নদীর নাম বিপুল চাকমা
বিপুল চাকমা এক বারুদের নাম—
যখন বুটের মচমচ আওয়াজ কাঁপন তোলে পাহাড়ি জমিনে
প্রাণঘাতি রাইফেলের আক্রোশে থরথর গাছের পাতা, মায়ের আঁচল
পাখিরা ঘুমিয়ে যায় ভয়ে!
তখন বিপুল চাকমাদের স্লোগান ভেসে আসে দুর্নিবার সাহসে।
হাতকড়ায় বন্দি কবজি, ডান্ডাবেড়িতে আড়ষ্ঠ পা
তবুও তাদের পায়ে পায়ে বেজে ওঠে মুক্তির গান
দৃপ্ত শপথে এগিয়ে আসে বিপুল চাকমারা।
জেগে ওঠে পাহাড়ের মাটি, হাওয়ায় ভাসে জুম ফসলের ঘ্রাণ
স্লোগান ওঠে পাহাড়ে পাহাড়ে
স্লোগান ওঠে জঙ্গল থেকে জঙ্গলে
অধিকার চাই বুকের সিনা টানটান করে দাঁড়াবার।
অধিকার চাই সোনার ফসল ফলাবার।
বিপুল চাকমা বুলেটের সামনে দাঁড়ানো দুর্নিবার স্পর্ধার নাম।
ঘাতক রাইফেলের সামনে দাঁড়ানো তেজের নাম;
অগুনতি জুম মায়ের হাসির নাম বিপুল চাকমা
আকাশে উড়ে বেড়ানো লাল পাখির নাম বিপুল চাকমা।
আলো নিভু নিভু, রোগে ভোগা মায়ের কোল থেকে
টেনেহিঁচড়ে গারদে নেওয়া নাম বিপুল চাকমা
বিপুল চাকমা পাহাড়ি ঘরে জন্ম নেওয়া ফিনিক্স পাখির নাম
কেড়ে নিতে দেবে না জুম ফসল, ফসলের গোলা
লুট হবে দেবে না মায়ের জমিন, ফিনফিনে আঁচল
বিপুল চাকমা দ্রোহের গান, এক বজ্রধ্বনির নাম।
বুটের মচমচ আওয়াজ নয়, পাহাড়ে পাহাড়ে ফুটুক
জংলি ঝুমকো লতা, পরশ পিপুল
বিপুল চাকমা নদীর কিনারে
গোপনে মাথা তুলে দাঁড়ানো দাঁতরঙা ফুলের নাম!
মায়ের কফিন ছুঁয়ে স্লোগানের নাম বিপুল চাকমা
বুক ভেদ করে ঢুকে পড়া বুলেটের ঘা বিপুল চাকমা
তাজা রক্ত ফিনকি দিয়ে পড়ে বুটের গায়ে, বন্দুকের নলে নলে
বিপুল চাকমা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা নদীর নাম!
হারানো পাখিরা
পথের কিনারে, ছিল না পরশ
আঁধার চোখেই ব্যথার কাঁদন
গুমরে মরেছে সকাল-বিকাল।
প্রেমের আশায় পথের ঠিকানা
বসেছি ভুলেই নীরব যাতনে
কোথায় কোথায় ব্যথার কাঁদন
বুঝেছি আমিই খুবই গভীরে।
নদীর দু’কূলে ভেসেছে শুধুই
হারিয়ে কথারা আমার মতন
খুঁজছি আমিই হারানো পথই।
হাসুক পাখিরা তাদের মতন
নীড়ের খোঁজেই এবার আসুক
পাখিই ফিরুক পাখির ঘরেই
ফুলের বাগানে বসুক খুশিতে।
ছেড়েছে বসত পাখিরা আমার
ঘুরছি ফিরছি একলা আমিই
বুকের গভীরে ঘুমিয়ে আশারা
দিয়েছে জানিয়ে হারানো খবর।
জল্লাদ মিসাইল
এ যুদ্ধ, এ সর্বনাশ-প্রতিদিন দখলে নিচ্ছো নতুন ভূমি
মুঠোয় নিচ্ছো দূর্বাঘাস, প্রজাপতির রঙিন ডানা
দখলে নিচ্ছো নদী, জাগিয়ে দিচ্ছ ঘোরতর অসুখ।
ভেঙে দিচ্ছো ফুলবাগান, আরাধনার মণ্ডপ
তুমি শুকিয়ে দিচ্ছো মানুষের আকাঙ্ক্ষার নদী।
জল্লাদ মিসাইল দেখো, শুকিয়ে যাচ্ছে জলের সরোবর
নিমিষেই শুকিয়ে যাচ্ছে পাপহীন কালো চোখ।
জল্লাদ মিসাইল, তুমি ছেড়ে যাচ্ছ লোকালয়;
ভুলে যাচ্ছ শহরের কারুকাজ
দূর কুয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে তোমার ক্ষিপ্র মুখ।
মিলিয়ে যাচ্ছে আমার অসুখের মগ্নতা।
কুয়াশার ওপার ভূগোলে সুতাকাটা ঘুড়ির মতো
ছুটে যাচ্ছ নতুন নক্ষত্রের পানে।
সুপারসনিক মিসাইল কেড়ে নিচ্ছ
শপিং মলের ঝলমল আলোর বাহার
সবুজ উদ্যান, ব্যালকনির ব্যাকুলতা
জাগিয়ে দিচ্ছ জোসনা রাতে খোলা জানালার হাহাকার।
সুপারসনিক জল্লাদ মিসাইল-তুমি উড়ছো;
শব্দের মিছিল ডিঙিয়ে উড়ে যাচ্ছ তেপান্তরে।
মিসাইল ভেঙে দিচ্ছে সাজানো বাগান
গুঁড়িয়ে নিচ্ছে বুকের পাঁজর
পবিত্র জমিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃত
হাড়ের নিঃশব্দ ঘুম দেখো;
তুমি কি ভুলে যাচ্ছ আহত পাজরের দীর্ঘ রোদন?
মানুষের রক্তস্রোতে রঙিন তোমার কায়া
জল্লাদ মিসাইল দেখো, ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছি বহুকাল।
তুমি থামিয়ে দাও অসুখি যুদ্ধের ভয়ানক প্রতিশোধ।