মিডল ফিংগার
কোবরা স্টারশিপ-এর মিডল ফিংগার বিখ্যাত গানটা আমাকে টানেনি,
তার চেয়ে আদিবাসীদের শিকারে ব্যবহৃত
সাংকেতিক ইশারার ভাষায়
বৃদ্ধা, তর্জনি, মধ্যমা, অনামিকা, কনিষ্ঠার কারুকাজে
আমি মুগ্ধ এবং আমিও ব্যবহার করি ভিন্ন ভাষায়
টিপসই-স্বাক্ষরে।
বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আর ফিংগার ল্যাঙ্গুয়েজ সমগোত্রীয়
তবে তফাৎ বাংলা আর অসমীয় বর্ণমালার মতো।
জেনেছি, চিকিৎসাবিজ্ঞানে আঙুলের কোনো নাম নেই,
সেখানে নির্দেশিত হয়—(১ ২ ৩ ৪ ৫) সংখ্যায়।
ঐতিহাসিক তর্জনির ভূমিকা ইতিহাসে আছে,
বাগদত্তা বন্ধনের জন্য নির্ধারিত
অনামিকা!
তবে মিডল ফিংগারের অনেক বদনাম।
তুমিও ভালোবাসো মিডিল ফিংগার!
স্পর্শকাতর ভাষা
ব্রেইল পদ্ধতিতে তোমাকে পাঠ করতে চাই;
অনুভবে তোমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে…
স্পর্শ করে করে পড়ে পড়ে মনে রাখতে চাই।
হেলেন কিলার নও; লজ্জাবতিও না।
তবু তোমার উঁচু-নিচু ডট বর্ণগুলো
আঙুল বুলিয়ে বুলিয়ে
মনতরঙ্গে, জল তরঙ্গে তোমাকে ছুঁবো, শিখবো
তোমার প্রেমে অন্ধ
চোখ বন্ধ করে হোমার হিরোডোটাস হয়ে
আয়াতুল কুরসির মতো
মুখস্ত করতে চাই, গেঁথে রাখতে চাই মগজে
তুমিগ্রন্থ; তোমাকে পড়তে চাই,
শিখতে চাই—তোমার স্পর্শকাতর ভাষা।
পা থেকে অথবা
বাঁ দিক থেকে পাঠ করতে চাই ছয়টি বিন্দু,
এবং বিন্দুর কেন্দ্রবিন্দু।
NOIR
আমার শহরে এলে মিউজিয়ামে বা ডাউন টাউনে নয়; নেটিভদের গ্রামেও না,
তোমাকে নিয়ে যাবো একটি NOIR রেস্টুরেন্টে
অন্ধকারে বসে তুমি লাঞ্চ করবে, চা খাবে
দৃষ্টিহীনদের মতো অন্তর দিয়ে অনুভব করবে চা কতটা গরম,
কতটা ঠাণ্ডা আইসক্রিম,
হাতচোখে স্পর্শ করে দেখে নেবে নাতিশীতোষ্ণ ওয়াইনের ভেজা গ্লাস।
মৃদু সুরে হালকা-হালকা বাজবে ব্রেইল ভাষার মিউজিক—
বোধ থেকে ভাবানুবাদ করে ধরে নেবো:
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,…
দেখেছি তারে অন্ধকারে;…শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার’
আমরা হেলেন-হোমার মুখোমুখি বসে
কিছুটা সময় বাস করবো শাদাছড়িহীন অন্ধজীবনে
‘অন্ধ প্রেম’তাই—অন্ধকার রেস্টুরেন্টেই ডিনার, লাঞ্চ।
তুমি মূর্ধন্য-ষ, আমি তালব্য-শ
আমরা চা-চামচ আর কাটা-চামচের লিঙ্গান্তরের ব্যাকরণে
অন্ধ মানুষদের মতো হাসবো আর ভালোবাসবো অদৃশ্য অন্ধকার।
মানুষ ভ্রমণে দর্শণীয় স্থান দেখে তাকিয়ে তাকিয়ে
নায়াগ্রা দেখে মুগ্ধ হয়। জাদুঘরে যায়। ছবি তুলে। স্যুভিনির কেনে।
আমরা অন্ধকার রেস্টুরেন্টে অন্ধ হয়ে উপলব্ধি করবো
পরস্পরকে!
আমাদের বোধের ভেতর জেগে উঠবে চা-চামচ, কাটা-চামচ।
আমার কোনো ধানক্ষেতে নেই
বিড়াল মাছের মাথা লুকিয়ে ছিল ধানক্ষেতে
ইঁদুর বিস্কুটের টুকরো নিয়ে পালায় গর্তে, গ্রন্থে
তেলাপোকা পালায় অন্ধকারে, আড়ালে।
গৃহপালিত জীবনে কোনো নিরাপত্তা নেই।
আমার কোনো গোপন গর্ত নেই, ধানক্ষেত নেই!
বিড়াল, ইঁদুর, তেলাপোকারও অধম আমি—
আমি তোমাকে কোথায় লুকিয়ে রাখবো?
