কবিতার ভূখণ্ড
এতটা মুগ্ধতা ঈশ্বরেও কখনো ছিল কি না কারও জানি না
ধ্যানী সন্ন্যাসীর দু’চোখ কী খুঁজে অরণ্যে গল্প লেখে জীবনের
তাও জানি না—কোন বুনো ঝড়ে মধ্যরাত
কাঁচের চুড়ির মতো ভেঙে পড়ে বুঝিনি সে হিসেবেও
অসংখ্য প্রশ্ন জলের স্রোতের মতো ঢেউ খেলে যায়।
এতটা সুন্দর কী করে শরীরে জড়ানো থাকে—
হীরকদ্যুতিতে যে রমণী নিজেকে উজ্জ্বলতর করে—
যে নারী খোঁপার গোলাপে নিজেকে পুষ্পকন্যা সেজে
পুষ্পের মতো নিজেকে ভাবে—যে নারী শেখেনি কখনো
চুম্বনে বুভুক্ষু সমুদ্র বুকে স্বরলিপি সমর্পিতা হতে—
অথচ কী এক মনভরা সুর তাকে বেঁধে রাখে মুগ্ধতার মন্দিরে
তুমি যেন তখন এক ঈশ^র হয়ে ওঠো সুন্দরের অধিক সুন্দর
ঈশ্বরে কখনো দেইনি পুজোর অর্ঘ্য আমি—
লাল গোলাপ কখনো দেখিনি প্রিয়ার খোঁপার ফুল করে—
নদীর উপচে পড়া যৌবনে কখনো খুঁজিনি
রোদ্দুরের মতো শাণিত নারীর যৌবন—
যে পথ চলে গেছে জীবনের মতো এঁকেবেঁকে—
খুঁজিনি সে-পথও-নদীতিকা শান্তস্রোতে যে বালিভূমি
ক্ষয়ে গেছে যৌবনের মতো—ভাবিনি কবিতার নিশি শব্দে
কিভাবে ক্ষয়ে গেছে রামধনু সাধের মেঘলা তরী
তুমি যখন এলে ঈশ্বরের অদৃশ্য রূপ যেন দেখে ফেলি
হিসেবের কড়ি নতুন করে অঙ্ক হয়ে ওঠে—
ভুল অঙ্কে কড়িগুলো ভেসে যায় বেদনার লোনা জলে—
জীবনের হিসাব এ যেন নদীতে ভাসা প্রাণহীন এক
বেহুলা সুন্দরী—সেও বেঁচে উঠতো—যদি তার চোখে
বিদ্ধ হতো তোমার গভীরতম সৌন্দর্যরশ্মি
ঈশ্বর তোমাকে পুজো করে—তোমার চেয়ে সুন্দর জন্মেনি
কোনোদিন এই কবিতার ভূখণ্ডে
তোমার ঘুমভাঙা কণ্ঠঢেউ ঈশ্বরের অধিক ঈশ্বর—
তোমাকেই ঈশ্বর মানি—তোমার কাছে সকল প্রার্থনা
উর্বর ভূমি সবুজ জলের গৌরী নদী নিখাদ নিঃশ্বাস
এই কবিতাটি আপনাকে দেবো
আমি এক নারীকে বললাম—আপনাকে চমকে দিতে পারি
আরো বললাম—যা আপনাকে দেয়নি কেউ কোনোদিন
তিনি তাকালেন বিস্ময়ে দু’চোখে আমার
বললেন—কী আছে আপনার—রাজরানির মতো জীবন আমার
অপূর্ণতার কোনো শব্দ নেই
আমি তার দিকে তাকালাম—তার দু’চোখে রাতের তারার মতো
জ্বলছে অসংখ্য প্রশ্ন—লোকটি কী বলে
বললাম তাকে—দামি গাড়ি রাজকীয় ফ্ল্যাট আভিজাত্য
শরীরভর্তি হীরে জহরতের সুখ—এসবের কিছুই নয়
আমি যা দেব তা আপনার নেই—এবং সেটি সবচেয়ে দামি
তিনি হাসলেন—সে হাসিতে কোনো প্রাণের স্পর্শ নেই
শুকনো নদী যেভাবে ওড়ে বালুঝড়ে—তার হাসি মনে হলো
দূর কোন নগরে লুকোচ্ছে পরাণের গহিন বেদনায়
আমি বললাম নেবেন—
নারীটি এবার শ্বান্ত নদীর মতো আমার দিকে তাকায়
বললেন—বলুন তো কী আছে আপনার? যা আমার নেই
আমি তো সুখি নদীর মতো বহমান
তিনি আরও বললেন—বিকেলের সোনাভরা রোদে প্রতিদিন
আমি যখন ময়ূরীর মতো সৌন্দর্য ছড়িয়ে দাঁড়াই
আমার একান্ত পুরুষ রাজপুত্রের মতো মুগ্ধতায় আমাকে
সমুদ্রস্নানে ডুবিয়ে সুখের উৎসবের গল্প রামধনুতে মাখে
