অবেলায় ডোরবেল
মাঝরাতে ডোরবেল বেজে ওঠে সশব্দে
ঘুম ভেঙে যায়
হালকা কাঁথার খোলস ছেড়ে
বের হতে মন চায় না, সায় দেয় না
দরজা খুললেই একরাশ আঁধার হামলে পড়বে ঘরে
লণ্ডভণ্ড করে দিবে সাজানো পরিপাটি ঘরদোর
তাই জোছনা মাখা ঘরটা নষ্ট করতে চাই না।
এইযে ডাইনিং টেবিল, সোফা, আলমারি, কিং সাইজ খাট
সবকিছুতেই জ্যোৎস্না মাখা
ভালোবাসা জমা রাখা
বাথরুমের শাওয়ার,
বিশাল মিরর রোজ সকালে কথা বলে,
কী যে বলে বলেই চলে
জীবন মানেই গতিময়তা
হাজার বছর ধরে পথ হাঁটছি
পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে উল্টো প্রান্তে।
জীবনানন্দকে সশ্রদ্ধায় তুলে আনি
ট্রামের চাকা থেকে
শুশ্রূষার প্রলেপ মেখে দেই দেহজুড়ে
যত্নে রাখি রিডিং টেবিলে।
মহাস্থানগড়ের পালির টোলে ঘুরে ঘুরে
সভ্যতার গন্ধ শুঁকে শুঁকে
বনলতা সেনকে খুঁজে ফিরি নাটোরে—বিশ্বময়।
ভালোবাসার আতর মাখা রুমাল
বুকের গভীরে ঠেসে জ্যোৎস্নায় স্নান করি রোজ রাতে
কিং সাইজ খাটে ফুটে থাকে বসরার হাজারো গোলাপ
প্রেমের অযুত আলাপ
আদিম চাহিদার স্মৃতিচিহ্ন চুষে নিয়ে
সুগন্ধি ছড়ায় বিছানার চাদর।
এই বেগানা বিছানা ছেড়ে কিভাবে উঠবো বলো
ডোরবেল বাজে—বাজুক, এখন দরজা খুলবো না
একটু পরেই আলোয় হাসবে পৃথিবী
সাগর আছড়ে পড়বে
প্রাণে প্রাণে
স্থানে স্থানে
জীবন উদযাপনে।
বীক্ষণে হতাশার ডালপালা
টেলিস্কোপ দিয়ে এখন
চাঁদ দেখি না
খুঁজি-না নক্ষত্রকুঞ্জ
কিংবা মহাকাশের অলি-গলি
এখন শুধুই মানুষ খুঁজি
আলোয় ধোয়া—রোদে স্নান করা মানুষ।
মানুষ নাকি ডায়নোসারের মতো
. লুপ্তজাতি হয়ে যাচ্ছে!
সন্দেহ ঘুরপাক খায় ইথারে-ইথারে
উটপাখির মতো বালুতে মুখ গুঁজে
মানবতার মহাকাব্য লেখা হচ্ছে দেদারসে।
টেলিস্কোপে চোখ সেঁটে
কেবলই মানুষ খুঁজি, অথচ
পৃথিবীময় চষে বেড়ায়
মানুষের সাদৃশ্য প্রাণী।
রূপান্তর
দেখতে দেখতে আমার ছেলেটি
পুরুষ হয়ে উঠছে
টের পাইনি
সময় এসে কখন যে
খোলস পাল্টে দিয়ে যায়!
পুরুষেরা হয়ে পড়ে শিশু
আর শিশুরা হয়ে ওঠে পুরুষ।
বহতা নদী হাঁটতে হাঁটতে
সাগর হয়ে যায়
মেঘ সরে সরে
আকাশ ডানা মেলে;
বদলে যায় মানুষের অবয়ব।
উঠোনের কোণায় সেদিনের কামিনী ফুলের চারাটি
আদর-যত্নে আজ হৃষ্টপুষ্ট,
ওর পাতায়-পাতায় ভালোবাসা দানা বেঁধেছে
হৃদয়জুড়ে কেবলই মুগ্ধতা
সুঘ্রাণে ঘরদোরে বইছে আলোর আফাল।
সময়ের কাছে হরদম শিখছি
ভালোবাসার গুনিতক নামতা।
আর্তি
হে প্রকৃতি
ক্ষমা যদি হয় বেঁচে থাকার সুযোগ
ক্ষমা করে দাও।
সভ্যতার যে মশাল জ্বেলেছিল মানুষ
সেই মানুষ
কেড়ে নিয়েছে নদীর যৌবন
কেড়ে নিয়েছে অরণ্যের তারুণ্য
কেড়ে নিয়েছে রোদের হাসি
কেড়ে নিয়েছে মেঘের বিষাদ
মৃত্তিকার বক্ষ বিদীর্ণ করে—
লুণ্ঠন করেছে রসদ।
গুহা থেকে আগত মানুষ
যদি প্রকৃতিকে বাঁচতে না-দাও
ফিরে যাও অন্ধ গুহায়
মারি ও মড়ক গিলে খাবে তিলে তিলে।
ক্ষমা যদি হয় বেঁচে থাকার সুযোগ
ক্ষমা করে দাও
হে প্রকৃতি।
চন্দ্রাহত
রাতের গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে
বিষাদের মেঘ দানা বাঁধে
সেই চন্দ্রভুক মেঘ
ঢেকে দেয় জ্যোৎস্না ধোয়া চাঁদ,
জোনাকজ্বলা নক্ষত্রকুঞ্জ।
আঁধার কিলবিল করে চন্দ্রমেহনে
মুখগহ্বরে লুকিয়ে থাকে জ্যোৎস্না।