পরাভূত সময়ের গুপ্তঘাতক
ধড় থেকে মাথা, হাত থেকে আঙুল, পা থেকে গোঁড়ালি—খুলে খুলে পড়ছে আগুন,
ধ্বসে পড়ে আকাশের ইট, সুড়কি, বালি…নদী ও সাগরে পাখিদের ঘর-গেরস্থালি,
ভিনগ্রহ থেকে উড়ে এলো এক ঝাঁক সারস—তাদের ঠোঁটে বসানো বাঘের দাঁত,
বিড়ালের কিম্ভুতকিমাকার চোখ…
রাস্তার প্রতিটি ল্যাম্পপৌস্ট তাক করে রেখেছে ধনুকের ছিলা…
দলে দলে মানুষ ও মানুষের বাচ্চারা সদম্ভে মুখোমুখি হচ্ছে রকেট লাঞ্চারের।
পুরুষদের জরায়ুতে নিষিদ্ধ পরাগায়নের স্রোত,
নারীরা অনির্বাণ শিশ্নে আছে ধর্ষকের ভূমিকায়।
রীতিহীন রীতির দৌড়ে নিওলিথিক অতিক্রান্ত রেনেসাঁস
অর্জন করেছে শ্রেষ্ঠত্বের বীভৎস-মুকুট। সামনে এগিয়ে আসে
একদল শামুক চিবিয়ে খাওয়া মানুষ। ভোজনের শেষে সবার বিষ্টা মাখা হাত।
জলবায়ু বন্দি নিজস্ব অ্যাকুরিয়ামে। ভোরগুলো উঁকি দেয় আনত সন্ধ্যায়।
ঘর্মাক্ত রাতের শেষে লব্ধ নিদ্রায় দুপুরগুলোতে ডেকে ওঠে ঝাঁকে ঝাঁকে ঝিঁ ঝিঁ পোকা।
সময় হয়ে যায় ঝুলে থাকা বাদুর।
রুদ্ধ হয়ে আসা নিঃশ্বাস বারবার বিষম খায়। কণ্ঠনালী চেপে ধরে একবন কাশফুল।
হাঁচির আওয়াজে পাড়ি দিই ভিন্ন গোলার্ধ। স্পর্শেই যত্রতত্র প্রোথিত হয় নিজ নিজ নিবাস।
তরুণাশ্রমে বৃদ্ধরা শাসন করেন সর্পের ফণায়। জড় ও জীবের পার্থক্যে থাকে অনুশোচনা।
এরই মাঝে দমকলবাহিনী বিসস্ত্র অশান্ত সাগরে। পেছন থেকে হেঁটে আসে ভার্জিন ট্রেইন;
আকাশপথে সোজা ঢুকে পড়ে দাবানলের মলদ্বারে। পাখিদের পালকগুলোতে
চিকচিক করে হীরার নোলক। কোরাস সঙ্গীতের নামে শুরু হয় আশ্বিনের শীৎকার।
আর থুথু ঢেলে লিখা হয় সঞ্চিতার সঞ্চয়িতা। স্বপ্ন-ব্যাখ্যা হয়ে ওঠে নপুংসক ধারাপাত।
ধীরে ধীরে লরেল সমর্পণ করে জিউস এসে কুর্নিশ করেন। হেলেন প্রার্থনা করে রমণ-সজ্জা।
আলোর আধারে অন্ধকার চলে যায় দীর্ঘ কারাভোগে। কোহিনূরে নিজের নবাবীকে খামচে
ধরতে ধরতে দেখি সীতার সলাজ উপস্থিতি। আবাবিলের ভিড় ঠেলে শুরু হয় ত্রিকাল ঘূর্ণন।
হঠাৎ পুনরুত্থানে বন্দি হই সহজিয়া আপন দৈর্ঘ্যে। চোখের পাপড়ি ভেদ করে শুরু হয় রশ্মি বিকিরণ।
হাত কচলানো দৃশ্যপটে অনুসন্ধিৎসু চেতনায় তড়িৎ সূঁচের উৎসমুখ…নগ্ন রেটিনায় বিম্বিত হয়ে ওঠে
পলায়নপর একটি পুরুষ্ঠ ছারপোকা—পরাভূত সময়ের গুপ্তঘাতক!
