স্টেশনে বৃষ্টি
বৃষ্টির রাতে তোমারে দু’চারটে কথা বলি
কতদিন পর মিললো সুযোগ সামান্য
ট্রেন এলো না বলে স্টেশনে, এই অবসর
দূর থেকে ডাক আসে
শিয়ালের
চেনা
পেছনে গভীর বন। সেইখান হাওয়া বয়
হাহাকার সহকারে, আমার সঙ্গী যারা
লাল দেওয়ালে ঘুমায়েছে তারা
পিঠ মেলে দিয়ে।
সহযাত্রী সম্ভবত আরও ছয় জন আছে।
সবাই জাগাতে পারে—হুইসেলে হঠাৎ
ব্যাগ টানাটানিতে মুছে যেতে পারে কথা
সম্মিলিত শরীরের বোধদয়ে
মনে হতে পারে কারও, এ বেঁচে থাকা
অযথা।
তবু কতদিন পর
এটুকু সময় পাওয়া একার, নির্জনে রাত
আর আকাশ অন্ধকার কালো মেঘে মেঘে
বৃষ্টি বুঝি আবারো
আসবে এইসব
মানুষের পাশে। অপেক্ষারত যারা ঘরের।
আমার তো ঘর নাই, কেবল অপেক্ষাটুকু
রাত্রির মতো জানি তাও ফুরোবে একদিন
বাধাধরা।
সকালে কি ট্রেন আসবে
নাকি ফজরের আজানের পরই
স্টেশনে বসে থাকা এক লোক বলছিল
প্রথমে। আমাদের আগে থেকে সে নাকি
সন্ধ্যাবেলায়
প্রথম এসেছিল।
কথা হয়েছিল মাস্টারের সাথে
বলছে তারে সকল সে যাওয়ার আগে
আমাদের তাড়া নাই। তবু কারও মনে
পড়ে যায় ভুলে যাওয়া কথা
এই আমারই মতোন, হঠাৎ বৃষ্টির মতো।
মাটির গন্ধভরা বাতাস, গাছের পাতার
দলে এখনো টুপটুপ, বুঝি গুঁইসাপ
সড়সড় চলে গেলো
হয়তো ইঁদুর, গোখরাও হতে পারে
সবারই
নামতে হয় পথে।
যতো বিষেই ভরা থাক থলে,
নিজের সম্বলে কারও না চলে
এই দুনিয়ায়।
বৃষ্টির রাতে, তোমার কথা মনে পড়ে।
আরও ঘন আসে রাত, গাঢ় অন্ধকারে
মাঝে জ্বলে হলুদ বাতি একা, উত্তরে
নদী আছে এক
দুধকুমার।
বালক
সে এখনো, বয়সের মানে জানে না
বৃষ্টি এল জোরে তাই বুক পেতে নেয়
শীর্ণকায়।
তোমার-আমার
মাঝে কতকাল বৃষ্টি নামে না আকুল।
এই বৃষ্টির রাতে কত কথা বলবার বাকি
কিছু কথা কেটে গেলো বিদ্যুতে
আর ভেসে বুঝি গেলো সবই—অঝোরে।
ধরো তারপর সংসারে
ধরো সংসার—
ধরো ‘নীল নবগনে’ তখন আষাঢ়
ধরো কোয়ার্টার নিরিবিলি খুব
সেইখানে ঘর তোমার-আমার
তিন বা চার তলায়
সেইখানে দোলে নারকেল পাতা।
ধরো সেইদিন তুমি প্রতিদিন
যেমন হাসপাতাল, অনেক রোগী
আর ব্যস্ততা সব
ফুরালো যখন
বৃষ্টি তখন ভেজালো আকাশ
আর ওয়ার্ডের সামনে দোলে
বুড়ো এক বাগানবিলাস।
তোমার অবশ্য তাড়া নাই কোনো
ফেরার!
ধরো আমি ভাজতেছি ইলিশ
খিচুড়ি রান্না শেষ
কেটে
রাখা বেগুন, ভাজির মতোন
উনুনে গরম তেল
ছটফট
আর কেমন জানি, করে মন।
ধরো একটা রিকশা খালি
টুং টাং করে যাচ্ছিলো ভিজে একা
এক নোয়াখালী
তোমার অতো তাড়া ছিলো না
তবু ভিজতে ভিজতে ফিরলে
বিকেলে
থই থই রাস্তায়
বাজে কলিংবেলেও জল, অথই।
দরজা খুলে দিতেই তুমি
ভাজা মাছের ঘ্রাণে, কিছু একটা
বলার আগেই ধরবো
জড়ায়ে
ভেজা গায়ে তোমার যতটুক শীত
সবটুকু তুলে নিয়ে, ছাড়বো
তারপরে।
তোমার সঙ্গে
পাতার মতো আমরা যাবো ঝরে
পাশাপাশি ছিলাম
কবে
রবে না অন্তরে
তখন কিসের বলো শোক
তাইতো বলি আবার দেখা হোক।
পাশাপাশি সেগুনবাগিচা
আসতে যেতে থামি
খিলগাঁয়ে
ভাবি
তুমি
আলতা পড়ে
পায়ে, ঘুরতেছ টুকটুক।
আকাশ থেকে নামতে থাকে আলো
দুপুর বেলায় দেখা হলে ভালো
সামনে তখন বিকেল
সন্ধ্যা থাকে
তবু
রাত নেমে যায় একা
আর দিন থেকে যায় বাকি
মন তবুও ভাবতে ভালোবাসে
তোমার সঙ্গে—দেখা হবে ঠিকই।