জলের পাটি
দূর-ধুলোর সঙ্গে মিশেছে এইসব ভালোবাসা, পিঙ্গল কুয়াশা
কখনো সে ঝরে পড়ে
দুচোখের নুনজলে…
কখনো বা স্বর্গ মর্ত্যজুড়েই জলের-পাটি
বুকের বুননে ভাঙা বিরহের ছবি
কখনো মা-মাটি
কখনো সে ধ্রুব-পিতা
কখনো হারানো প্রেম এসে
হৃদপিণ্ডজুড়ে ভাসায় তরী…
ভালোবাসা, এজন্মের শেকড়ের টান|
সকালের স্বরবৃত্ত
তোমার সঙ্গে বিরোধ আমার লেগেই আছে—শুরু থেকে
মনের মধ্যে খিটিমিটি,
জলতরঙ্গে কৃপাদৃষ্টি
চিত্রকল্পে কথার খড়গ
শ্বাসাঘাতে প্রণয়-যোগ
তবুও তুমি আষ্টেপৃষ্ঠে
বেঁধে রাখো সবার শেষে।
যখন-তখন বাগড়া বাধাও সকাল-সাঁজে
যাচ্ছেতাই-ব্যবহারে তুমিও যে কী বাজে!
তোমার পায়ে সমর্পণে যখনই আমি ইচ্ছে রাখি
দূর আকাশে উড়িয়ে দাও অজুহাতের অযুত পাখি।
নিবেদনের আর্তি আমার যায় ভেসে যায় নিরবধি
তুমি ছাড়া শব্দদ্বীপে নেই যে আমার অন্যগতি।
জল-প্লাবন
নূহের প্লাবন শেষে
কে তুমি দাঁড়াও এসে
হাত ধরে নিয়ে যাও
অনঙ্গ বাও,
যা দেবার তুমিই দাও।
জুদি কিংবা আরারাত
সকলি পাহাড়, কেউবা ফারাও
পারো যদি,অভিন্ন অগ্নিতে কুসুম ফলাও।
জল যদি ঢুকে যায় বুদ্ধি ও শক্তির ঘরে
ইতিহাস জুড়ে দাও স্মৃতির রোমে
ভালোবাসা বেঁচে থাক স্পর্শের ওপারে।
মনোকষ্ট হচ্ছে,স্নান করো
মনে কষ্ট হচ্ছে?
বেদনার সাবানগুলে স্নান করো,
অবশ্য তার আগে বাথটাবে জল জমাও,
দু’চোখের নান্দনিক কল ছেড়ে ভরে নাও পুরোটা।
আস্তে ধীরে ডুবে যেতে থাকো, নদী মন্দাকিনী ভেবে,
জলের শীতল মেখে নাও চম্পক আঙুলে,
দেখবে চারপাশে সিন্ধু-সারসেরা খুঁটে খাচ্ছে
কবিতার অমৃত চরণ
বিষণ্নতার গোড়ালি থেকে তুলে নাও
মরা-চামড়ার ফসিল,
শরীরের ক্লেদ যায়নি তো এখনো?
এক কাজ করো, সুপারশপ থেকে কেনা
বাথ-বোম্ব মেশাও ঐ গরম জলের সঙ্গে
শুভ্র ফেনায় ফেনায় জড়িয়ে নাও নিজেকে
ভেবে নাও, শরীরটা তোমার নয় আজ,
দুঃখ-কষ্টগুলোও অন্য কারও,
এবার আলতো করে নিজেকে ছেড়ে দাও,
যেভাবে প্রথম প্রেমের কাছে সমর্পণ করেছিলে,
বৃষ্টি-জল-প্রদায়ী শাওয়ারের তলদেশে
একটুবা হেলে দাঁড়াও নতমুখে
দু’চোখ বন্ধ করে অন্ধের মতো
জলের কাঁপন স্পর্শ করো ত্বকে
ইচ্ছে করলে একটি গান ধরো…চেতনাবিলাসী;
শিরা-উপশিরাজুড়ে ছড়িয়ে দাও লেবু-মঞ্জরী
মাথাটি যতদূর সম্ভব আরও নত করে দাও
অজান্তা ইলোরার নিভৃতে যেমন,
শ্যাম্পুর সুগন্ধি ঢেলে নাও করতলে,
সঙ্গে কন্ডিশনার নিতে ভুলো না—
চুলের গোড়া থেকে কষ্টের খুশকিগুলো তর্জনীতে
ঘষে ঘষে তুলে ফেলো,দেখবে ভীষণ আরাম,
চুলগুলো রেশমী সুতোর মতোহালকা-নরমে উড়বে বাতাসে
দীর্ঘদিন উকুনের উৎপাত সহ্য করে আছ,
মা-উকুন ছাড়া চলে যাবে তার ছানাপোনা,
ভ্রূণাধিক নিক,চাম,পুঞ্জালসহ দৌড়ে পালাবে সব,
চিন্তা করো না,সপরিবারে বিদেয় হবে দুঃখমন্ত
জলঢেউ উজিয়ে সর্ব স্বেতপদ্মের মতো
সরোবর ছেড়ে এবার উঠে এসো ডাঙায়,
দেখবে,সকল কষ্টেরা আজ নুনের ফুল
তুমিও পাপড়ি যথা সজল অনঙ্গে
স্নান-উৎসব শেষে সুরে সুরে গাও তবে,
‘আহা, কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে’।