[মানুষই পরম। এই পরমে লুক্কায়িত থাকে সমস্ত গুপ্ত ধন। প্রকাশে তার কিছু বিবরণ পাই; বাকিটা রূপে-অরূপে-শূন্যে-অনুভবে সুপ্ত থাকে। তাকে উপ্ত করে তুলতে হলে মানবের মন গভীর ভাবের আশ্রয়ে যেতে হয়। প্রেমে মত্ত মনই পারে রূপ ও অরূপের আকারে-বিকারে নিজের রহস্য সন্ধানে যেতে। জগতের এত রূপসুধা, গন্ধবর্ণস্পর্শ, প্রকৃতির এত ভাব ও বৈচিত্র্য সকলই প্রেম, সকলি মহিমা। এই মহিমা আপনার। দিলের। পরমার।]
পরম এই মহিমারাজি।
সূক্ষ্ণতর আরও যতকিছু দৃশ্যমান—
দৃশ্যের অধিক যাহা—তমোহা, তমোহা
ভেদ করে বীজের ধারা, অমোঘ বিধান
তুমি চেয়ে আছ, নভোভার
সকল মহিমা তোমার।
অন্তরের অপরূপ বিভা
অবিশ্বাস-সম্ভবা তোমার জগতে
উত্তরে, দক্ষিণে, পূবে পশ্চিমে, নৈঋতে
যত ধূমকেতু আছে, নভোমণ্ডলে
কস্মিনকালে যাহাদের দেখা হয় নাই —
মেরাজের ঘোড়া—
কাহার অন্তরা বাজে
এত অনুরাগে—মায়ায়, সাজে
নক্ষত্রপুঞ্জ ভারি, সারি সারি
নাওয়ের রূপ
একলো ভেসে যায়—
ফিরে আসে নাই আর
সকল মহিমা তোমার।
এই চক্ষুদ্বয়, দৃষ্টিসীমা—সীমাহীন
ভূমণ্ডল, সৌরআলয়
সুনিশ্চয় জেগে রবে
রবে ও রাব্বানায়—
তোমার লা-জবাবে
বিলজিবাব দূরে সরে যায়—
সরে যায় এই প্রাণ, অফুরান
সংহতির মালায় গাঁথিয়া
উৎসবের আনন্দ আলেয়ায়—
অন্ধের মতন—মোহমুগ্ধতায়
অন্তঃপ্রাণে ছুঁয়েছিল কত বিষ
অহর্নিশ, সজল অনুধ্যান
আশেকান তাকিয়ে আছে
ঘোর সন্তাপে—
কিছু নাই হাতে অবশেষে
কিছু নাই বায়ুর দেহে
শরীরী ভাব ছাড়া
খাপছাড়া তলোয়ার
চকচক করে তার ধার
শানে শওকতে—
আসে কোথা হতে এই রূপ
আগুনের অশরীর-অদ্ভুত
বিলায় যত আলো আর আঁধার
সকল মহিমা তোমার।
দিব্য-অদিব্য আরও যতকিছু
স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য যত ভেদ ও বিধান
জগতের তুচ্ছ সংবিধান
ফেলে রেখে জেগে ওঠে যত ভাব
পরিপূর্ণ রূপে—
নূরে, অপরূপে—
তুমি চোখ হতে চোখে
চোখের মণিতে আলোক ছড়ায়ে
জড়ায়ে রয়েছ—
যত ছায়া, যত মায়া পরিয়েছ
জ্ঞানে-নির্জ্ঞানে—
নির্বাণে জ্ঞানশূন্য হয়ে
আপনারে থুয়ে তোমারে ধরে
তোমার অগোচরে
