সান্ধ্যকোরাস
লুকানোর সময় এখন
তাজ্জব ঘড়ির কাটায় স্থির থাকা নয় আর;
শখের সন্ধ্যায় শুয়ে ক্ষয়েছে আগুন
ভিড়ের পায়ে পায়ে লুটিয়ে যাও এবার—
ঘ্রাণমুখো সর্দারের পিছন দরজায় দাঁড়িয়েছ কেন?
অসহায়, নত মুখ রেখে ছড়িয়ে যাও অকাল বন্ধ্যায়—
কোলাহল মুখর এইসব দিন
তোমাদের পড়শীবৃত্তে লেপ্টে থাকুক
অনাগত যুদ্ধের মতো।
তবু এই রোদ—
নামের গোপন সিঁড়ি ছেড়ে
কোথাও যেতে হবে আমাদের।
নতুন কোনো শহরে,
নতুন কোনো পোশাকে
সুনাম হারানো নদীর মতোন জেগে উঠবো ফের।
যেন প্রৌঢ় মাটিসমেত অঙ্কুর উদ্গমিত হচ্ছে
নতুন কোনো চর;
যেখানে ভেদ-ব্যুহ নেই
জপ্টে ধরার মতো মুখোমুখি স্তূতি বেঁচে নেই আর…
আহত হাতের মিছিল থেকে শোকের গন্ধ ছড়িয়েছে
দিকহীন পায়রারা সবুজ অক্ষর ভুলেছে আবার—
নগরে নগরে লালায়িত শকুন উড়ছে এখন
সাপমুখো সমবয়সীদের চেনা যাচ্ছে না আর;
যেন তারাই তৈরি করেছে এসব।
পুস্তিকায় শুয়ে থাকা গল্পের মতোন
আপন বলয়ে লিপিবদ্ধ হচ্ছিলো অতীত
অগাধ মায়ার জাদুও পিছলে গেছে সেদিন—
এই দেখো,
আমাদের হাততালি বেচে
বেঁচে আছো তোমরা;
আর মঙ্গার মুখ জুড়ে মৃত্যুর শালুন রেঁধেছে জীবন।
পুরানো পোশাক খুলে খেয়ালি গানের ছবি জমা হোক হাতে
মাঠে মাঠে ছড়িয়ে যাক পুঁথির ক্লান্ত মুখ;
আহা দুপুরের বাবুই,
কলমি লতায় লতিয়ে উঠছে তোমার কাতরতা।
যেন সমাবেশমুখি পুতুলেরা
একে
একে
নিভে গেছে।
গোপন আওয়াজের গাঢ় চুম্বনে
হজম হয়ে গেছে নিভৃতে;
তবু সমাবেশ ফেরত কপাল পেছনেই থাকে
নিজস্ব থরথরে গোপন হয়, একা।
চারিদিকে সোরগোল ওঠে
তাজ্জব মুদি থেকে ন্যাকামির ফুটপাত পর্যন্ত
কোথাও বাদ যায় না—নাকের গর্গল;
আমাদের ঘোড়া দৌড় থেকে কেউ একজন
লাফিয়ে ওঠে
মাথাবিহীন।
মালো পাড়ার মেয়েটি
হলুদ ফ্রক প্রিয় ছিল তার
কখনোবা পরিস্কার সাদা সকাল
পথ পৌঁছাতে পারেনি তাকে;
ধুলোর নামতা মুখস্ত ছিল তার—
পৌষের শীত মাথায় হাট ফেরত মেয়ে সে
গন্তব্য ছিল লাবণ্য-সন্ধ্যা-কোরাস,
মা ও মায়ার স্কেচ।
দূরবর্তী ছায়ায় তলিয়ে গেছে সে
অন্য কোনো বিস্ময় বৃত্তান্তে…
অথচ দাগ লাগতে দেয়নি চোখে
স্থির দৃষ্টিতে মেঘ ডাকতো সে
তবু তালিয়ে গেলো
বৃষ্টির টানে, আড়াল ও শঙ্খ-শব্দের একান্ত ভাঁজে।
নতুন আয়নায় মুখ দেখলেও পুরানো চোহারাই থাকে
দাম ও গোছানো বিছানা ছাড়া
বদলে যায় না কিছুই।
গৃহহীন জুতোর মতোন
এখানে
ওখানে
দাঁড়িয়ে কেটেছে দিন—
শীত ও বৃষ্টির নরম ঘুম
ফেরেনি তবু গর্তের আলে।
মুখোশের দিন ফুরাবে এবার
হাটে হাটে শোভা পাবে সাবালক শস্য-মুখ;
ধর্মান্তরিত স্রোতের ভেতর লুকিয়েও কেটেছে বিকেল
অন্তরীণ শৈশব-কৈশোর;
সুরেলা, অন্তহীন মেঠোপথ
ঘুড়ির লেজে উড়ে গেছে মাঠ—
রুপালি জোছনার খাদে তলিয়েছে সেসব বিভা।
অজানা ছিল মোহনীয় সন্ধ্যার বিরল সংলাপ
যতি চিহ্নে লোভ ছিল তাদের
তবুও থামেনি কোথাও
বয়ে গেছে অস্থির ভ্রমণবাদ্যে—
যেখানে পা হারানো শহরের শোকসভা চলছিল
শখের সারিতে শোভা পাচ্ছিল
প্রসাদ হারানো রাজামুকুট।
ঘৃণা ও সুলভ জীবনের লোভে থেমেছিল তারা
ভাবেনি ঘরের স্রোত ভাসিয়ে দেবে—
ত্রিকূল হারানো যোদ্ধার মতো একা হয়ে যাবে একদিন।
এইসব পোশাক হারানো দিনের শরীরে লেপ্টে যাচ্ছে চোখ
অলস সিথানের দরজায় দাঁড়ানো তুমি;
তোমার ন্যাকপিনে পুঞ্জিত ক্ষোভের অসহায় কোরাস
যেন এইমাত্র যুদ্ধফেরত বিমানের কোল থেকে নেমে
সাদায় আবর্তিত হয়েছো এখন—
আমাদের বিস্ময় বাড়ি থেকে উড়বে না কেউ
বরং তলিয়ে যাবে ঘৃণাহীন সবুজ অন্ধকারে…
ফলাফল শূন্য খেলার মতো উদাসীন
নামহীন বন্দরে শুয়ে আছে একা—
শহর হারানো শোকে সজ্জিত অবয়ব;
অতি উজ্জ্বল কোনো রহস্য উন্মোচিত হবে এবার
আড়াল বিজ্ঞান থেকে হারিয়ে যাওয়া টুপটাপ
গতি পাবে আবার—
মন্ত্রমুগ্ধ গোয়ালার মতো তাকিয়ে থাকে সবাই
চলে আসবে হারানো কোরাস।
ফেরে না কেউ
জ্বলে না রক্তাক্ত পিদিম
অসহায়, অবহেলায় নাগরিক আলোয় পড়ে থাকে
নিষিদ্ধ কোলাহল।
তবু বৃষ্টি আসে
ভেসে যায় যাপিত ধুলোর দীর্ঘশ্বাস
নিরাপদ দূরত্বে জেগে থাকে
নতুন চর ও ফকফকা অন্ধকার!