সারাৎসার
গন্তব্য পৃথক—ফলঘ্রাণে উদ্বেলিত জ্যৈষ্ঠের বাগিচা প্রতীক্ষা শেষে দূরে সরে গেছে, আর অস্তিত্বের ভেতর ক্রমে প্রসারিত হতে চাইছে বিগলিত মনোযোগ; যেখানে দেবীর বন্দনা নেই, অথচ—অসম বৃক্ষে নৈবেদ্য রেখেছে অচেনা কেউ! এ-দৃশ্য তাদের কাছে ক্লিশে নয়, যারা অকাতর দৌড়প্রবণ—অরণ্যানী ছেড়ে বিপর্যস্তু মানুষের দিকে হেঁটে আসে নিভৃতে।
পঁচিশ বসন্তে যে-দৃশ্যে ভেঙে যেত আটপৌরে ঘুম, পঞ্চাশেও সেই ভগ্নদশা ফলবান; যদিও কোনও কোনও রাতে রাইটার্স রিভিউয়ে তোমার নাম উঠে এলে যৌন-সংবেদনার কথা ভাবো পুনরায়; বিচ্ছেদমুহূর্ত থেকে যেদিন প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল স্বীয়-সৌকর্যে, তার ঘনশ্যাম রূপ ও কুহকেও লেগে ছিল সংবেদনাময় এমন জোড়াঋতু, দেখতে পাওনি বলে দিকে দিকে এত অট্টহাসি আর তন্ত্রের ডামাডোল…
হতে পারে, দিন কিংবা রাতে; অজানায় বেরিয়ে পড়বে বলে সচেতন-ঘুমে বুদ হয়ে আছে কেউ, রক্তলোলুপ পৃথিবীর পথে হয়তো বা খুঁজে ফিরছে পাগলপারা জ্যৈষ্ঠনন্দন!
শাপান্ত
পাস্তুরিত দেহ; আকাশদিঘির মিষ্টিজলে চোখ ধুয়ে দেখি, বনভূমি থেকে একটু ওপরেই তোমার বহুবর্ণ উপস্থিতি; ভূমিকাবিহীন রকমারি আলো সাজিয়ে জ্বলছো আর নিভছো; এমন পাহাড়চূড়া খুঁজতে খুঁজতে, সমতলের নদী পেরিয়ে এতদূর আসা!
আমাদের নদীগুলো নিষ্প্রাণ শুয়ে থাকে, পাড় ঘেঁষে কারা যেন বাজিয়ে যায় বিদ্রুপের তীব্র নিনাদ—কর্ণাটকি রাগ; ভুল ও ফুলের মাঝখানে তারই সর্বনাশা টঙ্কারে ফুরফুরে মেজাজে ভেসে বেড়ায় তোমার কৌতূহল, ভাবছো কৃতিত্ব—ভুল ভাবনা; কালিদহে, পাতালবাসিনীর জয়গানও ছিল একদিন; অধিরাজ্যজুড়ে!
এ-বছর নদীজলে শরতের নীল প্রতিবিম্ব দেখা দিলে ঠিক ধুয়ে নেব সম্পর্কের ইতিবৃত্ত; আসন্ন বসন্তের কুহুতানে হৃদয় রাঙিয়ে, যতখুশি অভিশাপ দিও—
সমাস
অন্ধরাত; অবিচ্ছিন্ন-
চন্দ্রকোষ রাগে বেজে ওঠে চারপাশ, অকস্মাৎ
মর্মর ভেঙে চোখের পাতায় ওড়ে শাদা ঘোড়া,
রাত্রিসঙ্গমের সকরুণ গান উঠে আসে দেহজুড়ে;
জলধি যদি খুলেই দেবে রাত্রির ভাষা—
জীবনের ভূমিকাগুলো কেন ফানুসের মতো
অবিমিশ্র মৃত্যু নিয়ে খেলা করে?
নৈঃশব্দ্যকিনারে দাঁড়িয়ে যদিও জানতে পারিনি
তীব্র রাতে জাগতিক চোখ কেন আজও অশ্রুপ্রধান!
উপসংহার
সময়ের খরস্রোতে কেঁপে ওঠে মৃত নদী; ততক্ষণে আমি অন্ধ- নাম-ধাম-কীর্তি ভুলে যাওয়া প্রাক্তন-প্রেমিক। তোমারই নির্লিপ্তির হাওয়ায় ভেসে পৌঁছে গেছি অজানা নগরে; সেখানেই বিচরণ করছি আর প্রসারণশীল দৃষ্টিতে দেখছি- ‘ভালোবাসা’ নিলামে তুলেছে ছদ্মপ্রেমিকের দল; নাম ও দামের হল্লা চড়িয়ে আমারই হৃদয়জোড়া আগুনে ঝলসে নিচ্ছে অন্যের ভবিষ্যত! কাঙালের মতো, এখনও বেঁচে আছি বলেই শুনতে পাচ্ছি সেই দহনরাগিনী—
এভাবেই, একদিন তুমিও বাড়াবে নিলামের সর্বজনীন শোভা; হয়তো বা, বৃষ্টিসম্ভাবনার দোহাই দিয়ে শূন্যলোকে উড়িয়ে দেবে মেঘের পালক; মৃত নদীর চিকচিক বালুরাশি ভেদ করে আমার দিকেই তেড়ে আসবে তীব্র হেমলক- পুনরায়; প্রশস্ত গৌরবের লোভে তখনও শেষ দৃশ্যের রাজসাক্ষী হতে হবে আমাকে—