জংলি কুসুম
যদি ভুল করে কোনো ভুলফুল ফোটে তোমাদের ছাদে
জেনে রেখো সে ভুল আমি;
জেনে রেখো তোমার খোঁপায় ঠাঁই হলো না
তাই ফুটেছি অকালে—হৃদয়ের দাবি নিয়ে জংলি কুসুম!
কাচের দেয়াল ঘেরা তুমি-আমি-আমাদের পৃথিবী
তবু কেন মনে হয়—এই ছুঁই এই ছুঁই?
আহারে মানবস্বপ্ন! দেয়ালের ওপারেই থাক!
আমাদের বিশ্বে শুধু বয়ে যাক প্রেমের জোয়ার।
কোনো রাজকন্যা নয়, না কোনো স্বর্গের দেবী
তোমাকে চেয়েছি শুধু শর্তহীন আঁধারে-আলোয়
অনন্ত পথের শেষে দাঁড়িয়ে থেকেছি বহুকাল
পথ শেষ হয় তবু, দেখা আমি পাই না তোমার
মনে হয় এই ছুঁই এই ছুঁই
জানি তুমি পথের শেষে নেই, আছ পথের ওপারে।
ফুটেছি বুনোফুল পুকুর ঘাটে, ক্ষেতে ও খামারে
পায়ে পায়ে চুমো খাই সকালে-বিকালে
যদি তুমি ভুল করে হাতে তুলে নাও,
যদি ভালোবাসা পাই—তাই
ফুটেছি গোপনে ফুল, টবে নয় ছাদের কিনারে!
তৃষ্ণা
আমার সমস্ত রাস্তা যদি উড়ে যায় মেঘস্রোতে
আর ওই রাত নামে হামাগুড়ি দিয়ে অনন্তের
. আন্ধারের মতো;
সম্ভ্রান্ত সন্ধ্যারে কোন্ কবি বশ করে নিয়ে যাবে
ডালিম ডানার মতো লাল-লাল সূর্যাস্তের আগে!
আপেল আর বলের দূরত্ব মাপতে গিয়ে কাল
তুমি নাকি এঁকেছিলে হৃদয়ের ম্যাপ!
তবে দ্বিধা কেন—
চলো পুড়ে যাই, চলো উড়ে যাই তৃষ্ণার দহনে
এই চলন্ত নগরী হা করে থাকুক
পোড়াক মন-হৃদয়!
দুরন্ত দুপুর ঝুলে থাক কামারের হাপরের
. —লালে।
দেখেছ আগুন ফুল—উড়ে-উড়ে চৈত্রের হাওয়া
কামারের মুখে তবু হাসির উপমা!
সেদিন গোপন নদী
ঢেউহীন বেদনার স্রোতে ভেসে গেলে
আমাদের তর্ক তবু থেমে যায় লালমাছি গ্রামে
নগরে নেমেছে লাল একজোড়া রাত!
এমন আন্ধারে তবু চিঠি লেখে যারা, তারা নাকি
বেদনার ভাষা ভুলে যায়!
তারা নাকি পাঠ করে প্রাচীন হৃদয়—
. চুর হয়ে ডুবে থাকে রবীন্দ্র সঙ্গীতে!
কে তুমি হৃদয়হীন ডাক দিলে ডাকনাম ধরে
চৈত্রের অনেক দেরি
মাঠে মাঠে বাতাসেরা তর্কে মেতেছেন—
আমাদের চোখ তবু ফালি-ফালি তরমুজ দেখে।
পরানের ঘুম
সূর্যকে বগলদাবা করে দুপুরকে অন্ধকারে
রেখে আমি চলে যাব সন্ধ্যার সাম্পানে।
তোমার খোঁপার চুলে তারাদের লুকোচুরি দেখে
ফেরারি চাঁদের হাসি লুটোপুটি খাবে
বেদনার মতো বিগলিত নীল রাত্রির শরীরে।
দুপুর ঝুলে থাকুক তোমাদের দেয়াল ঘড়িতে!
কামনা কাতর ফুল ভ্রমরের কানে কানে বলে—
যদি গো যাতনা দিলে, বাসনার ছোঁয়া কেন নেই?
হৃদয়ের ক্ষত তবে কার কাছে মেলে?
আহারে রাত্রির দেহ! তুইও কেমন
বিবাগী বাতাসে উড়ে ভুলে গেলি শরীরের ক্ষুধা!
এত কি সহজ তবে ভুলে যাওয়া পরানের ঘুম!
চলন্ত রাত্রির কাসিদা
এই চলন্ত রাত্রির পেট চিরে নেমেছে আন্ধার
আহারে তোর নগরী তবু জ্বালে হলুদ জোনাক
গলিপথে ছুটে যায় রোম ওঠা কুকুরের মতো
একপাল রাতজাগা বেকুব পুলিশ!
আমাদের মধ্যরাত ঝুলে থাকে অচেনা দেয়ালে।
এই সম্ভ্রান্ত আন্ধারে কাকে আর ডেকে আনি ঘরে
চাঁদ জ্বলে মরে মেঘের কিনারে ঈর্ষার আগুনে
ঘরেতে ঢুকেছে রাধা, ভেজাচুলে। কাঁপে তার বুক
এমন কামুক রাতে মেরুদণ্ড বেয়ে ওঠে কোন সাপ
যার সাথে দেখা নেই, সে কেন যে এভাবে জ্বালায়?
এই চলন্ত রাত্রির নিবিড় আন্ধারে পথ খুঁজি
প্রভু চেয়েছি তো প্রেম, কামনার দাহ কেন দিলে!
সময়
উড়ছে দেখে মেঘরমণী বাতাসে নির্ভয়ে
আমার দু‘চোখ থমকে গ্যাছে অনন্ত বিস্ময়ে।
মেঘরমণী মেঘ নয় যেন নারীর কোমল মন
শহর ছেড়ে উড়ছে বুঝি হাওয়ায় অনুক্ষণ?
ও রমণীর নিরীহমন—নিবিড় চুলের ভাঁজ
তোমার সঙ্গে পালিয়ে যাব শহর ছেড়ে আজ
এই শহরে আবর্জনাই বেশি মূল্যবান
হট্টগোলে কেউ শোনে না কালান্তরের গান।
আবর্জনার গন্ধে এখন বাতাস ভীষণ ভারী
ও সখী মেঘ দাও পাঠিয়ে তোমার সুনীল শাড়ি
তোমার শাড়ীর ভাঁজে ভাঁজে নেব আমি খুঁজে
প্রিয় নারীর চোখের ভাষা অবাধ্য চোখ বুজে।
ও সখী মেঘ—রমণীর মন পুড়ছি ভীষণ জ্বরে
তোমার সঙ্গে উড়তে যে চাই—অনন্তপথ ধরে।