এক.
আনখেসেনামুনের সমাধি খোঁজার মতো খুঁজে চলেছি তোমার হৃৎপিণ্ড,
অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে যদি ‘ভ্যালি অব দ্যা মাংকিজ’-এ পাওয়া
যায় আনখেসেনামুনের কঙ্কাল,
বলেছেন প্রত্নতত্ত্ববীদরা।
প্রিয়তমা, বোন, বিমাতার ও পিতামহীর সন্ধানে বুঝি তুতেনখামেনের
প্রেতাত্মা ভর করেছে তাদের কাঁধে!
আনখেসেনামুন, তুমি আসলে কার?
যে হিত্তি রাজপুত্র ছুটে এসেছিল তোমার ডাকে মালা পরাতে,
কেন তার হত্যার সাথে সাথে মুছে যায় তোমার সমস্ত ভবিষ্যৎ?
ইব্রাহীম, কে হও তুমি আমার ?
কেনই বা সম্পর্কহীন তোমায় আবিষ্কারের তাড়নায় হন্যে হয়ে
খুঁড়ে চলেছি নিজেরই পাঁজর?
আনখেসেনামুনের মতো কার বুকে ঘুমিয়ে আছ তুমি?
দুই.
ইব্রাহীম!
তুমি একবার তাকালেই কেমন ভেঙেচুরে যেত বুকের পাঁজর!
তাতে দেওয়া মাখনের মতোই গলে যেতো মন
অথচ কী নির্বিকার হেঁটে যেতে তুমি!
ধনুকের মতো বাঁকিয়ে জোড়া ভ্রূ; তির দৃষ্টি ছুড়ে!
একটি প্রশ্ন আজো খচখচ করে বুকের ভেতর
‘ইব্রাহীম! কী করে এতটা মজবুত হলো তোমার বুক?’
সেম ব্র্যান্ডের হাড় দিয়েই তো গড়া দু’জনার পাঁজর
অথচ তুমি বুক ফুলিয়ে কী দাম্ভিক হেঁটে যেতে!
আজো প্রতি জো’য়েই সেই ভাঙনের ব্যথা টের পাই
শরীরজুড়ে নেমে আসে শীতকাল।
বাদামি রঙ কী ভীষণ অপছন্দ ছিল তোমার!
শুনেছি তোমার বউয়ের নাকি বাদামি চোখ!
সেই চোখে তাকিয়েই নাকি ভেঙেছ পাঁজরের সবক’টি হাড়!
আর তোমার বউ দিব্যি বুক উঁচিয়ে ঘুরে বেড়ায়;
শুধু তুমি নুয়ে পড়েছ ইব্রাহীম
অথচ আমিই নত হতে এসেছিলাম।
তিন.
ইব্রাহীম!
তুমি শিখে নিয়েছে গৃহপালিত জন্মের প্রভুভক্তি
ততদিনে আমিও খুনের মন্ত্র ভুলে সন্ন্যাসিনী
অস্ত্রগুলো জমা রেখেছি হীমাগারে।
এভাবেই আমরা গা থেকে মুছে ফেলি পূর্বজন্মের শোক
অথচ নিভৃতে তরজমা করি উরুর লাল তীলের ঘনত্ব
না গুনেই বলে দিতে পারি সংখ্যায় তারা ছিল সপ্তমী,
আকৃতিতে ছিল লুব্ধক।
প্রভুর চৌকাঠে চোখ বন্ধ করলেই তোমার পাহারায় নেমে আসে চুমুর প্রেতাত্মা
আর আমার ধ্যানে ধুপে মিশে যায় মধ্যাহ্নের তপ্ত নিঃশ্বাস।
তবু আমরা কেউ কাউকে মনে রাখিনি।
চার.
ইব্রাহীম!
আমাদের অনাহারী দিন শেষে
নবান্ন এসেছিল
বকফুলের মতো সাদা সাদা ধোঁয়া তোলা ভাতের সানকী
ঘিরে আমাদের ক্ষুধারা গোল হয়ে বসেছিল!
যেহেতু আমরা জেনেছিলাম যে আমাদের ক্ষুধারা ক্রমবর্ধমান
আর ভাত পরিমিত, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম
যে আমরা কেবল ভাতের ঘ্রাণ নিয়ে নিয়েই ক্ষুধাকে আশ্বস্ত করবো
আর ছোটবেলার রান্নাবাটি খেলার মতো মিছেমিছি ভাত খাবো!
এইভাবে মিছেমিছি খেয়ে ভরপেটে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে
তুমি চলে যেতে ভাত বুনতে,
আর আমি ভাতের সানকী আগলে বসে থাকতাম
যক্ষের ধনের মতো! যেহেতু আমাদের স্বপ্নবোনা নিষিদ্ধ ছিল,
তাই আমরা একটা ভাতের গোলা, টিনের চালার বারান্দা,
শানবাঁধানো পুকুর আর ফসলের ক্ষেত আঁকতে শিখিনি।
তুমি আমার দুচোখজুড়ে বুনে দিতে ভাত আর আমি
ক্যালেন্ডারে নবান্নের দিন গুনতাম।
অথচ বছর শেষে আমারা ঘরে তুলতাম
সেই একসানকী ধোঁয়া তোলা বেলিফুল ভাত!
পাঁচ.
ইব্রাহীম,
তোমার প্রতি আমার এইসব গায়েপড়া ভাব আর
ই-কারের মতো ঝুঁকে থাকা
যেন লামের ওপরে উটের গ্রীবার মতো চার আলিফ মদ্দেমুত্তাসীল,
আলিফকে খাড়া রেখে একা।
যযমকে কাঁধে নিয়ে গুনে যাই গুন্নাহর ক্ষণ
দেখিনি, বায়েই তাশদিদ, ঠোঁটে মোনালিসার হাসি,
ভ্রূতে দ্বিতীয় বন্ধনী,
আমি লুপ্ত উচ্চারণ!
C/O ইব্রাহীম।
প্রকাশক: জলকথা
পরিবেশক: চমন প্রকাশনী।
প্রচ্ছদ: অনূপ সায়ন্ত।
মূল্য: ১৪০ টাকা।