অচেনা আগন্তুক
মাঝরাতে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে
উড়ে গেছে একটা উড়োজাহাজ
না কি আবাবিল পাখি?
ঘুম ভেঙে যায় রাতের শেষ প্রহরে
ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার শোশো শব্দে,
শব্দ নয়, যেন কোনো দেবশিশুর আর্তনাদ
পশলা পশলা রক্ত বরফের শিলাবৃষ্টি,
উড়োজাহাজের রক্ত-মাংস থাকে না,
ধর্মগ্রন্থ থেকে কি উঠে এসেছিল
কৃষ্ণপক্ষের শেষ প্রহরে ভুল পথে
কোন থুত্থুরে বুড়ো ধর্ম যাজক?
অথবা কোন এক আবাবিল পাখি?
না কি ক্রুশবিদ্ধ ঈসা?
ফোঁটায় ফোঁটায় অদৃশ্য নীল, সাদা, কালো
রক্তের বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে জাত-ধর্ম-গোত্রের
ভেদবিহীন শিশুরা।
ঘুম ঘোরে টের পায় জীবন্মৃত আত্মারা
উড়োজাহাজ কিংবা আবাবিল পাখিটা
সভ্যতা ধ্বংসের আভাস পেয়ে
চলে যাচ্ছে আরেক পৃথিবীতে।
শুধু মৃত্যু দেখি
কত দিন হলো আকাশ কথা বলছে না
খুব অভিমান জমে আছে বুকের ভেতর
ওর মেঘগুলো রকেট আর উড়োজাহাজ ভেঙে ভেঙে
চলে গেছে মানুষ বোঝাই করে
চুপিচুপি একদিন বলেছিল কানে কানে
উড়োজাহাজ নয় ময়ূরপঙ্খী নাও নিয়ে এসো বালিকা
আমি তোমায় রঙধনু এনে দেবো,
আকাশকে ময়ূরপঙ্খী নাও আর দেইনি আমরা,
সবাই ভুলে গেছিলাম
আকাশের তাই আজ বড্ড অভিমান…
পৃথিবীর অসুখেও ও কাঁদছে না।
কতদিন আকাশে রঙধনু দেখি না শুধু মানুষের মৃত্যু দেখি।
একটা নাকফুল
ঋতুবতী চাঁদ ঝুলে আছে
এখনো প্রদীপ জ্বলে দাওয়ায়
তুলসীগাছটা শুকিয়ে যেতে যেতে
আবার বেঁচে ওঠে বরাবরের মতোই
কতদিন কতদিন হয়ে গেছে তবু
খুলে রাখিনি, ঝুলে আছে বাদুরডানার মতো
মনে আছে, আমিই চেয়ে নিয়েছিলাম
আমার একটুকরো সুখ, এতটুকু অভিমান
সবকিছু লুকিয়ে আছে, লুকিয়ে ছিল
ভাঁজে ভাঁজে রাখা শাড়ি আর ব্লাউজের
মাঝে রাখা ছিল তোমার পুজোর জপমালা
শূন্য রাস্তায় অশরীরীর মতো চলতে চলতে
টের পাই তুমি আজ বড় একা হয়ে গেছ
আকাশ ঝুলে থাকা চাঁদের মতো ঝুলে
থাকে হারিয়ে যাওয়া একটা নাকফুল।
আরও পড়তে পারেন: রফিক আজাদ: রূপসী শব্দের জাদুকর ॥ দিলারা হাফিজ