দেখেছি আপনার রূপ—
অন্ধ কূপ হতে
যতটুকু আলো আসে
তার জৌলুসে
হায়াত ও মউতের অদ্ভুত অধ্যাসে—
যত অভিশাপ আছে
জীবনের
জীবনে যত মৃত্যু ও ঘোর—
অঘোরে সমস্ত সন্তাপ
তার অনুকূলে দিয়েছি পাঠিয়ে
সুতীব্র উত্তাপে—
সায়রের উর্মিলা যত
কত ক্ষয়—অপচয় এই প্রাণ
প্রাণের আকুল আহ্বান
জ্বলে ওঠে তারকামণ্ডল
তারই আলোতে আলোতে
সূর্যপাতে
অমাবশ্যায়—
শ্মশানের ঘাটে
বসে থাকে যারা
যারা যায় মৃতের কবরে
শূন্যকারে, তুলে ধরে এই দেহ
বায়ুর বিনাশ করে
জাগিয়েছ যত প্রাণ
বীজের প্রাণণা থেকে
উজ্জ্বলতর বিভায়, যত গরিমা
সকলি তোমার মহিমা।
এই অনুচ্ছেদ—
বিচ্ছেদ ও বিস্বাদ যত
সকলি অনুগত প্রাণের আক্রোশে
ভেসে যায়—
দরিয়ায়—
জনশূন্য—কেউ নেই
নাকি আছে, সব দেখে
আঁকাবাঁকা পথে নিয়ে যায়
এই কায়া
উর্মির মায়ায়—
আর মানবের যত পুণ্যি,
যত পাপ—অভিশাপ
সমস্ত অনুতাপ
ছড়ায় হুতাশনে
পুড়ে যায়—
বায়ুর সিংহাসন উড়ে যায়
সকল দরোজা-জানালা বন্ধ করে
কোন পাড়ে, কোন পারে-
বাতেন ঘরে বসত করে কোন অধরা।
জাহেরে যা কিছু, যা কিছু বাতেন
বাতেনে অন্তরের রূপ
কাহার স্বরূপ দেখে
জগতের এত সুধা-সৌন্দর্য রেখে!
তবু জান যায়
কত লতিজায়
আর কত কত মানুষ
আর পশুপক্ষীর ভাব
লাস্যময় জগতে কত হাস্যকর
প্রাণের দুর্ভাব—
মিটে নাই আজও।
এই ঘাটে নাও নাই
সকলে ভেসে গেছে জলে
জলের অনুকুলে—
উজালা সকল আলো ও আলেয়া
জগতের সমস্ত উৎসার
সকল মহিমা তোমার।
কীরূপ অরূপের সামিয়ানা
মানবের মনের ওপর
যতটা পুরো চাদর
অনাদরে কত প্রাণ মরে গেছে
কালে কালে
কলের মেশিনে
নিশানে, বেনিশানে
মরে যায়, প্রাণশক্তি
অনুরক্তি নাই কোনো যার
সীমার, সীমার—
নির্দয়-নিঠুর মানুষের মন;
জগতের সমস্ত ভার
বীজের সম্ভার থেকে এসে
সহস্র প্রাণের অভিঘাতে
এই বসুধায়—
রূপের বিভায়
পরান নাচায়।
জৌলুসে ভরা
থরে থরে সাজানো প্রকৃতি-ধরা
যত রূপ, যত খুন ও বিলাপ, যুদ্ধ
অবরুদ্ধ এই প্রাণ
প্রাণের জয়গান
থেমে আছে—
আরও কত স্মৃতি—
খ্যাতি ও অ-খ্যাতি
অবনতি, মানুষের মনে
মানুষ ছেড়েছে আপনার রূপ
অন্য কোনো খানে!
