সতর্ক রোদে
নিশ্চিত বসন্তে ফোটো, ভয় নেই
অলৌকিক ক্যামেরায় অপার্থিবতার
স্থির চিত্রে সন্ধাতারা
পাঁচটি আঙুল বোলাতে বোলাতে
অবশেষে নখের আয়নায় ক্লান্তি
কোকিলের শিল্পসত্ত্বায়
সঙ্গীতের সারমর্ম নেই।
সূর্যমুখী,
সালোক সংশ্লেষণে সবুজতা
বাড়াও পাতায়
অন্ধকারে চাঁদ বনবাসী হোক
তার সুষমার ধারাজল
মেঘনার বালুচর শুষে নিক
শেষ রাতে মানুষের পাশ ফেরা ঘুমে
সৌন্দর্য স্বপ্ন হোক
আর ভোরের বাতাস এসে নিয়ে যাক
অস্তগামী সূর্যের পশ্চিমে।
গত রাতে স্বপ্নে ছিল মৃত চাঁদ
এখন তুখোড় সূর্যে জাগরিত
আদিগন্ত হাতের তালুয়
অষ্টাদশী উলঙ্গ নৃত্যের মুদ্রা
ছুড়ে দিচ্ছে
লুফে নিচ্ছি
ভেজা ঠোঁটে
অঙ্কশাস্ত্রে আমার ব্যুৎপত্তি নিয়ে
প্রশ্নহীন নক্ষত্র নিষ্প্রভ
নিশ্চিন্ত বসন্তে মূঢ়
কোকিলের কণ্ঠ ফেড়ে ছয় রাগ
ছত্রিশ রাগিনী কেড়ে নিয়ে
গ্রাফাইট পাথর ঘষে
মরা কাঠে জ্যামিতিক চিত্র আঁকতে পারি
তার; মরা চাঁদ গত রাতে স্বপ্ন থেকে
স্বপ্নান্তরে
মেঘের শবের মতো ভেসে গেছে—
আমি
ভোরে উঠে সূর্যের সতর্ক রোদে
সন্তর্পণে সামান্য হেসেছি।
ধন রাশি
পৃথিবী আড়াল হয়ে যাবে
সরে যাবে আলো, অন্ধকার
অবস্তু অকল্পনার চিত্রকল্পে
কিংবা কল্পচিত্রে
স্থির হয়ে যাবে
…মরে যাব একদিন
কোথায় যে চলে যাব!
অথবা কোথাও নয়—অনিবার প্রাণের প্রবাহে
স্থিতিময়তার সূত্রপাতে
ধন রাশি হয়ে থেকে যাব অনন্তের স্রোতে
যে স্রোত হয়নি শুরু, কোথাও হবে না শেষ
বিন্দুবৎ মহাশূন্যে মহাপূর্ণতার ধ্রুব রাশি।
অথচ এখন দিন, দীপ্যমান
জীবনের ঘাস পাতা ফুল ফলে
আলো বাতাসের আন্দোলন
এখন এটাই সত্য, চিরদিন সত্য
মনে হয় কোনোদিন ফুরোবে না—
মাটি ঘাস নক্ষত্রের সঙ্গে বেঁচে থাকা
দৃশ্যপটে চির স্থিতিশীল। তবু
মরে যাব একদিন
কোথায় যে চলে যাব!
অথবা কোথাও নয়, প্রাণের প্রবাহে চির
স্থিতিময়তার সূত্রে ধন রাশি।
মাথার ভেতর পতাকা বৈঠক
চতুর মাথায় অবিরাম খেলে মধ্যপ্রাচ্য খেলা
ফিলিস্তিনি হৃদয়ে আগুন শুকনো মাটির ডেলা
নিরীহ ব্যাঙের একান্ত ঘরে বোমারু বিমান হয়ে
বৃষ্টির মতো বর্ষিত হয়, মানবিক বিস্ময়ে
ব্যাঙের হৃদয়ে অভিযোগ জমে, মানুষ হয় না মানুষ
শান্তির নামে আলোচনা চলে ওড়ে প্রতারণা ফানুস।
মাথার ভেতর পতাকা বৈঠক বুকের ভেতরে দ্বন্দ্ব
মগজে আপাত শান্তি ঘোষণা, তীব্র ঘৃণার গন্ধ
বুকের জমিনে; অভিশাপ দিই, হে কূট জীবন, তোর
জীবন কাটুক পতাকা বৈঠকে, অশান্ত করিডোর।
সুরম্য এই গাঙ্গেয় ভূমি ইতিহাস গড়ে, সোনার
কলমে লেখা এ কাহিনি নিপুণ হীরের স্বপ্ন বোনার।
নরম মাটিতে প্রতিদিন লেখে জীবনের জয়গান
অহঙ্কারী পদাঘাতে কাঁপে মাঠঘাট ময়দান।
মুষ্টিবদ্ধ উত্থিত হাতে আকাশের সিনা ধরে
প্রচণ্ড টানে স্বপ্নের নীল নিজেদের বুকে ভরে
তারপর সে নীল ক্যানভাসে শান্তির ছবি আঁকে
চতুর মাথায় অশান্তি খেলে মগজের ফাঁকে ফাঁকে।
মননের মায়া-মমতার বনে ফোটে না কদম ফুল
পলল মাটিতে শেকড় ধরে না—ইতিহাস উন্মুল।
ইতিহাসগড়া মানুষ এখানে প্রাগৈতিহাসিক দুঃখের
বোঝা টানে আর গরুর মতন জাবর কাটে যে সুখের।
নিত্যদিনের পাপক্ষয়ে খুশি, রাত্রি ঘুমোৎসবে–
অন্ধকারে চামচিকে ওড়ে অসহ্য কলরবে।