মেধাবিস্মৃত শুয়েছিল নগর কবরে
পথের পোশাক দেখে বুঝে গেছি এ প্রতিভা মাথা তোলে
. নগর বয়নে
সন্তপ্ত গ্রামের চিকীর্যা ছেড়ে উড়ে আসে চক্রবেঁধা সাপ
পৌরাণিক ফণা তোলা নদী, তার বহুবর্ণা পেটের খোঁড়লে
যেভাবে মূরতি ধরে, যেভাবে কৃষ্ণআদল তুলে ধরে
. কুমিরের ছানা
বহুবার গুরুগৃহে যাওয়া হলো, বহুবার পুড়ল এক বৈষয়িক বন
এখন মুখস্ত তার আলোজ্বলা, ফর্সা পা, নগরের নিয়ন পিরিতি
ফুল্ল মথুরা আর ফুল্ল বৃন্দাবনে বসনের গেরুয়া নিয়তি
ছাপচিত্র ছায়াপথে উল্কা আর নগরের বিভ্রান্ত মোড়কে
জাতিস্মর যেভাবে তার এ জন্মকে করে তোলে
. ব্যর্থ আর পশ্চাতের ঘড়া
জন্মমোড়ক খুলে খুলে বহুবার যাওয়া হল গুরুর পশ্চাতে
সখী বৃক্ষদের বিপুলা হাস্যপ্রবণ বিহ্বলিত নাভি ছেড়ে
মেধাবিস্মৃত, কিছুকাল শুয়ে ছিল উদ্বাস্তু নগর কবরে!
আমাদের উদ্ভট পাঠশালে
আমাদের উদ্ভট পাঠশালে তোমরা কে কে এলে নতুন?
বসেছ ভুল এলোমেলো বেঞ্চিতে রোল নাম্বারহীন,
তোমাদের নেই বুঝি ক্রমিক পতন?
এখানে সরল চালে তোলা হয় মৎস্য জটিল
একটি নধর মাছ বসে আছে তৃতীয় সারিতে
শিকারির তপস্যা ঘুম, বেড়াল গোঁফের নিচে
আদর্শস্থানীয় হাসি, সে বিলায় প্রবল কৌতুক
আমাদের বর্ণশেখা, বহুবর্ণশেখা উতরোল পাঠশালে।
আমাদের উদ্ভূত পৃথিবীতে তোমরা কে কে এলে দুধশিশু?
ভুল দুগ্ধউৎসবের পাশে পড়ে থেকে অনাহারী রয়ে গেছ,
তোমাদের নেই বুঝি মাতৃতামাশা?
এখানে সুঢৌল স্তন নিয়ে সরে গেছে যুবতী মায়েরা
রূপচর্চার বাহারী খোঁপায়, পাখিপ্রাণ পেয়ে গেছ
তাই আজো বেঁচে আছ আমাদের পুষ্টিহীন বাড়িঘরে
ধূলির পুরীষ আর বায়ুপিঠা ভাগাভাগি করে খেয়ে।
বিভ্রান্ত বালকও ঘুরেছে
দু’জন বৌদ্ধনারী ভোরবেলা মিহিতন্তু রোদের বাকলে
সুঠাম জড়িয়ে নিয়ে আরো তন্তু হাওয়ার শরীরে
চিকন প্রখরাবতী কার্ভ নিয়ে সোমত্ব ঘুরেছে
অনিদ্র পোশাকের ভ্রমে লালচক্ষু কোমলাভ জ্বেলে—
ভেতরে প্লুটোর আলো, অবশিষ্ট ঝুড়িতে রেখেছে
ব্যগ্র বাড়িয়ে দেওয়া শিষ্ট গোলকে, র্যাডিয়াল
ঘড়ির দোলন, এরা কি প্রবর্তনা জুড়ে দেয়
বহুদরী কস্তুরীর মতো সুগন্ধে ভরপুর।
প্যারাবোলা, ঐসব মৃতগন্ধী মগজ সারস
একবার উড়ে গেলে সহসা ফেরে না, বরঞ্চ দূরত্ব
আত্মায় বেঁধে পরাগের অতিথি পাখিরা
ঠোঁটে ঠোঁটে, এদের বাঁকানো ভঙ্গির নিচে পরাহত।
উৎসুক বালকও বিভোর, বুদ্ধের ধ্যানমৌন
প্রস্তরের কাছে ওদের প্রার্থনার ভাষা অস্ফুট শুনেছে
সেই থেকে পিছু, মুগ্ধতন্তু সেই থেকে ছোটে
অবাক নদীর দেহ নারীদের জ্যামিতিক ছকে।
মনে হবে প্রলোভিত, মনে হবে ওদের বাহন
আর যে অবাক তেজ তার দীপ্তি জেনে
প্যাগোডার খিলানের নিচে পিঠেপিঠি দুই বোন,
সহসা ঘুরে বলে, ‘কেন এত পিছু পিছু ঘোর’?
অনন্ত ভিখিরি হাত পাতো
এই বুনোলতা সাপ, এই জলে ভাসা হাঁস, হাঁসের প্রবাল
এই আঁশপাখা গ্রাম, এই ছিন্নহাত মাঠ, মাঠের উদোম
বলে, হাত পাতো, অনাবশ্যক করে রাখে ভিখিরি পালক।
স্বল্পবাসা, তবু ঋণ রেখে যায় দিবসের উপচানো আলো
অন্য কোন পৃথিবীর চেয়ে তবু ভালো?
বহিঃস্থ অক্সিজেন টেনে ভরে তোল বুকের গোলক
গ্রিলের বাইরে এসে, কাল খুব হাইহিলে ঘুরে।
প্রমত্ত দেখেছি শিখা, শিখার চূড়াস্পর্শ ঝাঁপ
মন্দিরে কৈবর্ত কাঁপে, মাঠময় প্রজাদের ঘড়া
ঢেলে দিল শস্যের কোজাগরি চাঁদপাখা
দ্রাবিড় উৎসব ঢলে, প্রান্তরের সচকিত কানে।
ঐ মোহাবিষ্ট পথ, ঐ ঋষিপাহাড়ের সারি, সারিবদ্ধ জপতপ
ঐ কীর্তনীয়া নদী, ঐ আলো-এলোমেলো মুখ, মুখের জরিপ
বলে, লিখে রাখো, অপলক উপচানো ভিখিরি বালক।