জলের ডানায় পাখির পালক
তুমি এত জানলে কী করে! হা হা হা…
পাতার ভিড়ে কেমনে দেখলে পেয়ারার হাসি
টুনটুনি লাফিয়ে-লাফিয়ে যায় এডাল থেকে ওডালে,
টেবিলে সাজানো মাছ মাংস ডিম ডাল
এখনো আমাদের হাতে লেগে আছে, তবে তোমার
চোখে বারবার খেলা করে নতুন-নতুন মাংসের বল্লম;
এমনই পশু চারপাশে শুধু মাংস খেতে চায়
কচি হরিণীর, খুব বাহবা ছড়ায় আশেপাশে
মাংসের গন্ধে, বুদবুদ ফেনায় ভরছে বুকপকেট;
স্তনের উষ্ণতায় বুনছে কুয়াশার জামা—
জমছে নিঃশ্বাস, বাড়ছে কাশি, কমছে প্রেম ও দৃষ্টি
বগলের নিচে উড়ছে মৌমাছি-নাকে তরল ঘ্রাণ;
কোনো একদিন যদি কামদেবী রতিক্লান্ত হয়ে যাও,
তবে কিন্তু ডোম হয়ে যাবে—এমন ভাবি না আমি
পিতলের গুহায়; সারি-সারি দাঁড়াবে বৃষ্টিস্নাত পায়রা
একদিন জলের ডানায় ভাসাবে তোমার পাখির পালক।
একটি উকুন ও একটি রাতের গল্প
একটি উকুন ও একটি রাতের গল্প এখানেই শুরু…
একটি উকুন ধীরে-ধীরে হেঁটে-হেঁটে স্পর্শ করতে চায়
তোমার সৈকতের লবণাক্ত বুক, দরোজার ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ শুনে
ফিরে আসে বোবকাটা চুলের বাগানে-জলের গন্ধ আফিমের মতো;
নাশপাতির রসের ভিতর ঘুরছে তামাম পৃথিবী লাটিমের ন্যায়
আমরা ধীরে-ধীরে ভুলে যাচ্ছি গাছের সৌন্দর্য আর প্রেমের মহিমা;
একটি রাত প্যাঁচিয়ে আছে কুয়াশার ইথারে আর মেঘের সরোজ তানপুরায়,
নিয়নবাতির অস্পষ্ট আলোয় উকুনটি ঘুরছে
সৈকতের মায়াহীন বালুকারাশিতে ভীষণ একলা
অর্থহীন ঢেউগুলোর ভেতর একটি উকুন চিৎকার দিয়ে বলে
ঝাউবনে লুকিয়ে আছে প্রেমিকার ধর্ষক, আমার চিরদিনের দুঃখ;
একটি রাত হামাগুঁড়ি দিয়ে যাচ্ছে কবর আর শ্মশানের দিকে
একটি উকুন আমার মতো বসে আছে দীর্ঘ নদীর বাঁকে—
কবিতার খাতায় পড়ে আছে বে-হিসেবী রাতের ক্রন্দন-ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র বেদনা;
আর দাসীর করতলে হাজার-হাজার নক্ষত্রের রাত বিলীন হয়ে যায়,
একটি উকুন আর একটি রাতের গল্প বলতে গিয়ে ভুলে গেছি নিজের গন্তব্য…
আব্বা চলন্ত রেলগাড়ি
আব্বা বাড়ি নেই
ডাকতে-ডাকতে কণ্ঠ হলো
স্তব্ধতার কফিনঘর আর
ঐদিকে কুকুরছানা আর্তনাদ করছে
টিনের চাল বেয়ে পড়ছে কান্নার শিশির
আব্বা ঘরে নেই
ডাকতে-ডাকতে কণ্ঠস্বর হলো
নীল প্রজাপতি, গহীনে ভাসে জলের ঢেউ
আর সারা ঘরজুড়ে শূন্যতার মাতম
ঘরের শেষ কোণে মন খারাপের হাড়ি
আব্বা কফিনে নেই কবরেও নেই
আব্বা তাহলে কোথায়—
আব্বা কি বাতাসের পালক!
আব্বা আমার জীবনের ভরাট নদী
আব্বা আমার অবিরাম চলন্ত রেলগাড়ি।
ঘড়ির ভেতর আয়না ও মুখ
ঘড়ির ভেতর আয়না-আয়নার ভেতর মুখ
ঘুরছে গাড়ির চাকার মতো, সকালের মিষ্টিমুখ
আমার পূর্বপুরুষের শান্ত আঙিনা যেখানে বেড়ে উঠেছে পৃথিবী;
ঘড়িটি ঘুরতে-ঘুরতে গান গাইছে
হৃদয়ের ভেতর আগুন জ্বলছে
আগুনের ভেতর নড়ছে গাছের ছায়া
আগুনের জলে উড়ছে শিশুপাখি, ছায়ার জলে ঢেউ;
মখমলের চাদরে তোমার চোখের ওম
গোড়ালিতে নূপুরের কান্না-বাতাসে রুপালি শঙ্খধ্বনি,
অনিশ্চিত বালির ঢিবির মতো জীবনের গান
বেহালাবাদকের আঙুলের চূড়ায় শঙ্খনীল পাহাড় ঘুমায়;
ঘড়ির ভেতর আয়না ও মুখ,
ভোরের কেকে ঝুলে আছে ক্ষুধার ঝালর;
যেমন তোমার-আমার ঠোঁটের ফাঁকে হাঙ্গরের নাচ…
ঘোড়ার খুরের নিচে অট্টহাসি
ঘোড়ার খুরের নিচে ঘুমিয়ে আছে
পরাজিত সময়, ঢাল ও তলোয়ারগুলো
ফেরিওয়ালার আস্তিনে নগ্নতার প্রাতঃরাশ
সন্ন্যাসিনীর বগলে জমা আছে অক্ষরের মানচিত্র;
বাঁশির সুর ফেরারি বাতাসের ভেতর
সন্ত্রস্ত পাখির উড়াল, শিশুরা কলের গুদামে
হাওয়াই মিঠাই-প্রভুরা সুইচগেটে অবাধ্য স্রোত
শিষ্যরা সরীসৃপের মতো আশ্চর্যজনকভাবে লেজহীন;
সবগুলো তালা চাবিবিহীন মরচেধরা-পাথরের ওম
বন্দুকের ভেতর ঘুমায় কালের নির্লজ্জ দাসী,
কার্তুজগুলো ভিখারিনীর পুষ্টিহীন শিশুর কাতর চোখ
আর পশ্চিমপাড়া প্রতিদিন নির্মাণ করছে অস্ত্রমানব;
ঘোড়াগুলো এই ক্লান্ত সময়ে ইতিহাসের অট্টহাসি
ঢাল-তলোয়ারগুলো, বাদ্যযন্ত্ররা চাপা ঘাসের উল্লাস
আমার মোহিনী বাঁশি চুরি হয়ে গেছে আমারই ঘাটে;
এখন বিষাক্ত সাপের জিহ্বায় বাসা বাঁধে যুগল প্রেমিক।