নিজেরে সে চিনে নাই
প্রকৃতির রূপে, আকার-বিকার
এস্রাজে বাজে যত ঝংকার
সকল মহিমা তোমার।
সোনার গহনা—হীরামণ্ডলীদ্যুতি
যত অনুস্মৃতি, যত ইতিহাস
ভর করে মানুষ এসেছে আজ
সোনার তরী বেয়ে—
কার পানে চেয়ে
অপরূপভরারূপবাহার
আপনার—আয়নার—আপনার।
ভেসে যায়, ভেসে যায়
নিরুপায় জল
কোথায় সুদূরে হারায়
নায়রীর নাও
তার নাই সন্ধান
কোন মহাজন—
অরূপরতন যার নাম
যত আছে আহকাম, আরকান
রিপুর সমানরূপ কাম
অকূলে, কোন দরিয়ায়—
আপন সিন্দুকে চুরি করে
নিয়ে যায় আপনার ধন।
স্রোতেলা চোখের ধারা
মমতার অশ্রু বেয়ে পড়ে
অপার, নাই কূলকিনারা—
কিনারায় যত ভীড়ে আছে নাও
উজান দেশ হতে এসে
বসেছে নাওয়ের মেলায়—
একেলা ফিরে যেতে হবে
শূন্যতা ও অতিকায় খালি—
মাঝিমাল্লাহীন
নাওয়ের রাখালি।
নির্বন্ধু নাওয়ের মাঝি তুমি একা বাও
একা যাও ভেসে
নিরুদ্দেশ হতে এসে অনামা দেশে হারাও।
জবা ও কুসুমের সুবাস
ছড়িয়ে ক্ষণকাল মিলায় অবশেষে
নীলিমার চিদাকাশে তুমিও হারাও।
কত না মায়ার ফুল ফোটাও।
আবার কী জাগাও এই মন
দেহান্তরের বনে
দেহ ভাসে শূন্য মাঝে কী খেলা খেলাও।
নির্বন্ধু নাওয়ের পাশে
কাহার অন্তর একা ভাসে
কাহার পরান তিয়াসে
কার লাগি ফুল ফোটাও।
মন দিলাই দিলাই দিলাই না কেন্ মন
পঁচিশ তত্ত্বে মানুষ গড়া বায়ুর সিংহাসন।
ছলাৎছলাৎ চলছে কেমন মাটির নৌকাখান
দেহতরী থাকবে পড়ে তোর হইবে রে আসান।
তথাপি এই সাত আসমানের নিচে—
এই জনপূর্ণ ভবে
কত ভাবে, অ-ভাবে
রিপুবশে—
অযাচার যত দাঁড়িয়ে আছে
আর জবানির তালা বন্ধ
অন্ধ অনুকার—
করে নাই সৎকার কোনো
কেবল ছলনা ও ছল—
কলকল ধ্বনি আজ বাজে
সাজ সাজ সেনানির মতন
রাঙায়ে চোখ, শাসনের
নাই কোনো দিশা
অনুতাপহীন
জগতে বেড়েছে শুধু অমানিশা।
গুচ্ছ হুচ্ছ আঁধার হয়ে আসে
মানুষের মন
মনের গোপন আরশি
অনায়াসে উজালা হয়
স্রোতধারায় পলির সমস্ত সঞ্চয়
জমা হতে হতে গড়ে যে নতুন আবাস
তাতেও লেখা থাকে অদৃশ্যে মহা সর্বনাশ!
কপালে সর্বনাশ পৃষ্ঠদেশে থাকে স্মৃতির মতন
প্রাণ মরে যায়—
বেঁচে থাকে রূপে
বসুধা বিদ্যায়তন।
অনুচিত প্রহরের মালা
যত ফুল দিয়ে গাঁথা
আর রঙের কচি কচি যত ব্যথা
বানের জলের মতন
রিপুর এত আগ্রাসন মনে—
মনের গোপন।
সকরুণ বীণা বাজে
আপনার সুরে—
আর্তনাদ বাতাসে মিলায়
কষ্টের পরিখায় চেয়ে দেখে
এত অনুতাপ—
জগতের সমস্ত পাপ
শূন্য, দ্বিধাহীন শূন্য হয়ে
ওড়ে যায়—
হাশরের ময়দানে—
শেষ বিচারের দিনে
ইয়া নফসি, ইয়া নফসি
মন তড়পায়!
নাই হতে এসে
নাই হয়ে গেছে প্রাণ
প্রাণের অঘ্রাণে
তোমার চোখের কোণে
কিছুটা বিষাদ রয়েছে জমা
এই স্তুতি রয়ে যাবে শুধু
তোমার ধূধূ অন্তরে
সকাতরে।
আদি অগ্নিপিণ্ড ভরে
জলের স্বভাবে অস্থির
স্থির নাই কোনোকিছু আর
তোমার চোখের তারার বয়ান
অফুরান গীত—
অতীত কিছু নাই
জবানিতে উঠে আসে
ভবিতব্যের ইতিহাস
মিছামিছি অযথাই?
