প্যান্ডোরার বাক্স থেকে
চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে কালো ধোঁয়া প্যান্ডোরার বাক্স থেকে—
সহস্র মানুষের মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে
পউষের ঘন কুয়াশার মতো
ঘুমিয়ে পড়ার কাল এসে গেছে
চলো, ঢলে পড়ি, ঢলে পড়ি ঘুমে—
মেঘের আড়ালে চাঁদ ঢেকে গেছে
চলো, ঢলে পড়ি, ঢলে পড়ি ঘুমে…
কলাপাতায় মোড়া আমার শৈশব। ঘাসজলকাদা লুটোপুটি—
আদিগন্ত সবুজ ফসলি মাঠ, আর শরতের রাতে জোনাকীর
পেছনে ছুটে চলা, সবুজ ঘাসের পথ, নদীর কিনার ধরে
হেঁটে যাওয়া বহুদূর…
আহা শৈশব, তাতা ধিন ধিন, রাঙা রাতদিন
খোলা মাঠঘাট, পুকুরের জল খেলা রাজহাঁস—
ঘরে আম্মার হাতে ধরতির মায়া শান্তির
ছিল হৈ চৈ, কতো মার্বেল, কতো রঙ্গিন!
প্যান্ডোরার বাক্স থেকে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে নগরীর
প্রধান সড়কে, অলিতেগলিতে—তাকে কে থামাবে? কালো ধোঁয়া
কুণ্ডুলী পাকিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে স্নানকক্ষ থেকে রান্নাঘর,
স্কুল থেকে আদালতে; সব গ্রাস করে নিচ্ছে!
অন্ধকার তার দুই হাত খুলেছে
কে আপন কে পর, সবই সে ভুলেছে—
এমন নিষ্ঠুর, এমনই সে খুনি
গৃহের কোণে কোণে পতাকা সে তুলেছে।
হাসপাতালের ফুলগাছ
আশ্চর্য সুন্দর নিয়ে ফুটেছে পুষ্প
হাসপাতালের বাগানে!
আমি জানি, তোমার শেকড়ে হাসছেন
পৃথিবীর মুখ না দেখা কোনো শিশু
যাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তার বাবা-মা
আর এখন তুমিই তাকে ভালোবাসা দিচ্ছ—
শেকড়ে জড়িয়ে রাখছো আদরে
এজন্য তোমার ফুলে আমি সেই
শিশুটির অনাবিল হাসি দেখতে পাচ্ছি
শেষ নৈশভোজ
(লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির চিত্রকর্ম ‘দ্য লাস্ট সাপার’ অবলম্বনে)
এইখানে বসে আছে বারো জন উৎকণ্ঠা নিয়ে
চোখেমুখে। মধ্যমণি চুপচাপ, তার স্নিগ্ধ মুখ
থেকে ঝরে পড়ে সকালের রোদ
‘তোমাদের মধ্য থেকে একজন বিশ্বাস ভাঙবে…’
কেউ একজন, কে সে? জল্পনার কোনো শেষ নেই।
সামনে টেবিলে রাখা থরে থরে সাজানো খাবার
মধ্যমনি চুপচাপ, তার মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ।
বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ, কেউ একজন…’
উপস্থিত সকলেই হতবাক, একে অপরের
দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে-কে এমন বিশ্বাসঘাতক!
শুধু একজন ছিল চুপচাপ, তার ওষ্ঠকোণে
মৃদু হাসি, প্রতারণা। সে জুডাস, চতুর জুডাস…
রাত্রির গভীর থেকে উঠছিল ধ্বনি, হাহাকার
দূর থেকে আসছিল আওয়াজ অস্ফুট কান্নার
একজন উঠে গেলো, সে কোথায় শুধু সে-ই জানে
একা-একি চলে গেলো ঝোপঝাড় জঙ্গলের পানে
তার হাতে ছিল ঝুলি, তাতে ভরা স্বর্ণের মোহর।
মুনাফেক তাকে বলি—মুখে হাসি হৃদয়ে জহর
জুডাস, জুডাস—কেবা তোমাকে চিনেছে আজতক
সবার সঙ্গেই আছ, আটমোস্ট বিশ্বাসঘাতক!