ইয়া নাফসি
কুয়াশার ভেতর মাফলার মুড়িয়ে থাকা সকাল-সমূহ শিশিরের ঝরে পড়ার ইতিহাস বলেছিল সূর্যের কাছে। নতমুখে রোদমাখা আলো ঘাসের কাছে পৌঁছে দিয়েছে সেসব কথাশিল্প। আলোরোদ খেলায় জন্মেছে ফুলের জমিন আর একটা উড়োচিঠি জানিয়ে দিয়েছে মৃত্যুর খবর। জন্ম মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা রাত চাঁদের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলেছে-দেখো পরজীবী জীবনও উজ্জ্বল হয়, উজ্জ্বলতর ইচ্ছা অনুপ্রেরণা হয়ে ঝুলে থাকে অন্ধকার আকাশের বুকে। আমি আকাশের দিকে তাকানো শিখলাম এবং মেঘের ছায়া কেটে বড় হতে হতে পৌঁছে গেলাম আরশের ওপরে। আল্লাহর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সেজদায় অবনত পৌত্তলিক মন—বারবার অস্বীকার করলো যাবতীয় কিতাব। বিভাজিত কালেমায় অভিশপ্ত মনুষ্য সৃষ্টি ও ধ্বংসের মুখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বহুদিন জপছে তজবিহ—ইয়া নাফসি…ইয়া নাফসি…
সংঘাত
অজ্ঞাত গুহায় আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে দেওয়া পথিক—মূলত নবী, আমার সমসাময়িক ভাবনার ভেতর বসে আছেন ভারতীয় দেবদূতের মতোন।বাংলা ভাষাভাষী একজন কবির কবিতায় এঁকে যাচ্ছে ক্রুশের চিহ্ন। অসংখ্য ক্ষত রং হোলি উৎসবে ফানুস উড়িয়ে বলছে বেমানান হর্সরেসের গল্প। ঘোড়সাওয়ারের আসনে আসীন আমি ঘুরিয়ে যাচ্ছি রক্তমাখা তলোয়ার—বিজয়ের দম্ভে উড়ছে লাল নিশান। গোলাপের খুনে গোলাপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে ব্যর্থতার পাপড়ি—লালগালিচার বয়ানে সম্বর্তিত মুখোশ, মানবতার মুখে কুলুপ এঁটে আনছে শান্তির পয়গাম। হাস্যরস প্রিয় ভাল্লুক একজন অবতারের গল্প বললেন—যার পরাজয় প্রতিটি ব্যঙ্গচিত্রে এবং যিনি আমাদের মরুর দেশের নায়ক—তার দিকে তাকিয়ে শেষ করুণার অশ্রু পতিত হতে হতে জানতে থাকলো মাটির কান্না এর থেকেও ভারী হয়ে গেছে কুরেক্ষেত্রের ধ্বংসস্তূপের ভেতর।
জন্মশূন্য
পাতাঝরা দিনে কিংবা কোনো এক শীতের রাতে শুকনো গাছে ফুটে থাকা ফুল আমি—পরিযায়ী পাখি হয়ে উড়ে এসেছি তোমাদের পৃথিবীতে। মূলত আমার জন্ম তুচ্ছ এক পালকখসা শালিকের মতো—আর শহরের অন্ধকার গলির ভেতর দম আটকে থাকা স্বপ্ন—নিঃসঙ্গ যুবকের হাহাকারে মিলিয়ে যাওয়া ভোর। ভোর নয় গুমোট অন্ধকারে জেগে থাকা জোনাকি আমি—সন্ধ্যাবাতির অর্থ ভুলে শবের পাশে আলো জ্বালিয়ে রাখি। মৃতদের পাশাপাশি আজন্ম বেহায়া একটা গল্প, একটা গান কিংবা কবিতার কারুকার্য মুগ্ধ করে রাখে আমাকে- আর আমি বারবার জন্মাই অবমাননার কলঙ্ক বুকে।বুক ও পিঠে অসংখ্য চাবুকে ঘা আমাকে নতুন জন্ম দেয়—তুমুল বেগে আছড়ে পরি পুরনো দেয়ালে। যে দেয়াল জরাজীর্ণ হয়েও পূজিত হয় ইহকাল-পরকাল ভাবনায়—তার শুভঙ্করের ফাঁকিটা তুলে দেই মহাশূন্যে।