তিনি এবার তীর্যক সৌন্দর্যের তীর ছুড়ে বললেন—
আপনি আমাকে যা দিতে চান—না জানলেও আমি
বলে দিতে পারি আমার দেবার মতো আপনার কিছুই নেই
আমি বললাম তাকে—হয়তো তাই—তবুও বলি
আপনাকে দেব একটি সাধারণ কবিতা আমার
বহুরাত জেগে যে কবিতার শব্দে ছন্দে গেঁথেছি
আপনার রূপশ্রী নদীর সব ঢেউ স্রোত সংগীত গহিনের আলো
আপনি নিজেই এখন একটি কবিতা আমার
কবিতাটি দিতে চাই আপনাকে
নারীটি এবার বিস্ময়ে আনন্দে মেঘভরা বৃষ্টির মতো দুহাত বাড়িয়ে
দাঁড়ায় আমার কাছে—বললেন তিনি—
এ নগর ছেড়ে চলে যাবেন আপনি
এ নগরের বাতাসে যেন উচ্চারিত না হয়
আপনার কবিতার কোনো শব্দ ঘ্রাণ
আমার নিশ্বাসে আমি এসব একদমই নিতে চাই না
আমি বললাম—যাব বলেই তো শেষ বিকেলে আমার শেষ আসা
এই কবিতাটি আপনাকে দেব বলো পুরো জীবনই গেঁথেছি কবিতায়
ভৈরবী ভেলায় ভেসে যায়
জীবন তৃষ্ণায় ভৈরবী ভেলায় ভেসেছে বহু বছর—
সহস্র প্রেমের কবিতায়
জন্মেরও আগে থেকে—শরীর ছিল না;
আত্মায় ভেসেছে দূরের আকাশে মেঘে মেঘে।
অপেক্ষায় ছিলে পুরোটা জীবন—যমুনার
পিপাসায়—ঢেউ আঁকা রাখাল গায়ক
দীর্ঘপথের তৃষ্ণার্ত ক্লান্ত পথিক;
লিখে দিল তোমাকেই দীঘল চুম্বনে—সবকিছু ভুলে—
জানকী যৌবনা সবুজ ঢেউয়ে।
আছড়ে পড়লে বুকের ওপর—অনাঘ্রাত কুসুম;
রোদের রাজন্য স্পর্শে
খুলে যায় জশন জানালা—ভেসে আসে কামিনী বাতাস;
স্রোতের গা ঘেঁষা কাঁচাবালির মতন ভিজে যায়
জ্যোৎস্নায় রমণী শরীর।
ভোরের বিভোর স্নান শেষে বেলিফুল ভেজাচুলে
ফোটে সে আবার কুমারীফুল রমণী পাপড়িতে।
সব ডুবে গেছে—ডুবে যায়;
এমন কী গত সন্ধ্যা এবং নদীর স্রোতের মতো
রাতভর মাধুরী মৈথুন অববাহিকার কবিতাও;
জীবন তৃষ্ণায় ভৈরবী ভেলায় ভেসে যায় গৈরিক যৌবন।
স্বর্ণফসল চাষের কৃষক
যৌবনের অহঙ্কার ছুঁই ছুঁই দারুণ বয়স
আকাশ ছোঁয়ার দৃঢ়তা তো এখনই মানায় স্পর্ধায়,
সবুজ জলের পদ্মা মেঘনা যমুনা চিরকাল বহমান
দুর্দান্ত রোদ্রের উজ্জ্বলতায় আকাশ ছুঁতে চাই
. আমরা আকাশ ছোঁব একদিন।
হৃদয়ের স্নিগ্ধস্নাত স্বাপ্নিক শিল্পী
রামধনু মেঘ থেকে ছড়িয়ে দিলাম
তোমাকে অজস্র রঙধনু বৃষ্টি।
রবীন্দ্রনাথের বাগান থেকে ভোরের শিশির জড়ানো
পনেরটি লাল টকটকে গোলাপ এনেছি তোমার জন্য
প্রণতি তোমাকে সুন্দরের স্বপ্নদ্রষ্টা।
আমরা আকাশ ছুঁতে চাই
. আকাশ ছোঁব একদিন।
স্বপ্নের সাম্পানে দুর্দান্ত এক সওদাগর
ছকে ছকে ঢেউখেলা অপ্রতিরোধ্য অঙ্গীকার;
প্রদীপ্ত যৌবন ছোঁয়ার দৃঢ়তার উৎসব
তুমি দিয়েছ প্রার্থনার মতো করে সত্যসাধক—
আমরা আকাশ ছুঁতে চাই
. আকাশ ছোঁব একদিন।
সক্রেটিস প্লেটো আইনস্টাইন নিউটন পৃথিবীর ইতিহাস
শেলি কিটস বায়রন নজরুল রোদ্দুর ছায়া হয়ে বলে যায়
আলোর গল্প—চোখের আলোয় তুলে নিই
মস্তিষ্কের কোষে কোষে এক সুধা-সরোবর
যে তুমি কঠিন মাঝি উত্তাল নদীতে সাধারণ তরীতে