পরান ফুরিয়ে গেছে
পরানের সমস্ত গান—নতুন আহ্বান
জেগেছে মাতৃআলয়ে
নিশিকালে কুপিবাতি জ্বলে
তোমারে হারায়ে—
তবু গুণগান
সকল মহিমা তোমার—তুমি মহীয়ান।
অরূপ সেরূপ থেকে এসে
সকল রূপের দেশে
নাই-রূপ হয়ে লুকিয়ে আছে মন
মনের গুপ্ত ধন।
যে জন সকাশে রিপুতে বসে করে আলোড়ন
তারে চেনাজানা নাই, মনচোর
বিশ্বাসে বস্তু মিলে তর্কে বহুদূর!
গুহার পরতে পরতে যে অন্ধকার
বিভীষিকা হয়ে আসে নিকষ রাত্রির অধিক
তার সাথে মিতালী করে
চলেছে সুদূরপারে—
অনবদ্য উপমায়—
রূহ উড়ে যায় সাত আসমান
কালার বাঁশরী ভেঙে খান খান
তসবীর দানার বেদনার সমান
অন্তরের তারারে নাচায়।
তারাদের ভাই আমি গায়ে মেখে যথেষ্ট আলোক
আদমের গরিমায় দূরে সরে যায়
আগুনের সমস্ত পুলক।
আগুন ভালোবাসি
তাই পোড়াবেদনায় হাসি
শূন্য থেকে আরো শূন্যতায়
অদ্ভুত চাঁদোয়ায়-
মানুষের মন চিরদিন নয়,
সহসা মরে যায়-
শব্দ থেকে অ-শব্দের গরিমায়
জৈব থেকে অজৈবে পরিযায়-
ভাষার মুকুট থেকে নির্ভাষায়
অসংখ্য সংকেতে সে ধায়-
রূপরসগন্ধবর্ণস্পর্শহীন
দূরের অ-মায়ায়।
হৃদয়কমল ভেসে যায় ডরে—অজানা শঙ্কায়
তুমি কোন জলে নেমে কাঁদো বুকের ব্যথায়।
শুধায় নি এসে কেউ কেন নাচে বায়ুর প্রলাপ
পাখি উড়ে গেলে—শূন্যে—পড়ে থাকে অনুতাপ!
খোদাই করেছি অন্তর সুমিষ্ট বিষ ঢেলে
কার নামে
চিকিমিকি প্রসূনের ডানা মেলে সে আসে
বৈকুণ্ঠধামে।
অন্তর বাহিয়া ঝরে যে বেদনা
মিহি মিহি দানা তার
উপেক্ষায় পড়ে থাকে নিঃস্ব হয়ে
এতটা অবহেলার
ভার পুঁতেছি নিজেই বিষের বিষ
সকাতর করুণার
তোমার পাষাণ সমান হিয়ায়
বাজে বিচিত্রিত ধ্বনি
চঞ্চলতার।
সকল মহিমা তোমার।
তবু মরে যায় বিদ্যাবুদ্ধিজ্ঞান—
সুমহান খ্যাতি
বিনাশের দিকে ধায় গরিমা,
আপনার
সকল মহিমা তোমার।
বায়ু থেকে বহু বহু মানবের যান এসে
ভীড়েছে যে তীরে,
তার পাড় ভেঙে পড়ে ক্রমে
বিভ্রমে, বৃথা জগতের রূপ-ধ্যান
সাধনার মান বিফলে গেলে জেগে ওঠে
নতুন চরাচর,
জগতে কে আপন-পর
ভেদ নাই- অন্তরের শানে—
সাত আসমানে নূরের কারিশমা
নেমে আসে মানুষের জমিনে।
জমিন ছেড়ে আমাদের পিতাপ্রপতিামহ
ছেড়ে গেছেন সমুদ্দুরপুর
বাঈজির নৃত্যের নূপুর আজও পড়ে আছে
অলেক্ষে বেজে ওঠে—
রিনঝিন,
ইতিহাসের বেদনাবোধের অন্তর
সকাতর বেদনায় চিনচিন।
বেদনার সাথে কে না জড়িয়েছিল গোপনে
বাতাসে ছড়িয়ে দেয় মায়া কানে কানে
লাভা গলে গলে সে-ও হয় মোমের যাতনা
বলে, যাও পাখি বল তারে তুমি ভুল না!
