অনায়াস ভরে আছে…
অনায়াসসমূহ দূরের হয়ে থাকে
যেন তাকে নিকিয়ে রেখেছে পুরু কেউ
আড়ালে নামিয়ে।
কোনো মনোরমে সুবাসিত হয়ে গিয়ে
জানালার কাছাকাছি বাসনারা আসে
ঘুমের নরমে—
যারা শুধু ভেতরের দিকে ঢুকে যায়
সারি সারি ভরে ওঠে মামুলি হৃদয়
পশমের পাশে।
তবু সহজেরা দূরে থাকে, চাপা স্বরে—
যেন ঘুমায় রাতের অনুরোধে মৃদু নুয়ে
শরীফ মেজাজে।
সাদা হয়ে বেঁকে গেছে যারা
আজ রাতে চারদিকে জলের ধারার দেহ নিয়ে
বাতাসের আওয়াজ ফাটল রেখেছে অন্ধকারে,
মনোরম সাদা মানুষেরা সব ঘুমে অচেতন।
পৃথিবীতে এতদিন ধরে ভেবেছি ঈশ্বর যাকে
শরীরে নয়ন রেখে কিছুটা নিজের দিকে নুয়ে
নিজ স্বাদে তাকে ভাবি আজ এই ঘন অবসরে।
ভালোবাসায় কে কাকে ভাবে অথবা ছিঁড়তে পারে
তা কেবল সে-ই জানে, না কি ভাসে দূরাগত শব্দে?
মানুষের মতো পরিশ্রমে অনেক বছর ধরে
সে দারুণ দাঁতহীন, ভয়াল আলোর মতো একা
অনাহত শূন্যতার দিকে নিহিত অভ্যাসে ডুবে
ধরে থাকে সীমানার শেষ, বেঁচে থাকে তামাসায়
কিংবা হতাশার রক্তে ঘিরে থাকা সব ব্যবসায়।
বহুকাল আগে থেকে মানুষেরা দুর্বল রয়েছে,
নিজস্ব নজরে ভেবে তারা ক্লান্ত হয়ে গেছে ধীরে।
কেননা মানুষ তারা—আর-সব প্রাণের মতন
পাহাড়ের মতো অন্ধকারে তারা কেবল মানুষ,
সাদা করোটির হলঘরে কয়েদির মতো পোষা।
মগজের তীব্র আঁচে পুড়ে পশুগন্ধ ভুলে গেছে
অথচ তাদের বসবাস সীমাবদ্ধতার কাছে।
তারা সূর্য অথবা পৃথিবী কোনোটি চেনে না চোখে
অথবা প্রাচীরে ঢলে পড়া গাছেদের দীর্ঘ ছায়া
তারা বোঝে গোলাকার—যেভাবে শিশুরা বাদ্য করে,
যেভাবে হলুদ ঈর্ষা ভোলে বিভোর বাতাসে একা।
তারা জানে চোখগুলো কেবল দেখছে সবকিছু
আর নরম হাতেরা যা কিছু সহজে স্পর্শ করে
তাকেই পৃথিবী বলে—শূন্য যাকে কুসুমিত রাখে।
আছে চাঁদ, ভাটির ভেতরে যাকে ভেসে যেতে দেখে
আর অসংখ্য তারার রাতে নদীতীরে গাছগুলো
অনিদ্রায় চুপ হয়ে যায়, বা এভাবে তারা ভাবে।
তারা রাত্রিতে পুড়তে পারে—শ্বাস নিতে চারদিকে
চাঁদের পেছন দিকে ঘন হতে পারে অনায়াসে।
তারা একটি মুখের ভাষা আলাদা ধ্বনিতে ভেঙে
সহজে ধারালো করে। তারা প্রভু আঁকে কৌতূহলে
থোকা থোকা আঙুরের মতো রোদে যেন ভ্রান্তি গড়ে।
তাদের নিকটে যেন ঈশ্বর কেবল গোলাকার
কেননা সেটাই সর্বোত্তম—সেটাই ঐশীর দেহ
যার কেন্দ্র সবখানে—অথচ পরিধি যেন নেই।
রোদে পোড়া খেলুড়ে মানুষ তাকে সীমানা করে না
দেহ যেন সবদিকে—ছায়া পড়ে আছে সীমাহীন।
অলৌকিক বাতাসে অথচ নিজেকে আলাদা ভেবে
এক পশলা বৃষ্টির পর ডুবে যায় গাঢ় ঘুমে।
কিভাবে দূরত্ব আসে—ভ্রমণেরা রেশমি কাপড়
কিংবা শারদ অরণ্যে ফালি ফালি কাটা চোখ রাখে,
জানালার সারা দেহ হাওয়ায় কটকট করে,
বিপজ্জনক অন্ধকারে সেসব রাতের পাশে
খসে পড়ে থাকে। আর মানুষ-শরীর কেবলই
জাঁকালো ভ্রান্তিতে নুয়ে থাকে কিংবা থাকে না কখনো
কিংবা এগুলো তাদের অংশ—গোলাপি তালুতে যেন
কোনো প্রাচীন শব্দের দিকে আঁকা থাকে অমলিন।
প্রতিটি বসন্ত এলে তারা ভাবে মৃত্যুর নিকটে
