০১.
তোমাকে বোঝাতে গিয়ে ঝুলে থাকি সময়ের ডালে, হয়তো গোপনে ঝরে সমৃদ্ধ পাতার জীবনী! আমি কে—এ প্রশ্নের উত্তর কেউ পায়নি বলে ঝড়ের শুরুতে নাম না জানা প্রজাপতি রঙ ছড়িয়েছে তোমার চোখে আর ভুলোমনা পাখির কলরব থামিয়ে দিয়েছে মেঘের উড্ডীন। তবু দেখো, কি বিশাল কান্তি নিয়ে ঝরে পড়ছে জল, ভাসিয়ে দিয়ে সমস্ত জঞ্জাল—পৃথিবীর।
হাওয়া কাঠে ঝুলে আছে ছেঁড়া বোতাম—প্লাবিত অন্ধকার!
০২.
তোমার ফসিল ঘিরে নেচে গেলে অচেনা আলো, নান্দনিক নগরে; টেবিল তর্কে বাড়ে সম্মোহনের স্বেদ। ভীতিগ্রস্ত মানুষ একেবেঁকে মিশে যায় শীতার্ত হাওয়ায়, আর আমি ফুটপাথে দাঁড়িয়ে নত্রের পতন দেখি মহাসমারোহে। আমাদের দিন সেঁচে উঠে আসা মৃত মানুষ, যৌবনদীপ্ত সন্ধ্যায় টেনে আনে সংবেদনশীল ঋণ; অথচ কালের বাহুতে হাওয়ার আস্কারা লাগিয়েও তোমাকে বোঝানোর দিন শেষ হয় না।
মাতালের চোখ থেকে ঝরে পড়ে—হাওয়ার বিফল সংগীত!
০৩.
ধূপসন্ধ্যায় বাগানের ফুলগুলো ঝরে গেলে, প্রফুল্ল হাওয়ায় ভেসে যাবে আর্যসুখ—এই সত্য জানো তুমি আর ডুমোমাছি। তাই ধূলিমুখর আয়োজন পড়ে থাকে অনাদিকাল, মেঠোপথের জ্যামিতিক বাধা ভেঙে। আয়নাঘরে বুকের স্পন্দন স্পষ্ট হলে ছুটে যায় নিশিপানের ঘোর, বয়ামভর্তি আলোর নহর লুটিয়ে পড়ে সমরসজ্জায়। অগত্যা মন্ত্র ও জপ ভুলে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সরে আসতে হয় আমাকেও।
নিয়তি আমাকে আবিষ্কার করে—ঈর্ষান্বিত সন্ধ্যার ভিড়ে!
০৪.
বদহজমের ঢেঁকুর তোলা দিনে তোমার মুখে কান্নার মেছোদাগ দেখে গাছে গাছে নেচে ওঠে নীতিকথা। আলোর ভাঁজে মৃত ঠোঁট রেখে সময় কথা বলে অনর্গল। আমাদের বেহিসেবি দিন, ইচ্ছের ল্যান্ডস্কেপ হতে হতে ডালপালা সমেত ঝুরঝুর ঝরে। শোভন পালকের হাসি গড়িয়ে এক সময় রাত্রি নামে দুদ্দাড়, তবু আলোর কার্নিশে যে বেহাগ বেজে ওঠে, কারো মনে আসে না তার—যথার্থ উপলব্ধি।
হাওয়া নাচের খেলায় ভাসে—স্বপ্নখচিত তুলাদণ্ড!
০৫.
কত আর বিবর্ণ হওয়া যায়, মধ্যরাতে বয়ে গেলে উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস! সময় কি সমুদ্রের হাওয়া? জলজোছনায় কাঁদে কেন কামরাঙা কার্তিকের ভোর? এইসব অগোছালো ভাবনার ভেতর দশ আঙুল মেতে ওঠে শিল্প বিনির্মাণে, আমি ঘর্মাক্ত ব্রায়ের সুগন্ধি ছেনে গড়িয়ে যাওয়া নির্জন দুপুরের কথা ভাবি। কল্পিত সময়ের ভ্রূণহত্যা উৎসবে তোমার মুখাবয়ব জেগে ওঠে অকস্মাৎ। আমাদের অতীতভস্ম নিয়ে শোকগ্রস্ত নদী উড়ে যায়, সমতলের চোখে!
ট্যাবচোখ অবশেষে খুঁজে পায় রাতজাগা—হাওয়ার পলেস্তারা!
০৬.
উড়াল শিখতে গিয়ে হারিয়েছি দিনরাত, ইচ্ছেগুলো ঘোলাটে এখন। আমি আর কাউকে ছুঁতে পারি না বলে ইশারার অপোয় দিন কাটাই সুতোঘরে। অর্থহীন, তর্কহীন সময়ের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে দূরত্বের বয়স বাড়ে নিত্য-অতীতে; যেখানে হাওয়ার সংসার চুপিসারে বিশ্বাসের কঙ্কণ হয়ে মৃদুমন্দ।
উড়াল এমনই ঘোর ভাতঘুম শেষে জেগে ওঠা মুখরা বাঘিনী!
০৭.
মেঘডুমুরের বনে জলঘুম ঝরে আর একলা পেয়ে আমাকে বাজিয়ে নেয় শৃঙ্খলিত হাওয়া। জলাঙ্গীর ঢেউয়ে মাইন পুঁতে রেখেছিল একদিন বিবেকের ঘোড়া, আমি তার রক্ষক হয়েই গড়িয়ে দিচ্ছি কমলারঙের বিকেল। গোত্রহীন মানুষ কেন ভালোবাসে নিসর্গের সৌন্দর্য, এই ভাবনা টুকরো করতে করতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে জীবিকার উঠোনে। তুমি চাঁদটাকে মাটির সানকিতে টেনে পাঠ করো জ্যোৎস্নার ইতিহাস।
বৃক্ষের ব্যারিকেড ভেঙে প্রতিউত্তরে দৃঢ় হয়—জন্মান্তরের বিশ্বাস!
০৮
নৃত্যরত পা বোঝে ঘুঙুরের মানে, আর আমাদের ছায়া ঘিরে জেগে থাকে শালবনের পাখি। পাখিও গান গায়, কিন্তু মানুষ কখনো খুঁজে পায় না সেই উৎসলোক। জীবনের নানা কৌতূহলে মেটাতেই পার করে সহস্র রাত্রি। আমরাও ছুঁতে চাই রাত্রি—প্রগাঢ় জীবনানুভবে। অথচ দেখো, সামনে পেছনে কেমন সাইরেন লেলিয়ে দিয়েছে অপরিণামদর্শী হাওয়া!
মানুষ মাত্রই হাওয়ার সঙ্গী—মুদ্রাদৃশ্যে খোলস পাল্টিয়ে নাচে!