হেমন্ত চলে গেলে
প্রিয়তমা সুন্দর…সবুজ ও সোনালি রঙে!
প্রতি বছর হেমন্ত চলে গেলে
আবারও অপেক্ষা করি তার ফিরে আসার জন্য।
হেমন্তের মাঠ প্রিয়তমার মতো একটা জীবন যেন
কী সবুজ দিয়ে শুরু হয়; আর সোনালি সমাপ্তি যার।
প্রিয়তমা সুন্দর…সবুজ ও সোনালি রঙে!
প্রিয়তমার জন্ম থেকে যৌবনপূর্ব, জানে না প্রেমিক।
বর্ষাতে জন্ম শরতে বেড়ে ওঠা অতপর যৌবনা।
তারপর, প্রেমিকের প্রেমিকাকে জানা।
হেমন্তের শুরুতেই যৌবনবতী হয় আমাদের মাঠ,
বাতাসের মিলনে গর্ভে গর্ভে জন্ম দেয় সুন্দর!
সুন্দর চেয়ে থাকে অমোঘ ভালোবাসার আকাশে।
গর্ভবতী প্রিয়তমাও এই মাঠের মতোই
পবিত্র মুখে চেয়ে থাকে প্রেমিকের পানে
প্রিয়তমা অভিজ্ঞতায়, পূর্ণতায়, ভালোবাসায়
সবুজ থেকে সোনারঙ হয় হেমন্ত শেষে!
এরপর,
প্রিয়তমা আবারও বর্ষা হয়ে বসন্তে ফিরে আসে জনমে জনমে
আমিও অপেক্ষার ডালা সাজাই হেমন্তের কালে।
গর্ভের পবিত্র রঙে নত হই
আমাদের মায়েরা তাদের গর্ব করা গর্ভে যেমন নত হয়;
এই মানবেরা তাদের জ্ঞান সঞ্চয়ে সঞ্চয়ে যেমন নত হয়;
বরেন্দ্রঋষি নরোত্তম দাস মানবিক ধর্ম নিয়ে
মানুষের ভালোবাসায়, আকুতিতে যেমন নত হয়েছিলেন;
তেমনই নত আজ বরেন্দ্রের হেমন্তের মাঠ, গর্ভের গরবে।
বরেন্দ্রের প্রান্তরে প্রান্তরে দিগন্তজুড়ে হাসছে হেমন্তের মাঠ
আকাশ নীলের বিশালতায় এ কোন ঐশ্বরিক খেলা!
ধান পাকতে পাকতে ধানগাছগুলো তার গর্ভভরা ধানে
পবিত্রতায় নত হচ্ছে, আর আমাদেরকে আশ্বস্ত করছে!
আমি এমন প্রান্তরের পথ ভ্রমণে মুগ্ধ হয়ে চোখ জুড়াই।
এমন দৃশ্য আমাদের ক্ষুধা নিবারণে স্বপ্ন দেখায়,
স্বপ্ন দেখে দেখে ক্ষুধা ভুলে আমরা শুধু বুকটান করে দাঁড়াই
নত হতে শিখি না।
শিরদাঁড়ায় সঞ্চিত করি না কোনো সেরিব্রো ফ্লুইড,
নত হতেও শিরদাঁড়ার শক্তি বড় প্রয়োজন।
হেমন্তের বরেন্দ্র প্রান্তর, গর্ভের পবিত্র রঙে কী উজাড় করা সুন্দর!
হেমন্তের শূন্যতায়
এবারও সরিষার মাঠ ফিকে হয়ে আসছে
আমাকে ডাকেনি কেউ মায়াবিনী হলুদের পাশে
আজ ছিল ভরা পূর্ণিমা
ভরা ছিল জোছনায় মায়া
ঘরে আছি বসে অন্ধ নীরবতায়
জোছনাও ডাকেনি সরিষার মাঠে
কী জানি কোনো পেঁচা হয়তো বসে আছে ছাতিমের ডালে?
আমি না হয় সকালের রোদমেখে জেনে নেবো তা, পৌষের কালে
যদি জোছনার আহ্লাদে জলের স্রোতে জাগে টোলের মায়া
তবে এইরাত রূপবতী হবে।
রূপবতী ডাকে না আমাকে; তাই
দিন শেষে আমি ফিকে হয়ে থাকি, হেমন্তের নিঃসীম মাঠের মতো…