শবযাত্রা
আমার মৃত্যুতে শত শত ফানুস উড়িয়ে দিও।
আকাশের ঝলমলে আলোকসজ্জায়
বিমোহিত হয়ে যেন সেদিন
সবাই আমার মৃত্যুশোক ভুলে যায়।
আমার মৃত্যুতে সারি সারি কালো গোলাপ নিয়ে এসো।
যেন বিস্ময়ে সেদিন সবাই আহাজারি ভুলে যায়।
আমার মৃত্যুতে মদিরা পানের এক ছোট্ট জলসাঘর রেখো।
যেন নেশায় বুঁদ হয়ে আমার স্মৃতি ভুলে থাকা যায়।
আমার মৃত্যুতে এক রাশি রঙিন রেশমি সুতোয় বোনা পালঙ্ক সাজিয়ে রেখো।
যেন সুতোর ভাঁজে আমার অতৃপ্ত আত্মার ক্ষয়রোধ হয়।
আমার মৃত্যুতে আগরবাতির বদলে ধূপ জালিয়ে দিও।
যেন বাতাস সেদিনের নির্মমতা ভুলে যায়।
আমার মৃত্যুতে এক ফালি ভালোবাসা দিও।
যেন শবযাত্রায় হ্যাঁ এইবারও ভালোবাসা পাইনি
বলে আক্ষেপ না জন্মায়!
টেপ রেকর্ডার
আয় তোকে আজ ভাঙা টেপ রেকর্ডারের গল্প শোনাই।
সোডিয়াম বাতির নিচে আনমনে হাঁটা থেকে শুরু করে
ভোরের পাখিদের কিচিরমিচির পর্যন্ত ওই যে সেদিন বেশামাল
হয়ে উড়ে বেড়ালাম। আর ঠিক পরক্ষণেই
তুই মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলি ‘ভালোবাসিস’?
আমি হুট করে মিইয়ে যাওয়া কোনো কাব্যের চরিত্রের মতো
ভ্রমে হারালাম। পলক ফিরেই ফের নিঃশব্দে হ্যাঁ-সূচক সম্মতি জানালাম।
তোর নিরাকপরা অভিযোগ আর মিষ্টি অভিমানের ভাঁজে গুঁজে দিলাম
বুনোফুলের সুঘ্রাণ। তুই মাতোয়ারা হয়ে নিমিষে আমাতে হারিয়ে পাগলপ্রায়।
ঘামে ভেজা তোর শার্টের ভাঁজে আমার লেপ্টে থাকা অব্যর্থ সব নামহীন
অনুভূতির ভিড় ঠেলে তোর সন্তর্পণে পাশ কাটিয়ে সামনে আগানো।
আর আমার সেই বোহেমিয়ান লাজুক সত্তার আজন্ম রেশ।
তোর জীবনের সব অগোছালো অব্যর্থতার নিরাশ হওয়া
আবদারের ভিড় ঠেলে আমার কোলে মাথা রেখে এক ক্লান্তি ঘুম আর ঘুম।
বেঘোরে বিচলিত মনের তাণ্ডবের সাথে আমার মিশ্র অনুভূতির সংঘাত।
অভিযোগে অভিলাষ
যাক না সব অতৃপ্ততা ভেসে ওই মেঘেদের দলে।
যাক না সব তুচ্ছতা উড়ে ওই শীতল বাতাসে
যাক না সব মিছে কান্না শত অমানিশার ঘোরে।
যাক না সব অনাকাঙ্ক্ষিত মায়া পুরনো সেই ধ্বংসস্তূপের আড়ালে।
যাক না সব মৌনতা ছাড়িয়ে আনন্দাশ্রু জলে মিশে একাকার হয়ে।
যাক না সব অনিষ্কাশিত ধূসর আবেগ মিশে নির্লিপ্ত বিকেলে।
যাক না সব বোহেমিয়ান সত্তা গর্ভস্থ ভ্রূণের প্রস্তর ছিঁড়ে।
যাক না সব আপসহীন ক্ষত বিভেদের দেয়ালঘেঁষে বিস্তীর্ণ নদীখাতে।
যাক না সব।
যাক, যাক না সব!