সব কবি মরে যাবে
জীবিত থেকে কবি হওয়া যায় না। এর জন্য মরতে হয়। এ কথা ভাবতে
ভাবতে একদিন তিনি মরে যান। আর মরে কবি হয়ে ওঠেন। তার প্রথম
স্মরণসভায় খুব শোরগোল হয়। তার বন্ধুরা আর বউয়েরা আর শত্রুরা
মিলে খুব হৈচৈ করেন। খুব উৎসব হয়। ভাবা যায় উৎসবে যোগ দিতে
একজন প্রতিমন্ত্রী পর্যন্ত চলে আসেন! তিনি প্রতিশ্রুতি দেন প্রয়াত কবির
নামে একটা খালের নামকরণ করা হবে। এক প্রকাশক বলেন চাঁদা তুলে
হোক অথবা ভিক্ষা করে কবির লিখিত-অলিখিত সব কবিতা নিয়ে তিনি
পরের মেলায় একটা সমগ্র বের করবেন। পরের দুই বছরও এই কথা হয়।
আর চতুর্থ বছর তো আত্মসমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। একটা স্মারকগ্রন্থ
হলো না একটা কবিতাসমগ্র হলো না একটা খাল হলো না একটা-একটা!
এত বড় কবির মূল্যায়ন হলো না। এই ব্যর্থতা পুরো জাতির। পঞ্চম বছর
অবশ্য কোন হৈচৈ নেই। কোনো আক্ষেপ নেই। এমনকি স্মরণসভায় তিনি
ছাড়া কোনো মানুষও নেই। এবার সভার জন্য কোনো স্পন্সর পাওয়া যায়নি।
তিনি একা একা নিজেকে স্মরণ করেন। শূন্য চোখে তাকান। আর তখন
সাথে থাকা ফেরেশতাটি তার কাঁধে হাত রেখে বলেন, এবার দোজখে চলো!
সম্পর্ক
আমার বাবাকে একটি এনজিওর কাছে ভাড়া দিয়েছি।
প্রতি সপ্তাহে পনেরশ টাকা পাওয়া যাবে। তার বয়স
কম। এই মার্চে ৭২ হবে। এনজিওর পরিচালক বলেছে
বয়স ৮২ হলে আরও সাতশ টাকা বেশি পাওয়া যেত।
বাবাকে মাঠকর্মীর কাছে তুলে দেয়ার সময় তার চোখ
ভেজা ছিলো। চোখ মুছে উনি বলছিলেন, তুই পারলি?
আমি চুপ থাকি। এর উত্তরে আর কী ইবা বলা যায়!
মাঠকর্মী তাকে পিকআপে ওঠানোর সময় তিনি আমার
মৃত্যু কামনা করলেন। আমি অবশ্য তার দীর্ঘায়ু চাই,
বাবাকে ভাড়া দেওয়া ছাড়া; আমার কোনো রোজগার নাই!
কালো কৌতুক
ওই শিল্পী একদিন একথা খুব ভাবছিলেন যে মাত্র
দুটি হাত আর দশটি আঙুল দিয়ে কিভাবে
তিনি জীবন সামলাবেন আর কিভাবেই বা
শিল্প করবেন? এ কথা ভাবতে ভাবতে তার
বুক চিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বের হয়।
ভয়ানক সেই দীর্ঘশ্বাসটি ধীরে ধীরে তার সারা
শরীরে ছড়িয়ে পড়ে আর তিনি দেখতে পান
তার শরীর ভরে উঠছে আঙুলে। তার হাতের
তালুতে আঙুল। মুখে-বুকে-পিঠে-হাঁটুতে
আঙুল আর আঙুল। মাথায় চুলের বদলে আঙুল।
এরপর তিনি খুব ভালোভাবে জীবন সামলানো
শুরু করেন আর শিল্প করতে থাকেন। গোড়ালির
আঙুল দিয়ে তিনি যখন ফুলের চারা লাগান,
তখন পিঠের আঙুল দিয়ে যুদ্ধ করেন আবার ঠিক
একই সময় মাথার আঙুল দিয়ে ছবি আঁকেন।
তার ছবিগুলো হয় খুব সুন্দর। সারা পৃথিবীতে তার
সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাকে দেখতে দেশ বিদেশ থেকে
মানুষজন আসে। তার সাথে সেলফি তোলে। তাকে নিয়ে
ডকুমেন্টারিও হয়। তিনি এর কিছুই দেখতে পান না
কেননা তার দু’চোখ থেকেও বের হয়েছে দশটি আঙুল।