সেক্স ফ্রি, লাভ কস্টলি
কুমারীত্ব হারানোর চেয়ে বেশি বেদনাদায়ক
আইফোন-বারো হারানো।
নগ্নতার আনন্দ মূল্যহীন;
কিন্তু মূল্যবান বায়বীয় ভালোবাসার।
ঈশ্বরের ভয় নেই;
ভূতের ভয়, চোরের ভয়; অথবা চাকরি হারানো।
সত্যের চেয়ে বেশি বিশ্বাস এবং সুন্দর
মধুর মিথ্যে অথবা মৌলবাদ।
কু-ক্যু-সন্ধ্যা
সেদিন সূর্য উঠেছিল মফস্বলে; সিরাজগঞ্জ থেকে।
আজ তোমার শহরে কি সকাল হয়নি? জাগেনি সূর্য, ফোটেনি শাদাফুল!
কেউ কি ডাকেনি শহরের ডাকনাম ধরে।
খাগড়াছড়ির আদিবাসী পাড়ায় ছায়াপথে রক্তমাখা সন্ধ্যা নামে,
এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে সূর্য ডুবে যায়!
আমরা হাইড্রোজেন থেকে আলাদা করি কার্বন, নিয়ন, লোহা
আর আয়োজন করি কুকুর নিধনের উৎসব!
একদিন দিনদুপুরের প্রতিটি শহরেই নেমে আসবে কু-ক্যু-সন্ধ্যা,
পরদিন থেকে আর কোনো সূর্য উঠবে না,
ভোর হবে না; ফুটবে না ফুল।
টাই
আমি আর কখনো কাউকে মুখস্ত করবো না,
এক সময় ‘গরুর চারটি পা আছে, গরুর চারটি পা আছে’
পড়তে পড়তে, মুখস্ত করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তাম।
কলমও কাঁদে, নিবদাঁত থেকে বের হয় কালিপুঁচ।
নির্মাণাধীন মিউজিয়ামে ঘুমুতে যাবো,
বাতাসকে রেখে সাথে নেবো বালিশ আর ওয়াইফাই।
নাতিশীতোষ্ণ সময়গুলো হিজড়াদের মতো,
সামার ওয়ান্ডারফুল, শীত বিউটিফুল এবং গ্রাম্য জীবনও
সেখানে গাছগাছালি আত্মীয়ের মতো মিলেমিশে বাস করে।
নখ কাটা হয়নি; যদি আঙুল কেটে যায়, যদি বৃষ্টি নামে
চুল ঝুলে পড়ছে বটের ঝুরির মতো নিম্নগামী নদীজলে
এরকম কত সহস্র দৃশ্য অদৃশ্য থেকে যায়।
ভাঙা প্রাইমারি স্কুল ঘর থেকে যে কিশোর রাষ্ট্রদূত হয়েছে
সে স্ত্রৈণ; টাই পরে ঘুমায়। টাই এক ধরনের ফাঁসির দড়ি
কোন হালায় আবিষ্কার করছে এই উদ্ভট উটের শিশ্ন!
তিন মিনিটের কবিতা-২৭
নিদ্রাস্বপ্নে যে মাওলানা খ্রিষ্টান হয়ে গিয়েছিল,
তিনি ‘নাউজুবিল্লাহ’ বলে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন!
আমিও একবার ঘুমের ভেতর নারী হয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম—নিজের স্তন দেখে,
তোমাকে ভেবে ছিলাম—পুরুষ ময়ূর!
উসকানিমূলক রোদের রথে চড়ে তৃতীয় স্থান হিথ্রোতে আসো,
ব্রিজে তালা ঝুলিয়ে টেমসে ফেলে দেবো চাঁদ এবং চাবি।
শুধু আকাশের আলোতে জল-জাহাজে জ্বলবে আমাদের ধর্মহীন সম্পর্ক,
সঙ্গম খেলা।
তুমিও কি মাওলানার মতো বদলে যাও; পুরুষ হয়ে ওঠো?
ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি
ঘুম থেকে উঠে দেখি—বাহ, বেঁচে আছি।
যেভাবে অ্যালবামে বেঁচে থাকে ছবি,
যেভাবে গাফফারের গানে জীবিত রফিক, সালাম, বরকতেরা
সেভাবে বেঁচে থাকি।
ফুলের গোপন ঘ্রাণ সজিব হয়ে থাকে পারফিউমে,
তুমি ফুটে থাকো আমার কবিতায়—
সুতাও পোশাকে রূপান্তরিত হয়ে দীর্ঘজীবী।
বাতাসের অংশ হয়ে থাকে ২১% অক্সিজেন
অপুর সংসারে আজো আছেন—
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
শেষ প্রচ্ছদ
শুধু মুখ নয়; দেখতে চাই অন্তর্যামীর ভেতরের অন্তরাত্মা,
শেষ প্রচ্ছদ! ছিমছাম ব্যাক ইয়ার্ড।
ব্রাজিলিয়ান ভিক মিউনেজ, তাঁর কর্মকথা মনে পড়ে।
বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্মের ‘ভারসো’
কাঠ, হার্ডবোর্ড, তার, তারকাটা, প্যারেক, পিনের প্রদর্শনী।
পেছনের বিপরীত দৃশ্যের নান্দনিকতা—দ্য ব্যাক।
বাংলাদেশের নিচে সুন্দর বন, সমুদ্র
ঢাকা মুদ্রায় ওপিঠ খোলা, পিঠ জুড়ে চাঁদের পূর্ণিমা
সৌন্দর্যের উল্টোদিকে আর আড়ালে কী কী থাকে?
খোলা পিঠ, ব্লাউজে ফুটে থাকা ব্রা’র হুক
চুলের নকশা, শাড়ির কারুকাজ!
[‘ভারসো’ পুর্তগিজ শব্দ। ইংরেজি অর্থ ‘দ্য ব্যাক’)