আর কিছু কিছু ভার
যন্ত্রনার অধিক কোনো ভাষা নাই
মলিন অধ্যায়ে কোনো মালা নাই গাঁথা
ফুরিয়ে গেছে সব ইতিহাস
দমের হাঁসফাঁস—
তারপর নূহের প্লাবনের পর যেমন
জেগে ওঠে নতুন প্রাণ
আগুয়ান—
মহাঘড়ির কাঁটায় বসে দোলে
ইতিহাস—
মানবের সকল বিশ্বাস
আপন দিলে আপনার—
সকল মহিমা তোমার।
আপনায় আপন মাঝে
ব্যাথায় বাজে গভীর অসুখ
সুরত কাহার রূপে আসে
ভূবন মাঝে কাঁপায়ে মুখ!
এই রতি রত্নমণিহার দুর্গতিনাশ
ঊর্ধ্বগতি রোধ কর রিপুর বিনাশ।
সর্বলোকব্যাপী— দ্যুলোক-ভূলোক আলোক ছেড়ে
বাহির হয়েছে নয়া দ্যুতি উল্লাসে ভেদ করে।
জগতের ভেদ যত উড়াল বাতাসে হাসে
অলৌকিক মহাপ্রাণ লৌকিক দেহে ভাসে।
দেহরে সাজিয়ে নাও মাঝি ছাড়া বাও
চন্দ্র-সূর্য চেয়ে আছে জলে ডুব দাও।
জলেও আনন্দকেলি রাধাকৃষ্ণ মিলে
কামের কীর্তির রণরণি আপনার দিলে।
রিপুর বিনাশে নাচ পেতে নির্ভার
অনন্ত মানুষরূপ জগৎসভার।
সকল মহিমা তোমার।
জলের গান আমি লিখিব কেমনে।
স্রোতেলা নদীরে শুধাই।
আর খোয়াজখিজির জেগে ওঠে ঊর্মিলার তালে,
বিচূর্ণ পানির ফেনায় কলকল আশেকান।
উছলে ওঠে জল, উড়ে যায় সাত আসমান।
সুনসান স্তব্ধ হলে ছলচ্ছল ধ্বনি, খিজির ঘুমান।
কেমনে লিখবাম আমি জলপিরিতের গান!
এ কেমন তামাশা তোমার
ভাসা ভাসা কাঁঠালপাতায় পিঁপড়ার ছানা
সকরুণ স্রোতে ভেসে যায়
ধুঁকপুঁক বুকে বয়ে বয়ে কোন পারে ভিড়ে
অশেষের কোন দরিয়ায়।
সে এক অচেনা অরূপ জগৎ
জগতের অনুরূপ রূপ নাই
মায়ার জগৎ থেকে পিঁপড়ার জান
নিঃস্বতায়, একেলা করলাই।
তুমি কে—কোন মহাজন, রঙ্গিলা সাঁই
আদমে আদম সৃজিয়া নিরাকার হইলাই।
আকারে বিকারে এত শান, এত হকিকত
জাহের-বাতেনে আদমের কত না গালত!
কত রূপ, কত রং তোমারই সে প্রতিরূপ
আদমে পরমের বাস, তুমি নিস্পন্দ নিশ্চুপ!
জগৎপ্রবাহে ভেসে চলে কত নায়রীর নাও
পীপিলিকা ভাসে সেই রূপজলে
উজালা দুনিয়ার যত ভাব, যত মায়া
অরূপে নিরাকারে বয়ে যায় মহাকালে। —
সকল মহিমারাজি—
আপনার রূপ—
কাল নিরবধি
মানবের তরে প্রেম—
সতত অনুভবার
আপনায় দিলে, আপনার—
পরমার—
সকল মহিমা তোমার।