অনর্থ কথা
গাছেদের ছায়া কাঁপে মেঘেদের বেহায়া সঙ্গমে
প্রেমিকের কিছু স্বপ্ন ভাসে প্রেমিকার অভিমানে
একটি ফড়িং কেন ডুবে ডুবে কাটলো সাঁতার
লতায়-পাতায় প্রেম বাড়ে যদি নীল আসমানে!
তবু থাকে আমাদের ভাঁজভাঙা বিকেলের রোদ
বিগত যৌবনা নারী, আহা বেণী করে ছেঁড়া চুলে
তবু জাগে মাঠেমাঠে বুড়োদের অক্ষম আক্রোশ
আবেগের কী-ই দোষ, সে যে পড়ে কিশোরী ইস্কুলে!
প্রেমিকার তবু অনুযোগ বাড়ে প্রেমিকের অনুরাগ
রক্তের ভেতর জ্বলে—অসময়ে কামনা চেরাগ!
উড়ন্ত কাশফুল
তুমিও ছিলে চাঁদের সঙ্গে তারায়
অনন্ত মেঘ উড়ন্ত কাশফুলে
ঝরলে পড়ে জলেশ্বরী তলায়
কাঁপলো কি রাত বালিকা ইশকুলে!
তুমিও জানো অন্ধরাতে কেন
বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঝড়…
মৃতনদী কিসের নেশায় জাগে
কিসের ছোঁয়ায় কেঁপেছি থরথর
ভাঙল আকাশ যখন বুকের বামে
তখন কেন ঠোঁটের কাঁপন তুলে
আকাশভরা চৈত্রমাসের রোদ—
উড়িয়ে দিলে খোঁপার বাঁধন খুলে!
জ্বর
মেঘের সন্ত্রাসে কাঁপে জ্বরগ্রস্ত চাঁদ
সন্ধ্যার হাওয়ারা ভাসে
জোনাকির পাখার আওয়াজে
ওইখানে আলো জ্বলে
ওইখানে নামে প্রেম শ্রাবণের মেঘে
বাড়ে রাত, ক্ষয়ে আসে রাত্রিরাও
আমাদের স্বপ্ন তবু শরীরে শরীরে
বলেছি: দূরে দাঁড়াও
এসেছ নিকটে তবু
তুমি যদি প্রেমে-কামে কাঁপো থরথর
আমিও তৃষ্ণার্ত আজ কামনা কাতর!
জন্মসূত্রে আমি তোর প্রেমিক ছিলাম
জন্মসূত্রে আমি তোর প্রেমিক ছিলাম
এই কথা কেন তুই রাষ্ট্র করে দিলি?
দিলি যখন, তখন কেন
ও মেয়ে মেঘের সখী, বৃষ্টি ধোয়া মুখ
অন্ধকারে আবার তুই আড়াল করে নিলি?
প্রেম যদি ফাঁস হলো, আয় তবে তুই
আয় তবে জল হয়ে, আমি তৃষাতুর
আকাশ কেঁদে উঠুক মেঘের বিচ্ছেদে
তুই-আমি ডুব দেব নিকষ-আন্ধারে।
আমি প্রেমিক, আমিই খুনি
এখন তুমি গভীর ঘুমে; হয়তো তুমি ঘুমের ঘোরে
দেখছ কোনো মধুর স্বপন এখন
হয়তো বা কেউ ঘুমের দেশে তোমার ঠোঁটের পরে
দিচ্ছে এঁকে গভীর কোনো চুমো
এমনতর দৃশ্যআমি সহ্য করে যাব?
হয়তো বা না। হয়তো বা না বলছি কেন আবার?
এমন কঠিন দৃশ্য আমি সহ্য করার মতো
সাধুসন্ত হইনি জেনে রেখো
স্বপ্নে তুমি আমি ছাড়া অন্য কারও বুকে
মুখ লুকিয়ে নিবিড় হয়ে আছ…
এমন দৃশ্য দেখার পরই আমি হব খুনি
নিত্যদিনের কঠিন সত্য জেনে রেখো তুমি
তোমার মধুর স্বপন দেশেও আমি
তোমার ঠোঁটে এঁকে দেব অসভ্য চুম্বন
আমিই তোমার অসভ্য আর আমিই হব প্রেমী।
নিশাচর রাশির জাতক
রাত্রি যত বুড়ো হয়, তত জাগে নিশাচর রাশির জাতক
সম্ভ্রান্ত আন্ধারে দেখে উড়ে যায় ডানাঅলা হাঙর-কুমির
কপালে সিঁদুর মেখে যে নারী দেখায় সুখ চিকন সিঁথির
তার লগে কথা কই নিশিজাগা কোনো এক নাদান-রীতির।
এইভাবে চুপচাপ চলে যায়, দিনরাত, সপ্তাহ ও মাস
গর্দানের তেজ নিয়ে যেমন গর্জন করে গাঢ়ো লাল ষাড়
তেমনই একরোখা নির্ঘুম রাত্রিকে বলি: আমিও ভয়াল
আমারে ডরাও যদি, আমি দেব শর্তহীন প্রেমের করাল!
আহারে বেকুব রাত্রি! ভয় তো পেলো না মোটে, পরন্তু ক্ষেপিল
কেড়ে নিলো বাকি ঘুম। নিভে গেলে তারাগুলো সোনার বরণ—
আমাকে দেখায় ভয়, আমি যেন দূরাগত বেকুব পথিক!
ভুলেছি নিজের নাম, গ্রামের ঠিকুজি আর রসের মরণ!
আয় তবে তন্দ্রাহীন—আয় এই নাদানের বুকের গহিনে
কেমনে মিটাবি তৃষ্ণা আদিগন্ত প্রেমহীনে শরাব বিহনে?