অকৃত্রিম বন্দনা
বিষণ্ন ক্ষুধা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে শহরময়
কেউ কি আছ নাকি আশেপাশে?
ধারে কাছে? খোলা হাত নিয়ে।
শান দেওয়া কাস্তে নিয়ে যাবে নাকি ফসল কাটতে?
কোনো ফসল ফলবে না মাঠে।
শব যাত্রার শেষ কুম্বিরাশ্রু।
ফসল হবে না আর ক্ষেতে।
খাবার তৈরি হবে সরাসরি কারখানাতে।
কৃষকের হাত কুজো হয়ে যাবে।
লাঙল পাবে বেকারত্বের ঘোর
অভিশাপ। হয়তা বা অভিসার।
কে জানে। কৃষকের গোপন খবর।
লাঙলের সাথে মাটির সংগম শেষে
চুষে নেবে বীজপত্র শিশিরের বীর্য।
স্তনের মতো উচু হয়ে থাকা মাটির ঢেলায়
আর কোনোদিন নিষ্পেষণ হবে না।
জাঁতাকল আর ঘানি টানবে না,
টানবে না। টানবে না।
খাবার তৈরি হবে কলে কারখানায়, কিংবা ফ্যাক্টরিতে।
কখনো প্রসেসড, কখনো কুকড, কখনো কৌটজাত,
কখনো প্লাস্টিকে মোড়ানো।
খাবার তৈরি হচ্ছে,
অন্নের কষ্টে মানুষ ভুখা মারা যাবে না।
শরীর যেখানেই স্তম্ভের মতো হেলান দিক না কেন
মানুষ ভুখা মারা যাবে না।
সর্বশেষ এই বিশ্বাস নিয়ে যাও,
ঘরে গিয়ে খালি পেটে লেকচার ও আদেশ চেপে ঘুমিয়ে পড়ো।
কথা হবে, আলোচনা হবে, নতুন ফরমুলা হবে।
মোট কথা তুমি মারা যাচ্ছ না।
কেন যাচ্ছ না?
আমাকে জবাবদিহি করতে হবে এই তোমার কাছে?
ফলাফল হলাহল ভরা
চায়নি তো
চায়নি তো কোনো কিছু বেশি
বেহুদা ভাগাভাগি আশি কিংবা ছিয়াশী
চায়নি তো চারিদিকে ছদ্মবেশী
স্রোতে ভেসে যাওয়া লাশের কারিতাশি।
চায়নি তো সুখ-দুঃখের অংশীদার
চেয়েছে প্রাণ খুলে হাসবার অধিকার
চায়নি দেখতে সে কাউকে অভাগী
তবু দেখা দেয় সহস্র গাজন দাগী ।
চায়নি তো কলতলা জলে ভেজা
অকারণ উপদ্রব আর মিথ্যা সাজা
চায়নি ডালের সাথে সজনে ডাঁটা
ভোরের আলোর সাথে সমাজ কাঁটা।
চায়নি তো রোজ সকালে মাংস রুটি, আম
আলুর দমের সাথে শিম চুরির বদনাম
চায়নি তো দামি মাইক্রোফোন আর উঁচু মঞ্চ
কুরুকাব্য ক্ষেত্র আর আক্রোশের বিষমালঞ্চ
চেয়েছে,
চেয়েছে সবটুকু তার নিজস্ব, ব্যক্তিগত
থাকুক আপন ভুবনে
চেয়েছে
অভ্যেস ছিল না
ফলাফল হলাহল ভরা
অভ্যেস ছিল না বাজারে দরাদরি করা
অভ্যেস ছিল না মাটির ঢিবিতে স্বপ্ন গোঁজা
অভ্যেস ছিল না যার-তার ঘরে ঢোকা
নিংড়ে না খেয়ে প্লেটের শেষ তলানি
ভাগ করে নিত সব কিছু চাল, ডাল, চা, পানি—
পথের শেষে
পথের শেষে নতুন পথ জোড়াবার
দাবি; খুব বেশি ছিল ভারী
বহুদিনের অনাহারী
অবশেষে পেয়েছে শেষ উপহার
মৃত্যুর শীতল হাত আর
পাললিক শিলায় গভীর অন্ধকার।
পাললিক ভালোবাসা
মেধাস্বত্ব আইন
যে স্কাল্পচার এঁকেছি কাল রাতে সাবলীল
টাট্টু ঘোড়া গোড়ালিতে মেখেছি কাজল
আলোর টিউবে সারা রাত লাল আর নীল
ঘুম ধুম বিজ্ঞাপন সারাক্ষণ পায়ে বাজে মল
কোনটা মানুষ কোনটা রোবট চেনা বড় দায়
নারীদের ঘরে ঘরে যৌনতার উন্মাদনা চলে
এ কবিতা শিল্প যেন খুঁজে ফেরে অনন্য উপায়
ভিনদেশি সমঝোতা মেধাস্বত্ব অন্যের দখলে।
খেলায় মেতেছি আজ অনুপম খোলা বারান্দায়
একুশ শতক জুড়ে নামে বেখেয়ালি মানুষের ঢল
অভিন্ন সাহিত্যে চলে কূটচাল বিষম ধান্দায়
জীবনের প্রাত্যহিক বর্ণনায় থাকে অবিচল।
ব্রাগুলো বর্ণিল ঝুলে থাকে আকাশের গায়
যেমন ঝুলন্ত চাঁদ কখনো বা নিজেকে হারায়।