এগিয়ে যাওয়া হয়—উৎসব শরীরে আসে শুধু
ডোরাকাটা সময় পেরিয়ে। যারা ভাঙে ফুলদানি
অথচ তারাই হাসে সুবাসিত ফুলের অভ্যাসে।
অসীম সংখ্যক সহস্রাব্দ নীল সমুদ্রের মতো
কেবল একটি ঘ্রাণ আর নোনা স্বাদের আকার
পৃথিবীর মানুষেরা গলিয়ে রেখেছে ভাবনায়।
তারা অনায়াসে ভাবে মানুষেরা মুকুরিত হয়,
তারা ভাবে: তারা ছিল অথবা ভাসছে কোনো এক
জলের ওপরে সারাক্ষণ, আর কিছু পরে পরে
সহসা আটকে যাচ্ছে কোমর অবধি জল-ঘাসে।
এভাবে জলের কাছে থেকে তারা ভাবে কোনো কালে
কোনো এক আয়ুর ভেতর তারা ছিলো বোবা মাছ—
সাগরে লাফিয়ে ক্রমাগত একদিন বুনো দেহ
বাদামি হরিণ হয়ে গেছে—অথবা গাছের ডালে
নরম ঘুমন্ত গায়ে পাখিদের মিছিলে উড়ছে।
অথচ তাদের আর্দ্রতায় ঘন শরীরের কাছে
এক মহাকাল ধরে মানুষের পশম রয়েছে।
একে তারা বলে: শরীরে সূর্যাস্ত আসে অতঃপর
সবকিছু পুনরায় জন্ম নেয় কিছু অন্ধকারে
ভিন্ন ঘরে ঘুমানোর মতো ধীরে জীবন পেরিয়ে
ঢুকে যায় অন্য কোনো অবিরাম সবুজ জীবনে।
কিন্তু হাওয়ার কাছে এই সব কিছু (পুনর্জন্ম)—
কেবলই সমতল, কবিতার মতো অভিব্যক্তি,
এ শুধু নিজেকে অন্তহীন, গাঢ় ভাবার প্রচেষ্টা
সব নদীতে চুমুক দিয়ে মধ্যরাতে ডুবে থাকা।
আর ব্যক্তিগত প্রভুদের বিছানার চারপাশে
গড়ে রাখা প্রাচীরের কাছে মিনার খচিত শব্দে
ভাঁজকরা ছুরির মতন শেষ বিনত হওয়া—
যেন কোনো মরীচিকা, বহুকাল কাঁপছে হাওয়া।
প্রেমের
প্রেমের ভাবি যাকে—নিজের চারপাশে, সুগন্ধী সে,
যেন হিমের স্বাদে মগজে হাত রাখে প্রতি মুহূর্তে—
সকল অবসরে, মুষলধারা হয়ে—সহজে ঝরে—
প্রেমের দেহ যাকে আকারহীন ভাঁজে ভালোবেসেছে
জানালার বাতাসে পাওয়া যায় তাকে ঘন সুবাসে—
রক্তের গভীরে কেবলি একা হয়ে, সে যেন আসে।
প্রেম যেন আঠালো
জমে থাকে কোথাও
গাঢ় আঘাতে।
নিভিয়ে
বুনে রাখা হাসিতে তোমার দাবা খেলা
কুসুমিত মেজাজে আমাকে খুন করে।
তবু কেন ফলাফল অলৌকিক ভুলে
নিজের চারপাশে পরিযায়ী আলোতে
নিভিয়ে রাখো চোখ, হলুদ উপকথা?
আমি নরম আর ঘুমন্তের মতো
হিমায়িত শরীরে অথবা ভ্রান্তিতে
তোমাকে যতবার ভেবে রাখি ভাষায়
মনের ভেতরটা বিকেল হয়ে আসে—
বাতাস এসে নামে শুকনো গায়ে যেন।
কী আছে অথবা নেই
যা-কিছু সাদাটে হিমায়িত থাকে, সমাহিত ভাষা তার মুকুরিত হয় ফর্সা কণ্ঠস্বরে
নয়নের তারা গোল হয়ে গেলে অন্তিম দিনের মতো এভাবে আড়ালে নেমে ভেবে গেছি।
পল্লবিত চিন্তা অদৃশ্য কোথাও জলের ধারার নকশায় যেন আমাদের খেয়ে ফ্যালে—
যেন বাস্তব যা-কিছু গন্ধে কিংবা মগজে সুরেলা, আসলেই তারা আছে বা কখনো নেই—
আগাছার মতো ভিড়ে আমাদের সব চিন্তা করোটিতে ভেসে থাকে কর্পুরের স্বাদে যেন।
কী আছে অথবা নেই—মোমবাতিগুলো সারা রাত জ্বলে, ধীরে শিখা কাঁপে, মূলত সেসব
সোনালি আভায় কতটুকু কাঁপে, রাত গলে শাঁসালো উত্তাপে—চোখদের কাছে দাবা খেলে,
সেসবের ইতিহাস রয়েছে কেবল অনাহত পশমের ভাঁজে (গাঢ় সৌরভে গহিন—)
ভেঙে পড়ার সকল দৃশ্য কেবল বন্ধুর—নীরব পবিত্র আলো দেয় নিবিড় সাহসে।