কবি
আলেয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত আমি যখন চোখ রাখি তোমার চোখে,
শৈল্পিক আমন্ত্রণে ঝরঝরে করো হৃদয়
নিষ্প্রভ আলো জ্বলজ্বল করে ওঠে,
যেন পৃথিবীর প্রাণে শিহরণ জাগে;
তোমার সৃষ্টির ফাঁদে জড়িয়ে যাই হরহামেশাই।
ঘাসফড়িংয়ের দলে হায়েনা হয়ে
কিংবা শ্রাবণের জলে শুদ্ধ,
অমোঘটানের বেড়াজালে নিংড়ে নাও যত সব অসতর্ক ভালোবাসা।
গড়িয়ে পড়া জলের সাথে জলকেলি খেলো;
অন্তর্দাহেও কেমন প্রস্ফুটিত হই তোমার নিমন্ত্রণে।
মৃত্যু
হেমন্তের বিকেল গড়িয়ে যায় সোনালি ধানের শীষ বেয়ে,
থরে থরে পড়ে থাকা জীবন জানে কী হারাচ্ছে সে।
শীত-মাঘের এই প্রবহমান খেলায় কেবল সময়ের মৃত্যু ঘটে;
থেকে যায় কোনো এক অমোঘ টান।
ঘুম
পাপড়ির ভাঁজে ভাঁজে জায়গা করে নিয়েছে যে আগন্তুক
আমি তাকে অভিবাদন জানাই।
অতিদূরে নক্ষত্রগুলোকে দেখতে না পাবার বাসনা স্তিমিত হচ্ছে রোজ।
পঁচিশের সিঁড়িতে কেমন কাঁটার উৎপাত,
কতটা আহাজারি প্রেমিকের হৃদয়ে;
নিজ কক্ষপথে ঘুরতে গিয়ে রাখিনি কিছুরই খোঁজ।
কৈশোরের ডানা ভাঙা ফড়িংয়ের মতো কাৎরাতে থাকা জীবন
প্রাণের মূল্য বোঝে গেছে।
খামখেয়ালির নিগূঢ় তত্ত্ব বিশ্লেষণে জেনেছে,
‘আতিথেয়তা সুখের চাবিকাঠি’।
অপেক্ষা
ঈশান কোণের বটবৃক্ষের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি;
মেলে দিয়েছি যা কিছু গোপন,
তুমি তাকে প্রগলভতা ভেবে এড়িয়ে গেছ।
নিজেকে প্রকাশ করতে গিয়ে খুলে দিয়েছি যত বাঁধন
ঝুলিয়ে রেখেছি আমার আমিকে,
তুমি কেমন হারিয়ে যাচ্ছো ঢেউয়ের মতন।
নারী
আগ্রাসী থাবায় ছিনিয়ে নিতে পারে হৃদয়
পারে ডুবো জলে সাঁতার কাটতে ও।
প্রচণ্ড উদ্যম নিয়ে যখন গোলাভরা ধান তুলে আনে গৃহস্থ কিংবা বিরহের গল্পে;
চামড়া খসে পড়া রোদে শুকিয়ে যায় ভয়েরা,
অতীতকে সেলাই করে তখন বাড়িয়ে দেয় প্রিয়তমের আগামীতে,
দ্রুতপঠনের আনন্দপাঠে নিজেকে বিশ্লেষণ করলে
গুপ্তধন মেলে দেয় তার রত্নখচিত ভাণ্ডার।
আশীর্বাদ-৩১
(বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে)
ঊনসত্তরে যেই তর্জনি একটি দেশের জন্ম দিয়েছে
আমি ভেঙে দিয়েছি সেই হাত;
আপনারা আমাকে ধর্মান্ধ বলুন,
কিংবা মৌলবাদ
বামপন্থী বলে গালি দিতে পারেন,
চাটুকার দুর্বৃত্ত অথবা বড় কোনো পাপ;
আমি হলাম দুধ খেয়ে বাঁচা সেই পোষা সাপ।
জাস্টিসিয়ার অর্ধনগ্নে কেঁপেছে শরীর আমার।
হে বজ্রকণ্ঠের বাহক,
তোমার অনাবৃত অনাবিল অঙ্গুলি গুঁড়িয়ে দিয়ে
তাই তৈরি করেছি নতুন আরেক ইতিহাস।
হে নবদিগন্তের দুয়ার,
ভাস্কর্য স্রেফ একটি আবরণ;
আমি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মেরুদণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছি।