আমি আকাশের নিচেই ছিলাম
আমার ছায়া হাঁটছে আমার আগে আগে।
আমি লাইটের বিপরীতে ছিলাম।
পায়ের সাথে পায়ের দুঃখও ছিল—নির্জন রোডে
গায়ের সাথে গায়ের চাদরও ছিল-অজানা ভয়ে।
আমি আকাশের নিচে ছিলাম।
ওদিকে প্রেমের লোভে হিংসুটে কারবারির—
. চোখ লাল হয়েছে।
পাঁচপোড়নের দোকানে মাংসল শরীরটাকে চিনে নিয়েছে।
প্রেম না আক্রমণ!
আমি হাঁটছিলাম অন্ধকারের গা ছুঁয়ে।
পাশে নৈতিকতার জিকির ছিল—
. প্রেমে যৌনতা থাকতে নেই।
অথচ আজকাল যৌনতা ছাড়া প্রেম থাকে না।
আমি তবুও ডাকছিলাম কাকে যেন নাম ধরে,
গাল দিচ্ছিলাম চৌদ্দপুরুষকেও—
শালা ফাপরবাজ নীতিসঙ্গীত!
আমিও কি কাঁদছিলাম?
কাঁদোকাঁদো চেহারাটা আলোর বিপরীতেই কি ছিল?
নির্জন রোডে, অনেক রাতে।
হ্যাঁ বা না!
আমি যেভাবেই হোক আকাশের নিচেই ছিলাম।
আরেকটি এভিনিউ: জন্মের সমান বেদনা নিয়ে হেঁটেই চলেছে বোকা প্রেমিক
চব্বিশ মিনিট আগে ঘুমিয়ে গেছে সে।
এই রাত্রির হাহাকার কোলে নিয়ে বটগাছের মতো
দাঁড়িয়ে আছে একজন প্রেমিক।
ডানদিকে অত্যন্ত চিকন গলি, পা ফেলা যায় না
নাগরিক লাইট জ্বলছে খেটে খাওয়া জীবনের মতো;
ভাঙা কাঁচে চেহারা ভেসে উঠে কার।
প্রেমিক হেঁটে গেছে এই প্রাগৈতিহাসিক পথে।
ওপারে নিবিড় ছায়াঘন মাটিতে
রাজপথ এলিয়ে দিয়েছে স্বপ্ন
বিবসনা হয়ে দুলে উঠছে দৌলতদিয়ার হাহাকার
প্রসাধনী গায়ে প্রেমিকের মতোই বটগাছ এখন,
এই নিঃসন্তান শহরের লজ্জিত দালান।
আয় আয় অনার্য প্রেমিক, এই গলিতে চব্বিশতম ঘুমে নেমে পড়ি।
বটগাছ শিকড় ছেঁড়ে হাঁটতে থাকুক আরও দক্ষিণে, তাতে কী!
ভোঁ-ভোঁ করে বেদনা তুলে ভেসে যাক বুকের পাটাতন, তাতে কী!
শহরের একেবারে অবহেলিত প্রান্ত ঘিরে
অন্ধকারে ইন্ধন উঠুক সাম্যবাদী যৌনরোগের, তাতে কী!
আয় আয় বেদনা বুকে হেঁটে যাই আরেকটি এভিনিউ।
অনেক প্রেমিক হেঁটেছিল একই পথে।
অনেকে ডুব দিয়েছিল এইভাবে, এই রাজপথের চৌমাথায়।
নাগরিক দালান আরও ওপরে উঠেছে শুধু
কেউ দেখেনি হাহাকার বুকে এক প্রেমিক হেঁটে চলেছে অবিরাম
এই পুরানা পল্টন লেনে, নাগরিক লাইটের নিচে।
না! চব্বিশ শ বছরেও ঘুম ভাঙে না তার।
সে শুধু রঙধনু এঁকে আকাশ দেখিয়েছে উৎকট চিকন গলির ওপারে
দু’চারটে লাইটহাউজ পড়েছে এদিক-সেদিক
গভীর রাতে আর্তচিৎকারে দীর্ঘশ্বাস উঠেছে ভেজা শহরে,
তারপরও জন্মের সমান বেদনা নিয়ে হেঁটেই চলেছে বোকা প্রেমিক।
আমি এবং ক্লান্ত বাসগুলো
এই বাসস্টপেই বসে আছি অনেক বছর।
বাতাস বয়ে গেছে সিরসির করে
পথচারীও ছিল আমারই মতো কাতর
আমি এবং ক্লান্ত বাসগুলো—
নির্মোক রাজপথে লজ্জা ঢাকিনি কোনোদিন।
আমিতো আলোর কিনারে চোখ মেলে
অন্ধ হয়েছি অনেক আগেই
অনেক আগেই দেয়াল ধরে বাড়িয়ে তুলেছি
পিঁপড়ার ঢিবি
তারপর পূর্বপুরুষের লেজ ধরে ছুটে চলেছি অজানায়।
আমারই মতো এই উদ্ভট শহরে
তিনবেলা ভবঘুরে ছুটে গেছে বাস, ভ্রাম্যমাণ স্বপ্ন
কিংবা ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপের মতো—
নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে বেকার
ফুটপাত আর যাত্রী ছাউনি।
আমারই মতো বাসস্ট্যান্ডের পাশে
সুতীব্র প্রয়োজনে জেগে আছে কিছু চোখ।
আমি জেগে আছি মধ্যরাতের উল্টানো শহরে
সাদা আলোর ভৎর্সনা বুকে পেতে নিয়ে
কাল সকালে নাম লেখাব উন্নত সভ্যতার!
আরও কিছু চোখ মিটিমিটি খেলা করছে রক্তসমেত
আরও কিছু পথচারী বসে আছে বাসস্টপে
আরও কিছু কুকুরের দল রক্তের নেশায় উন্মাদ হয়েছে—
ডাস্টবিনের আড়ালে ক’দিন পরেই জেগে উঠবে তাদের সাক্ষ্য।
আমি বাস্টপেই বসে আছি সাতচল্লিশ বছর ধরে
রঙচঙে বাসগুলো কত আহ্লাদে খুইয়েছে তার সুদিন
কেমন সিরসিরে বাতাসে খনন করেছে গর্ত
এই সাজানো রাজপথের বুকের ওপর;
তবু এই রাজপথই জানে
তিলতিলে মৃত্যুর গুদামে চেতনা এক কামসাধনার নাম।