ছে দূরে সরে!
শেষযাত্রা
পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন
এমনকি, যে-সন্তান কখনো অন্ন দেয়নি মা-বাবাকে
নিথর শরীর কাঁধে
সে-ও সঙ্গী হয়েছে শেষ যাত্রায়
এখন সারাজীবন সেবা করা সন্তানেরাও
মরার সময় কাছে যাচ্ছে না—হায়!