চালতে গাছের ফুল
এই এখানে, হাতের ডানে
পুরনো আমগাছের ঠিক পেছনে একটা বেতের ঝোঁপ ছিল
হাতের বাঁয়ে ছোট্ট একটা বাঁশের ঝাড়
আম গাছের গোড়ায় বুনো ফুল আর ঔষধি গাছের ঝোপ।
ওই আমগাছ, বেতঝোঁপ আর বুনোফুলে ভরা ছোট বনটার এক কোণে
চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতো অহঙ্কারী এক চালতে গাছ।
সেই গাছে ফুটতো অপরূপ সুন্দরী ফুল।
দূর থেকে দেখি ঝোপঝাড়ের মধ্যে সাদা সাদা কী যেন দেখা যায়।
সাপ আর কাটার ভয়ে বেতঝোঁপ পেরিয়ে সাহস হয় না
অপূর্ব সুন্দর সেই ফুলের কাছে যাওয়ার।
কেউ কেউ কীভাবে যেন বুকের মধ্যে বু্দ্বুদ করা কথার ধ্বনি শুনতে পায়।
একদিন শুনি, মোক্তারদের ছোট ছেলেটা মরে গেছে।
সাপের বিষে নীল।
শীতল হাতে কয়েকটা সুন্দরী চালতে গাছের ফুল।
মখমলের মতো সাদা পাপড়ির মধ্যে হলুদ রঙা কেশর
মধ্যেখানেই আরও একটা সাদা রঙের ফুল।
ফুলের মধ্যে ফুল, অপরূপা চালতে গাছের ফুল।
আঙুল মানুষ
ছোটবেলায় আঙুল মানুষের গল্প শুনতাম।
রূপকথা।
মনে মনে ভাবতাম, এমন একটা আঙুল মানুষ থাকতো আমার।
মানুষের যেমন পোষা বেড়াল থাকে।
একদিন অন্ধকার ঘরে একা একা পড়ছি,
হুট করে লোডশেডিং।
আতঙ্কে বন্ধ করে ফেলি চোখ।
বেশ কিছুক্ষণ পরে চোখ খুলতেই চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
আমি এখন কী করবো?
ভাবছি, অন্ধকার তো এখন আমাকে খেয়েই ফেলবে!
আমার কী এখন অজ্ঞান হওয়া উচিত? নাকি মোমবাতি জ্বালানো?
কিন্তু, একটু নড়তেই যে চারদিক থেকে অনেকগুলো হাত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে।
যদি গলা টিপে ধরে?
আমি কী মরে যাবো?
ভয়ে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলি দশ বছরের আমি।
কোন হাত কেন এগিয়ে আসে না, দেখতে চোখ খুলি।
অবাক হয়ে শুনি,
কে যেন বলে, ‘ভয় নেই বন্ধু। আমি আছি। আসো আমরা গল্প করি।’
অবাক হয়ে দেখি—আমার সামনে বইয়ের ওপর ছোট্ট একটা আঙুল মানুষ দাঁড়িয়ে।
ঠিক আমার কড়ে আঙুলের সমান লম্বা।
আনন্দে চিৎকার দিলাম, ‘আঙুল মানুষ!’
সে তার বিন্দুর মতো ঠোঁটে কমার মতো আঙুল চেপে বললো, ‘হুসসস।’
সেই থেকে আমরা বন্ধু।
ভয় পেলে, কী দুঃখ, হাতের মুঠি খুলি
ঝলমলে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমার আঙুল সমান বন্ধু।
আইল্যান্ডের মধ্যে একটা কবর শুয়ে আছে
চুপ করে বসে থাকি সকালের ঘাটে।
দুই সিঁড়ি নামলেই রূপালি জলের স্রোত।
ঠিক যেখানে স্রোত মিশেছে শ্যাওলা ধোয়া সিঁড়ির বাঁকে,
একটা ঝকঝকে রূপার নূপুর চেয়ে আছে আমার দিকে।
আমি কিছুক্ষণ নদীর জলে ছায়া পড়া চাঁদের দিকে তাকাই,
আবার চোখ ফিরে যায় চকমকে গয়নাটার দিকে।
একবার ভাবি, নেই না তুলে!
কী আর হবে তাতে!
হঠাৎ করে কোত্থেকে যেন একটা কোকিল ডেকে উঠলো, কুহু কুহু কুহু…
বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে ভাবি, এই শহরে কোকিল এলো কোত্থেকে!
চোখ পড়ে যায় আইল্যান্ডে শুয়ে থাকা শান বাঁধানো কবরটার দিকে
এই রাজপথের মধ্যিখানে কবর আবার কার!
বেশ পুরনো, রাস্তার ধুলো জমেছে গায়।
হুট করে আইল্যান্ডের কড়ই গাছের ফাঁকে আবার ডেকে ওঠে কোকিলটা।
আমি চোখ ঘুরিয়ে কোকিল খুঁজি…
আরে, বাস দেখি ফাঁকা রাস্তায় কখন জানি চলে এসেছে কাকরাইলের মোড়ে।
রামপুরার কোকিলের গলার কত জোর! ভাবতে ভাবতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি।
ঘন শ্রাবণে এই শহরে কোকিল ডাকে।
আর আমি দেখি শ্যাওলা ধরা ঘাঁটের সিঁড়িতে,
তখনো একটা রূপার নুপুর চেয়ে আছে চুপচাপ!