অনঙ্গ কলার পর্বত
ঘাসের মহল পেরিয়ে একটি দিকের সঙ্গে কথা হতে পারে আজ।
হয়তো এ পথেই আছে। মাটির গোপনে থাকে সুরের নির্যাস।
নিবিড় খুঁড়েছে যে স্বরবিতান—তার আনন্দ হয়েছে কান্নায়।
কদম কদম প্রান্তরের দূরে
যদি আরেকবার খুঁজে পাই নাচের গালিচা
তিরতির মুদ্রার কাল ছুঁয়ে যাবে অনঙ্গ কলার পর্বত।
ডালিমফুল, রূপগন্ধময় পরিবেদনা
নিষিক্ত দিনে বিরহপাতায় পাখিবাসনা লিখে রাখো। আর
দূরের চোখে গুনে রাখো পতঙ্গপ্রমাদ। কেবল পাখিরাই
পায়ে নিয়ে উড়ে যায় পরাগের রমণ ব্যাপার।
যদিও ঘুড়িদিনে উড়তে সমতলে বাগান লাগে না।
পিপাসার ঘর এলিয়ে দিয়েছি দিকহীন বাতাসের ছলনায়।
বৃক্ষের ডালে ফুটে আছে ফল—সুষমা ও কাঁটায়।
তোমারও এ রকম হরেক ফল আছে—আছে জামরুল ফলের
বাগান। ফলের সুষমা নিয়ে যে কথা বলে সে আছে গভীর সংকটে।
অক্ষিগোলকের ভেতর—হৃদহল্লার ভেতর মুদ্রারা ছুটে যাচ্ছে।
যেতে যেতে সম্মুখ—আর পেছনে সব মহুয়া মুদ্রা।
ক্ষণিক পেরিয়ে গেলেই আঘ্রাণ। গ্রীষ্ম ও সুবাতাস।
নাদান সময়ের পথে সে এলানো বকুল—সন্ধির ঘোর পরিতাপ।
দ্যোতনার পাত্রে ডুবে যাচ্ছে চোখ—নিজস্ব শপথ।
কোনো নিশানা না নিয়েই হেঁটে যাচ্ছি চোখের ওপার।
হতে পারে মানুষের মুখের দিকে আমার কোনো
কথা থাকে না। হতে পারে আমার আছে নিজস্ব লণ্ঠন।
বহুবিধ কাতর দিনে লালপাতায় ভ্রমর আঁকি—ঘাস পড়ি।
নিজস্ব গরাদে আটকে গেলে ভাবি, দলগত প্রমাদে যাবো না।
আতশ আলোর অরণ্যে কখনো জোনাকি আসে না।
দুই হাতে লবণাক্ত মাঠের অভিজ্ঞান—
দুই হাতে সুস্পষ্ট দরিয়ানগরের খাদ।
অরুণ অবগাহন শেষে হলুদ হুইসেল আসে।
বৃক্ষের ডালে ফুটে থাকে শোকফুল—
সবুজ ছায়ার দেশে নেমে আসে ঘোর।
তার রঙ কালো। কালো নয়—তার নাম গুঞ্জরণ।
ফুঁয়ে ফুঁয়ে ডালিমফুলের দিকে ছড়িয়ে দেয় হিম।
যে সুরে গান হওয়ার কথা সে পথে আঁকা বিরহঘূর্ণি—
ফাঁদপাতা ।
বিদারক কাঙ্ক্ষারা ঝুলে আছে শিমুলফলের রঙে।
নিষিক্ত দিনে তেঁতুলপাতার সুরে গৃহবাসনা আসে।
প্রপাতের সুরে তাকে ফড়িং ভেবে ডাকি। সে লক্ষ ঘাসের সুদূর।
চরাঞ্চলে মেলে রেখেছে ছায়া। একবারও বাঁশি নেই, শিস নেই—
অনিবার্য নীলে ঘেরা অভিমুখে—ফড়িং চলে গেছে দূরে।
ডালিমফুল, এক প্রসন্ন পরিবেদনা। সুগন্ধি ফেনার জাদু!
এখন যেকোনো শিরা বেয়ে নেচে যেতে পারে সেও। মৃত্যুতেও।
চন্দ্রের মতো মোলায়েম
এখন হীনম্মন্যতাই হিন্দোল—প্রলুব্ধ করে আছে মন।
এ অবধারিত কালে
পড়ে থাক ফটফটে পৃথিবীর ছায়া। অস্বচ্ছ আয়নার
ভেতর দিয়ে মেলানো গেলো না আর।
অবগলনের কত বাকি? মাছি ও মৎস্যের লুটোপুটি।
কারা জেগে থাকে? কে অধিক? বিলুপ্ত আঁচলের
গায়ে শেষ প্রস্তাব তুলে রাখি।
আর কোনো মুদ্রা নেই—বিধুর ছায়া
তারপর যেতে যেতে সম্মুখ। উদ্ধত সবুজ মেখে
প্রান্তরের হল্লা। আর পেছনে সব রক্ত—
রাতের তরবারি—সারি সারি।
কোথাও চোখ দেখতে চেয়ে কেউ ঢুকে গেছে
হৃদ হল্লার ভেতর—অক্ষিগোলকের ভেতর।
ঠিক সকালের আগে
অন্য দেশে চলে গেছে তন্দ্রারা।
পেছনে দীর্ঘ কামনা—ফেরারি উপাখ্যান
ফুলের পাপড়ির মতো মোহ চলে আসে।
চন্দ্রের মতো মোলায়েম সব কথা—
এখন টুপ করে বসে পড়া ভালো।
এ শরীর শিশির
দিকে দিকে আপেলকূল, ঋতুচক্রে দেখা হলো মাঘের শিশির
ক্রমশ স্ফীত হচ্ছে কুয়াশার জাল, তোমার গমনাগমন।
এটুকু বাকি ছিল—না মিশ্রিত বাক্যের ভেতর লুকিয়ে ছিল
ফুলেল পরাগ। ভালো—এই বিরহঘূর্ণি আজ স্পষ্ট হলো।
এ শরীর শিশির, মুঠোতে শিশিরবিন্দু, বিরামহীন শীতের প্রান্তর
পথে ছিল ঘোড়া। কল্কে ও আবেশ। পথে ছিল চুল্লির মিছিল।
হৃদয় সুষুম্না হলে বেঁকে গেলাম চৈত্রের দিকে
শূন্যতা—পানিশূন্যতা সকল শুষ্কতাই পেলো বিপুল ওম
না ফোঁটা দৈর্ঘ্যের ভেতর ফুটে উঠল দুজনের উষ্ণকীর্তন।
ব্যর্থ অনুচ্ছেদ
আর কোনো শব্দ গেঁথে না নেই।
তুমুল হর্ষ, বিন্যাস, কোনো ভরাটব্যঞ্জনা।
বিফল পত্রের পাশে সাতাশ বছর—অনুচ্ছেদ।
কতটুকু জানো—
কতটুকু জানা হয় নাই
দিন ও দুপুর, নিম ও মধুর,
ঠিক-ভুল—
এ কেবল মন্দ বিকশিত।