চন্দ্রাভিযানের আগে
রাতের চন্দ্রাভিযানে আত্মশপথের পথ উন্মুক্ত
হবে, ভেবে শহরতলির রাস্তা
পায়ের দাগ রাখার আমন্ত্রণ জানায়
রাস্তার দুপাশে সারি সারি দরজায় নরক রয়েছে
জেনে গেলে ঘুমপাড়ানি মাসির আহ্বান
উপেক্ষার হেতু খুঁজতে গলধঘর্ম হতে হয় না
মাসিকে দীর্ঘ নদী পাড়ির কিচ্ছা শুনালে
তার স্মৃতিতে ভিড় করে নির্বাসনের কাল
স্বেচ্ছায় এ কর্মে নিয়োজিত নয় জেনে
আমরাও বিগলিত হই, বিনাশী সময়ের
অভিশাপ আমাদের ছুঁবে না প্রতিজ্ঞায়
ঘড়ির আবর্তন থামিয়ে পড়ে নেই নদীকথা
একটা চালাঘরের লাগোয়া বারান্দার
এককোণে পিঁড়ি পেতে উনুন চড়ানোর খোয়াব
উঁকি দিলে মন যায় ফল বিক্রেতার বাড়ি
রাতের চন্দ্রাভিযান শেষে শহুরে মানুষেরা
নিজস্ব অলিন্দে ফিরতে শুরু করলে
দূরের লাউডস্পিকারে বাজতে থাকে…
হাওয়াম্যা উড়তে যায়ে…
পিপাসীর পাখি ভোজ
মধ্য রাতের মাঠ
অদূর দূরত্ব অতিক্রম করতে গিয়ে
আমি এবং আমার বন্ধু
পাখির বাসায় দেখি শাবকের তড়পানি
সিল্ক জমিনে ঝরে পড়া মাতৃ পাখির
প্রাণহীন দেহ আমাদের ভাবনায় পাঠালে
নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জীবনে মানবতা সংরক্ষিত
আছে কি না ভেবে তড়পাই
পাখি কথায় হয়তো ছাড়িয়ে যাওয়া যায়
কিংবা বৃক্ষ কথায় পরিচিত হওয়া যায়
প্রবীণ বটবৃক্ষের
শৈশবের সেতুর রেলিঙ আমাদেরও পারাপারে
হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল
বিগলিত মনে ইতিউতি আলোর খোঁজ করলে
মধ্যরাতের প্রখর বাস্তবতা কিংবা নিকষ অন্ধকার জানায়
ভুতের মাঠ পাড়ি দিতে হবে সত্ত্বর
মাঠের ওপারের অপেক্ষারত নিজস্ব শাবক
পাখি প্রেমে বিভোর হওয়া আমাদের জন্য নয়
পাড়ি দিতে হবে বাস্তব মাঠ
কঠিন পাহাড়ে পিপাসী আরোহী
নিজস্ব তৃষ্ণা নিবারণকেই যুক্তিযুক্ত ভাবে
যদিও জানি অন্যত্বের নামই মানবতা
সে পথ মাড়ানো কঠিন ভেবে
মাতৃপাখি নিয়ে হাঁটা দিলাম
ভুরি-ভোজের সম্ভাবনায় আন্দোলিত মন
পাখি শাবকের ভাবনায় ভারাক্রান্ত মনে
গ্লানি উঁকি দিলে ভাবি মনুষ্য জন্ম বড়ই বেদনার
পাখিজন্মে তার কোন গত্যন্তর হয় কি না
ভুরি-ভোজ অন্তে তার কি সুরাহা হবে…?
প্রান্তের আকাশ
পৃথিবীর প্রান্তে একজন মানুষ জন্মালে
আমি জিজ্ঞাসিত হই, ইচ্ছুক উত্তরে
আমার আত্মা মানব জনমের দৃঢ়তায়
মোহনীয়তায়, কমনীয়তায় আপ্লুত হলে
প্রান্তের আকাশ দেখায় উজ্জ্বল তারা ।
কপর্দকশূন্য অস্তিত্বের অনাদি আত্মা
আবশ্যিক কারণে ভগ্ন মনোরথে
ধাবিত হলে তারার উজ্জ্বলতা
দিক ভ্রষ্ট নাবিকের
কম্পাসের মত আস্থায় ফিরে আসে।
আমি ভাবি- একদিন সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে
পরে নিতে হবে আগুনের মুকুট
বিকেলের রোদে বাড়ি ফিরে
পুনরায় দাঁড়াতে হবে শপথের মাঠে।
আমার পৌরুষ পিতা মানুষের মাঠে
তর্জনী হেলিয়ে ছিলেন
সহস্র কোটি মুষ্টি নিয়েছিল তার পিছু
তাঁর শিক্ষায়, পথ নির্দেশনায়
মানুষ শিখে গেছে সূর্য করায়ত্তের বিদ্যা
পৌরুষ পিতার পদতলে
গড়াগড়ি খেয়েছে সময়
তাঁর তর্জনীর বিভায় পুড়েছে
কালের অসংখ্য রাখাল।
তাঁর উচ্চতায় হিমালয় খাটো হলে
অবাক লাগে না, নিজস্ব জীবন মন্থনে
পাওয়া অমৃত পান করে
পিতা পেরিয়েছেন অমরত্বের সকল স্তর
জগতের যাবতীয় অর্জন তাঁর তেজের কাছে তুচ্ছ।
আমার পৌরুষ পিতা আকাশের প্রান্তে
হয়ে আছেন ঝলমলে আকাশ
ছেয়ে আছেন বাংলাদেশ- বাঙ্গালীর
অস্তিত্বে বিলীন হওয়া অন্তরীক্ষ ।