হৈমন্তীর চিতা
এত সুন্দর করে
মানুষ হাসতে পারে?
একটা কৃত্রিম
মুক্তোর হাসি।
চোখে একবিন্দু
মায়া নেই,
ঠোঁটে লাস্যরূপ নেই,
একটা পিশাচের হাসি,
ভয়ঙ্করকেও এলোমেলো
করে দেয়।
আগে ও মনমরা ছিল
কথা ভগ্ন ছিল,
তবু কথায় আর্দ্রতা ছিল,
গন্ধ ছিল কথার,
আমি দিব্যি কথার গন্ধ নিতাম,
তিলোত্তমার গন্ধ!
আজ ওর কণ্ঠ,
রক্তশীতল নদীর মতো,
আচ্ছা
রক্ত তো টগবগে গরম,
রক্তশীতল কিভাবে তাহলে?
একসময়,
সিলেটের সুরমাকে ভালোবাসতাম,
আজকাল স্রেফ
ঘেন্না করি,
শশ্মানের গরম
বাতাসের মতো!
এক সময় ভাবতাম,
প্রেম বলে কিছু নেই;
যেটা আছে সেটা পাশবিক চেতনা,
সেটা কাম!
অথচ, আজ যখন
তুমি দিব্যি তার গল্প
বলে গেলে,
তুমি বললে,
তার হাসি কত সুন্দর,
তার কণ্ঠ কতটা শীতল প্রাণ;
তারপর
কী যেন একটা হলো,
মনে হলো,
আমি মিথ্যে,
প্রেম অবিনশ্বর,
কাম নিশ্বর।
আধো চাঁদ রাত,
হৈমন্তী আজ মৃত;
কনেদেখা আলোয়
কেবলি তার অগ্নিমুখ দিলাম!
হৈমন্তী আজ
চিতায় পুড়ছে,
পুড়ুক!
আহ! কী গভীর সুখ
কী মায়া ঘুম!
শৈলীর তুলি
খুব গভীর এক মেঘের রাতে
এক নির্জন দ্বীপে
ঝরে পড়ছিল–
এক রাশ মিয়া কি মালহার!
আমি চাচ্ছিলাম–
মেঘ থেকে বৃষ্টি নয়
এক শৈলী এসে
ছুঁয়ে দিক আমায়;
আমায় ছোঁবে আর
নতুন নতুন রঙে আঁকবে।
এক এক তুলির আঁচড়ে
এক এক এসরাজের সুর!
নরম নরম ঘাস আজ সিক্ত হবে
বর্ষা আর
শৈলীর আর্দ্রতায়।
ক্ষণিক বাদেই
মেঘ ছিটিয়ে দিল
এক রাশ শিলাবৃষ্টি–
যেন মৃদু আঁচে
প্রেমিকার রান্না।
অশান্ত হৃদয়ে জমা হচ্ছে
ফোঁটায় ফোঁটায় শিলা–
আর বর্ষা খুলে দিচ্ছে
জমাট সব প্রণালী।
দ্বীপের একটা বুনো ঝোপ
থেকে ছুটে গেল এক হরিণী;
একটা রাত জাগা পাখি
উড়ে এসে বসলো আমার কাঁধে।
এই পাখির চোখের তারায়
আমার চোখ–
রাত পাখির কাজলগলা চোখ
আর
শিমুল তুলোর মতো
অঝোর শিলাবৃষ্টি!
তুরস্কের হুর
আমি তোমাকে এতগুলো দিন অনুভব করি
অথচ তোমাকে গভীরভাবে কখনো দেখিনি;
পারস্যের রূপকথার গালিচা
আর তুমি নারী।
গভীর কাজলগলা চোখ
আঙুরমাখা চিবুক;
আর বর্ষার চাদরে
তুমি নারী।
সবুজ সবুজ ঘাস
এমন নরম নরম ঘাসে
এক তুরস্কের হুরের
কোমল শারাবী পা।
আমি আঁকছি, আরও গভীরে
দূর গভীরে,
একটা নূর ছুটে আসছে,
বুকের আরও দূর গভীরে।
প্রাচীন এসরাজের সুর
আমার সামনে,
এসরাজ পড়তে আছে
আমাকে!
আরও পড়ুন: নির্বাচিত নবীনের কবিতা