আমি আমার চিন্তার কর্তা- খচ্চরও
আমার মানসিকতার গভীরে
চিন্তার একটি মহাবিশ্ব প্রায়শই খুঁজে পাই,
যেখানে সেরিব্রাল একটি-খেলার মাঠ তৈরি করে
এবং নিউরোট্রান্সমিটার-নিউরনের গোলকধাঁধা,
আমাকে বিভ্রমে ফেলে
আমি আমার চিন্তার কর্তা, আবার খচ্চরও
তাই তারা আমাকে সুখী করে, অসুখী করে
আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যত নিয়ে খেলা করে
নিজেকে তাই এই পৃথিবীতে রাজা এবং দাস
উভয়ই মনে হয়।
কল্পনার ক্যানভাসে আঁকা এ মন
মূলত আমার সৃষ্টির খেলাঘর
প্রতিটা দিন এখানে চিন্তার সাথে নতুন সম্ভাবনা আসে
তবু সেরিব্রাল ল্যান্ডস্কেপের মাঝে,
মাঝেমাঝে নিজের অস্তিত্বের জটিলতায় বিস্মিত হই।
নিজেকে বোঝার বাইরে এ এক জটিল রহস্য–
যা আমাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে প্রায়শই।
উৎপত্তি কি বিনাশ
নির্ঘুম রাতে টের পাই, মাইক্রোগ্লিয়া-টিপ টিপ পায়ে
মস্তিষ্কে ঘুরে বেড়ায়
শুনতে পাই তাদের পদচারণা, যেন একটি ভূখণ্ডে
টহল দেওয়া সৈন্যের দল।
রাশিয়ার পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকির মতো, মস্তিষ্ক
বিনাসেও হুমকি আসে
হানাদাারদের বিনাসে মাইক্রোগ্লিয়া সক্রিয় হয়
ফাগোসাইটিক ক্ষমতায়
যেমন হয়েছিল নিরস্ত্র বাঙালি একাত্তরের দিনে
অতঃপর, মাইক্রোগ্লিয়া ভক্ষণ করে মস্তিষ্কের
সৃষ্টি হওয়া বর্জ্য;
অনেকটা-শিশুর জীবন রক্ষায় কোনো এক মায়ের
অশরীরী শক্তিতে ময়দান দখলের মতো।
প্রয়োজনে মাইক্রোগ্লিয়া- ধত্তক নেয় রূঢ়তা
তারাও দিশেহারা হয় ডিলিউশন নিয়ে
দুগ্ধজাত শিশুর হত্যাকারী মায়ের মতো,
মাইক্রোগ্লিয়া-প্রদাহ ছড়িয়ে
মস্তিষ্কেকে ঠেলে দেয় নিউরোডিজেনারেশনের দিকে।
অথচ, মাইক্রোগ্লিয়া ছাড়া, মস্তিষ্ক একটি নিরীহ হুমকি
যেমনটা মানুষেরের উৎপত্তি কি বিনাশে-মানুষ!
অন্তহীন উপলব্ধি
সোমাটোসেন্সরি-স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষত
একটি গুরুতর উত্তেজনা
তীব্র কি সামান্যতম স্পর্শ, একটি ব্রাশস্ট্রোক বা টোকা
ঝনঝন করা অসাড়তা সূঁচ-অনুভূতির মতো
গরম কয়লার মতো জ্বলে পেশীগুলো-সারাক্ষণ
এ উদ্দীপনা, বৈদ্যুতিক শকের মতো প্রতিটি অঙ্গকে
গুলিবিদ্ধ করে,
এ উদ্দীপনা অস্থিরতা ধরে রাখে কোষে
আহা! যেন স্থিরতা অবসরে গিয়েছে বহুদিন
সীমাহিন এ যন্ত্রণা, সীমাহীন বিরতিতে এক
কঠিন যুদ্ধ
এ এক অন্তহীন নিউরোপ্যাথির উপলব্ধি
নিদ্রাহীন রাত, অস্থির দিনের একটি ধ্রুবক ধোঁয়াশা।
বিভ্রান্তির ক্যাম্পাস হিপ্পোক্যাম্পাস
সিহোর্স ছাঁচের অঙ্গটি মাথার থুলির ভেতর
ধরে রেখেছে আমার স্মৃতির গল্পগুলো
ভয়ের সংবেদনে অতল গহ্বরের একটি জগত, যেখানে
শব্দগুলো সঠিক নয়, দৃশ্যগুলো বিদ্যমান নয়
সে জগতে একটি বিকৃত বিশ্ব দেখতে পাই বিভ্রান্তি নিয়ে
একটি ভূতুড়ে মন এবং আত্মা অনিয়ন্ত্রিত
মানসিক ভ্রমে আঁকড়ে ধরা এ-এমন এক জীবন
যাকে খুঁজতে গিয়ে আমার পথ হারাতে হয়।
টের পাই, প্রতারারনায় মন সত্য মিথ্যাকে
বাস্তব করে দেয়
নীল নীলে খোঁজে বেহুদা সাদার রঙ
তবু, বিশৃঙ্খলা-বিভ্রান্তির মাঝেও একটি শক্তি
আশা নিয়ে উদিত হয় দিনশেষে
এ হৃদয় দীর্ঘ এবং কঠিন যুদ্ধ সত্ত্বেও
কোকিলের গান খুঁজে পেতে চায় শঙ্কা ও কষ্টের মাঝে
চিকিৎসক বলেন, এ এক হ্যালুসিনেশনের সাদারণ উদাহরণ।
আমার ভয়
চাঁদের ফ্যাকাশে রুপালি আভায় একটি ভুতুড়ে
ফিসফিস-প্রতিধ্বনিত হয়
বরফ-শীতল আলিঙ্গনে একটি ভয় আমার আত্মাকে
পরাস্ত করে দিয়ে যায়
হৃদয়ের অস্বস্তির একটি অদেখা ফ্যান্টম নাচ,
ঠাণ্ডা বাতাসের মতো অনুভূত হয়
অন্ধকারের গভীরে ভুতুরে ছায়াগুলি হামাগুড়ি দিতেই
আমার ভাবনার কাণ্ড থেকে উৎপাদিত লতাপাতারা
বক্ররেখার মতো কুণ্ডুলী পাকিয়ে যায়
কাঁপানো অনুভূতি হৃদয়ের ধাক্কা দিয়েই
জন্তুদের ডাক শুনতে পাই
ভয়ের একটি ভয়ঙ্কর কণ্ঠস্বর-শিকল ভাঙতে,
স্থিতিস্থাপকতা খুঁজে পেতে বাধা দেয়
টের পাই, ইস্কেমিক ক্যাসকেড মস্তিষ্ক এবং বায়বীয় টিস্যুগুলোতে
অপ্রতুল রক্ত সরবরাহ করতে তৎপর হয়
বেঁচে থাকার আহ্বান একটি আদিম প্রবৃত্তি
ইন্দ্রিয়ের প্রজ্বলন-জেনেও
অ্যাড্রেনালিন-কর্টিসোল নির্যাস ছুড়ে ভয়ের
উদ্বেগ আমাকে আঁকড়ে ধরে অশুভ ছায়ার মতো
আর তখনই, লড়ার কিংবা পালানোর প্রতিক্রিয়া
আমাকে আরও ভীত করে তোলে।