আঁধার ভাঙার আলোর বিহঙ্গ—জজবা সন্ন্যাসী।
আমরা আকাশ ছুঁতে চাই
. আমরা আকাশ ছোঁব একদিন
ভোরের রোদের মতো মিষ্টি মা-ডাক রক্তে ডোবে একদিন,
হাজার নদীর স্রোতরেখায় লেখা কত যে কাব্য কবিতা
দুঃখনদী হয়ে জ্বলে ওঠে আগুনের ফণা হয়ে;
লাল সবুজের উর্বর বাংলা পৃথিবীর বিস্ময়।
পথে পথে ছড়িয়ে পথের রেখা
জীবন গড়ার যেন এক মৃৎশিল্পী সাধকের মতো হাঁটছেন
কঠিনেরে ভালোবেসে দৃঢ়তার দীপ্ত পায়ে
নিজ হাতে গড়বেন নক্ষত্রের রাশি রাশি আলো।
তারুণ্যচোখে তুমি এক হীরকদ্যুতি
দুর্দান্ত রোদ্রের উজ্জ্বলতায় আকাশ ছুঁতে চাই
. আমরা আকাশ ছোঁব একদিন।
স্বপ্নগুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে প্রমত্ত পদ্মা কাঁপানো সাহসে
আগামী নির্মাণে দৃঢ়তা বন্ধন
মাথা নুয়ে পড়া ফসলের গান
বিরান ভূমিতে আগামীর সম্ভাবনার লিখব সতেজ গল্প
অপ্রতিরোধ্য একতরীতে অভিযাত্রী—
. দৃঢ়তায় স্পর্ধায় আকাশ ছুঁতে চাই
. আমরা আকাশ ছোঁব একদিন।
রক্তকণিকায় আমরা দেখি বিশ্বজয়ের নতুন স্বপ্ন
ফুলেল পাপড়ির মতো বন্ধন ঘ্রাণে ও লাবণ্যে
ঢেউ হয়ে ঢেউয়ের ওপর উঠতে জানি
সিঁড়ির ওপর সিঁড়ি বানাতে আমরা জানি
জীবনের মঞ্চে জীবনের জয়গান গাইতে আমরা জানি
সবুজ শ্যামলে সাধনসংগীতে
. আমরা আকাশ ছুঁতে চাই
. আমরা আকাশ ছোঁব একদিন
যৌবনের অহঙ্কার ছুঁই ছুঁই দারুণ বয়স
মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর নতুন গল্প লিখবো আমরা
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল;
তারপর দিগন্ত থেকে দিগন্তে
. আকাশ থেকে আকাশে
. সীমাহীন সীমানায়
একতরীতে অপ্রতিরোধ্য অভিযাত্রী—
স্বর্ণফসল চাষের দারুণ কৃষক আমরা,
দুর্দান্ত রোদ্রের উজ্জ্বলতায়
. আমরা আকাশ ছুঁতে চাই
. আমরা আকাশ ছোঁবো একদিন…
ভেবেছি ফিরেই যাব
ভেবেছি ফিরেই যাব—আমার বৈশাখী ঝড়
মাতাল চুম্বন
বুনো অবাধ্য যৌবন
সব ফিরে নিয়ে যাব
আমার রোদ্দুর হয়ে ওঠেনি আমার
আমার পরমা নদী হয়ে ওঠে একান্ত আমার
আমার তৃষ্ণাকে নরকী অগ্নি ভেবে ভয় পেয়ে
স্বর্গেই ফিরে যায় স্বর্গনন্দিনী
আমার রক্তিমতা ঢেউফণা ভয়ংকর পদ্মা ভেবে
প্রাচীরের পর প্রাচীর গাঁথে নগররমণী
আমি ফিরে যাব
অকাল শীতের ঘাস করে বুনো পাপড়ি আমার
শাদা কাফনে মৃতের মতো ঢেকে যাবে কথার কবিতা
ভোরের স্নানের পর লাল শাড়ি পরা তুমি
. তখন শুধুই পৃথিবীর মুগ্ধছবি
অনর্থক জেগে থাকা
তীরবিদ্ধ করুণ স্বপ্নরা নতুন করে বেঁচে ওঠে আবার—যখন তুমি
ভালোবাসার নামে বন্দি করে নাও সুগন্ধি চুলের অন্ধকারে
বন্দি করে নাও একমাঠ মায়াবী ফসলের চাষাবাদ
দুঃখে কাতরানো ডাহুক তখন প্রণয়ের ঘ্রাণে নিজের করে নেয়
নীল-শাদার বুননে সদরপুরের কলমিলতা কুমারীমাঠ
তারপর একদিন মনে হবে যেন বরফের শাদা ঠোঁটে
অনর্থক জেগে থাকা আমাদের—মহিমের ঘরের আগুন
. কী অদ্ভুতভাবে পোড়ায় আমাকে