যখন পৌঁছলাম
আমার হাত, হাতের আঙুলগুলো স্বপ্ন দেখতো খুব; তোমাকে আলতো করে ছুঁয়ে দেবে একদিন! আমার পা দুখানি প্রায়ই হেঁটে গেছে নিঃশব্দে! আমি জানি না কেন তারা তোমার দিকেই হেঁটে গিয়েছিল!
সকল চিন্তা, ধ্যান ও মনস্ক জগৎজুড়ে কেবল অজস্র প্রার্থনালয়। একটা কাঙ্ক্ষিত চোখ আঁকবো বলে নেমে গেছি রঙের নদীতে! ওষ্ঠ, কপোল আর চিবুক আঁকতে পেরিয়ে গেছে অজস্র বসন্ত!
একদিন বেদনার বর্ষাতি মাথায় ক্রমশ শরতের দিকে যেতে যেতে দেখলাম রঙিন বিকেলের মতো তোমার মুখখানি! ছুটতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো পেছনে ব্যর্থ পদচ্ছাপের সাথে ফেলে এসেছি ক্লান্ত পদযুগল!
সেই মায়াময় তিলবতীর কোমল চিবুক স্পর্শ করতে গিয়ে টের পেলাম; রঙের জঞ্জালে ব্যবহৃত তুলির সংসারে রেখে এসেছি স্বপ্নময় হাত ও হাতের দশটি আঙুল!
অলৌকিক অভিসার
তুমি আছ এই ভেবে পা বাড়িয়েছিলাম একদিন; ঘুরে বেড়িয়েছি ভোর থেকে ভোরে…মেঠো-সন্ধ্যার কাঁধে চড়ে চলে গেছি নির্ঘুমের দীর্ঘ কারাগারে! হয়তো কোথাও তুমিও বসে ছিলে জোড়া শালিকের প্রতীক্ষা নিয়ে।
সেই কবে কোন আহত পাখির করুণ চোখে দেখেছিলাম নির্বাক বেদনা! সেই থেকে আমি আর কারও চোখের দিকে তাকাতে পারি না। কেবলই মনে হতো, তুমি আছ এই পৃথিবীতে; তোমার হাত ছুঁয়ে দিচ্ছে ভোরের রেলিং, টবের সদ্য ফোটা আ্যালমন্ড, তোমার চোখ চেয়ে আছে মুমূর্ষু জ্যোৎস্নার দিকে!
খুঁজে বেড়িয়েছি তোমায়; হয়তো তুমি তখন পায়রার বুকে ভেসেছো নৌকায়। তোমার চিন্তার আকাশজুড়ে হয়তো আমারই নক্ষত্রসম্ভার! তোমার উদাসীন হাত ছুঁয়েছে নদীর জল; হয়তো আমিই ডুব দিয়ে ছুঁয়ে এসেছি নিঃশর্ত আঙুল! তুমি জানোনাই কোনোদিন।
তুমি আছো এই পৃথিবীতে। অনড় বিশ্বাসের হাওয়ায় চেপে উড়ে উড়ে…উড়ে উড়ে…একদিন অপেক্ষার উদ্যানে মুখোমুখি দুজন; ছুঁয়ে দিতে চাইলাম তোমার চিবুক! চোখের দিকে তাকাতেই দেখলাম আহত পাখির ডানা ঝাপটানোর ক্লান্তি! আলিঙ্গনে জড়াতেই মনে হলো ধরে আছি বাতাশের পাহাড়, ঝড়ের ডানা! জলোচ্ছ্বাসের মাস্তুল! মাঝির ব্যাকুলতা বোঝে না সওয়ারী, নৈঃসঙ্গের পাল তুলে ভেসে থাকে শুধু অজস্র নক্ষত্র।
এইসব রাত্রি জাগরণ, অনর্থক কোলাহলমুখর দিন! চলে গেছে সবই। রেখে গেছে শুধু কীর্তনখোলার বুকে তৃষ্ণার্ত ঢেউ! ডুবে যাওয়া সূর্য আকাশে যেমন রেখে যায় অজস্র রঙের সামিয়ানা।