মুক্ত
পাখি বলতেই মুক্ত, স্বাধীন, ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যাবে,
উড়ে যাবে ঘুটঘুটে অন্ধকার ছেড়ে। এ নিয়ম খাটে না,
হোঁচট খাবে, যে পাখি উড়তে জানে না। কোনো
কায়দাকানুনই তাকে টানে না সবুজ বনানীতে।
সব স্মৃতি অস্বীকার করে, নিঃশ্বাস আটকে যার জন্ম খাঁচায়;
মরা পাতা আর দাউদাউ পলাশের আগুন, সবই তো
স্বেচ্ছায় ছেড়ে আসা অধিকারহীন অশ্রুকণা।
তুমি কি অভিশাপ দাও? নির্দেশ করো প্রেমের গতি?
পাল্টে যাওনি? বদলাওনি কিছুই?
মানুষ মাত্রেই মিথ্যেবাদী; যাদুবিদ্যায় পারদর্শী।
তাই খাঁচা আর মুক্তাকাশ যে অশ্লীল পার্থক্যে
গলি-অলিতে বিভেদের দেয়ালে আঁকে স্লোগান,
তাকে পরিত্যাগ করা এত সহজ? যেকোনো রাতের
শেষ প্রহরে প্রবল তৃষ্ণায় শুকিয়ে আসা কণ্ঠনালী
কোন জলের চিহ্নে ভেজাবে বলো?
কিছুই ফেলনা নয়
স্মৃতির মন্দিরে কিছুই ফেলনা নয়
যুদ্ধদিনে জমানো মার্বেল, ঘাসফড়িং
ভাঙা প্রজাপতি ডানা, কুড়িয়ে পাওয়া ঘুড়ি,
অনেক সংগ্রামে; তৃষ্ণার ঘামে সাধের লাটাই;
কিছুই ফেলনা নয়, স্মৃতির মন্দিরে
সবই অক্ষত প্রাচীন মুদ্রার মতো
হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার এক একটি ইতিহাস।
ফুটে ওঠা কত বর্ণিল, ঝকঝকে,
কালো অধ্যায় ছাপিয়ে ক্রমশ দুর্বলের হেরে
যাবার দায়ভারে, লোভী সৈন্যকে
বশ করে, কৌশলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা,
শক্তির অংশীদারে কত খোঁজা- কত
ছায়ার পেছনে ছায়ার ছুটে চলা, হারিয়ে
যাওয়া ঈর্ষা, সাম্রাজ্যের পতন।
কিছুই ফেলনা নয়। কিছুই যায় না ফেলা;
কোন নিভৃত মুহূর্তে হঠাৎ অচেনা কোন মুখে
জেগে ওঠে পুরনো প্রিয় কোন চোখ, কিছুই ফেলনা নয়।
আগামীকাল যেমন কল্পনা
আগামীকাল যেমন কল্পনা, আজ যেমন বিস্য়ম
স্মৃতি সে রকম অলীক নয়। সব মিথ্যের মাঝে
স্মৃতিই সত্যি; সেখানে নেই কোনো ফানুস।
অন্তহীন হৃদয়ের তলদেশে যে সবুজাভ অরণ্য
ফাল্গুনে পলাশের বনে যে দাউদাউ আগুন
বাসনামণ্ডিত হয়ে ওঠে স্বপ্নের সরোবরে।
নিসর্গশোভায় আজ ও আগামীকালের নিঃসঙ্গ
উপস্থিতিকে যে অম্লান ভাসিয়ে দেয় যুক্তির ভেলায়
সেই পরিপ্লাবি কাতরতা, সেই অসম্ভব করুণ ভ্রমর
অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে হৃদয়িক আয়নায়।