আর উদগত ঘামে চুবিয়ে থাকে অতৃপ্ত রতি-সম্ভোগের দেহ…পেরিয়ে যাওয়া ব্রম্মাণ্ড চেপে বসে টাইমমেশিনে।
বিলোড়িত ইন্দ্রিয়ের হোঁচটে কাঁপে হাত; আবারও মানুষের যুদ্ধে তবু কী এক আবাধ্য ধ্যানে খুঁজে ফেরা ডিস্টোপিয়ার রাত…
সময়কেই শুধু চেনা হলো না
তোমাদের পাড়ায় অতিথি হতে বললে, হলাম।
চারদিক থেকে এলো ধুন্ধুমার ফানুস।
নিজের শরীরের উপর নিজেই চেতনার হুল ফোটাই—নাহ, আমিই তো!
কেউ কেউ বলল, এভাবেই ঘুরাতে হয় সমাজের চাকা;
মাইরি আপনি না হলে…মুখের স্বাদ এখন টের পাই…
আহা কী ঘুম…! তোমাদের পাড়ার প্রতিটি কার্নিশে দেখি উচ্ছ্বসিত জীবন।
তোমাদের পাড়ায় হয়ে উঠলাম অবিসংবাদিত কন্ঠ, বলতে পারি—ফাইয়াকুন।
বিনয় সেই দিনটিকে করেছিল মহামানবিক।
মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া লালা ছিলো কারো কারো কাছে আবে যমযম।
প্রাপ্তি এসে সমবেত হয়েছিলো তোমাদের চোখে।
করমর্দন, স্কন্ধ-মিলন ও সুবাসিত শব্দকে পেরিয়ে বিদায়টি ছিলো অভেদ্য।
শুনেছি তোমাদের আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
শিশুগুলো আজ বৈদেশী ইশকুলেও পড়ায় ।
তোমাদের বেড়ে ওঠা চলতেই থাকে।
আমার ঘরের পলেস্তরা খুলে পড়ল গতকাল, হঠাৎ করেই।
তোমাদের পাড়ায় আসতেই শুরু হলো কী যে হুলুস্থুল;
উৎসুক মুখগুলো প্রতীক্ষায় উঠে এলো সহবাস ছেড়ে,
নেতা, খালি হুকুম করেন…
নেতা, কী হইছে কন…
নেতা, আপনার লাগি জীবনও দিতাম পারি…
ভালোবাসার আতিশয্যে নিজেকে এবার একত্রিত করি,
এই, তোমরা এতো ব্যস্ত হয়ো না,
আমার ঘরের সামান্য পলেস্তরা খসেছে মাত্র…
অসমাপ্ত কথায় তোমরা এসে জড়ো করো,
নেতা, কী বলেন!
নেতা, আপনি আমাদের বাবার মতো…
নেতা, মুই আছি, খালি কইয়া দেহেন…
আকাশের দিকে তাকাই সমর্পিত বিস্ময়ে,
আপন জেনেই তো নিজেই এলাম আজ তোমাদের কাছে,
যদি কেউ পলেস্তরাকে প্রতিস্থাপন করে দাও…!
হঠাৎ বিস্ময় হয়ে ওঠে নির্বাক।
এক মুহূর্ত আগে যেখানে ছিলো প্রত্যাশার প্রতীক সেখানে বিমুখ লোকালয়;
কথার অরণ্যে বাজে মেঘের গর্জন,
মানে, আমার বউটা পোয়াতি…
মানে, কাইল আমার ছাওয়াল চলি যাবে…
মানে, ইস, যদি একদিন আগে জানতাম!
এবার ঘুরে দাঁড়াই। অপ্রতিরোধ্য বিদায়ের পথে পড়ে থাকে বুভুক্ষু মঞ্চ।
রুপায়িত দৃশ্যে ফিরে যায় অগ্নিনির্বাপণ।
চিত্রের গভীর ভেদ করে হেসে ওঠে বল্গাহারা ঠোঁট,
সময়কেই শুধু চেনা হলো না!