সম্পর্ক
জোছনার সাথে আমার সম্পর্ক ছড়িয়ে গেলে
দৈবের চরাচরে—নক্ষত্রগুলো নির্লজ্জ চোখ তুলে
ঈর্ষা করতে থাকে আমাকে। সংখ্যালঘু প্রেমিকের
মতো মুখ দিয়ে বের হয় না আর কোনো অব্যক্ত কথা।
কিছু কিছু সম্পর্ক গাছ থেকে ডালের ন্যায় বিন্যস্তভাবে
ছড়িয়ে পড়ে গভীর বিশ্বাসে—বুকের পাঁজরে স্বপ্নগুলো
বেঁচে থাকে সুখেদুখে সংগোপনী ব্রতের ভাঁজে।
পরিযায়ী পাখিদের সম্মোহনে বেজে উঠা সুরের—
স্বরগমে হৃৎপিণ্ডের নির্দয় প্রাচীর যেভাবে ভেঙে যায়,
তাকে নিয়েই আমি সাজাতে চাই উৎসুক মেহফিল!
প্রতিনিয়ত ভোরগুলো ফিরে আসে আমার কাছে
ঋষির ধ্যানভঙ্গ বিতৃষ্ণায়; পার্থিব রঙধনু সম্পর্কের
সাঁকো টেনে—আমাকে নিয়ে যায় রোদ-বৃষ্টির পবিত্র
ভুবনব্যাপী মানচিত্রে—নির্বাক চোখ বিস্ময়ে ব্যাকুল।
প্রকৃতির হৃদ্যতা ভানুসিংহের গান হয়ে নাড়া দেয় মনে—
‘শ্যাম, মুখে তব মধুর অধরমে হাস বিকাশত কায়,
কোন স্বপন অব দেখত মাধব, কহবে কোন হমায়!
নীদ‐মেঘ‐’পর স্বপন‐বিজলি‐সম রাধা বিলসত হাসি।
শ্যাম, শ্যাম মম, কৈসে শোধব তূঁহুক প্রেমঋণরাশি।
বিহঙ্গ, কাহ তু বোলন লাগলি, শ্যাম ঘুমায় হমারা!
রহ রহ চন্দ্রম, ঢাল ঢাল তব শীতল জোছনধারা।’
সান্নিধ্য
উপমার ফুলঝুরিতে মিথ্যে আশ্বাসে
সাজাতে চাইনি তোমাকে—
সাদাসিধে নীলাকাশের মতো তুমি
যতটা পারো কাছে থেকো সারাজীবন।
সান্নিধ্যের সুগন্ধি—মানুষের বোঝার যে অক্ষমতা
তাতেই বেড়ে যাচ্ছে কলহ চারদিকে অহরহ…
সুন্দরকে সুন্দর বলতে ভয় পাওয়া মানুষগুলো
সত্যকে লুকাচ্ছে চোখের সামনে সন্তর্পণে,
আর তুমি আমি সেই পুরনো ধাঁচের
লুকোচুরিতে সাজাচ্ছি যত্রতত্র প্রেমের বাসর।
মানুষ আমি—ভুল হতেই পারে!
প্রেমিকার নেয়াড়ে ভুল টান দেয়ার মতো
আজ আমাদের জীবনে লেগে যাচ্ছে জট।
দোহাই
একটা রোদেলা দুপুর আমাকে রোদের ঝিলিক
দেখাতে দেখাতে নিয়ে গেল বিষণ্ন বিকেলের
কাছে; মেঘের দেখা না পেলেও রঙধনুর বর্ণিল
মাধুর্য মেখে নিয়েছি স্বপ্নবুননের ক্যানভাসে।
তবু বর্ষার বন্দনা গাইতে গিয়ে, আলাভোলা সুরের
ঐকতানে বুকের স্পন্দনে আগলিয়ে রেখেছি
তোমার নামের জপমাল। পুরনো ওই আয়নায়
আজও ভাসে তোমার চাঁদমুখের মায়াবী আকুলতা।
কেবল দু’টি হৃদয়ের দূরত্বে; দীর্ঘ বিরহে বেড়ে
যাচ্ছে যদিও আমাদের বয়স—এত কাছে থেকেও
আমরা হয়ে যাচ্ছি দিনকে দিন একে অপরের অচেনা।
কতবার ডেকেছি তোমাকে অনুরাগের দোহাই দিয়ে
কতবার চেয়েছি আপন করে আরও কাছে পেতে;
এলে না তুমি ফিরে আর—ভালোবাসার দোহাই দিয়ে।