দালানের ভাষা
আমার তো কোনো দেনা নেই
আমি তবে কেন পিছন ফিরে দাঁড়াবো
দাঁড়ালে যে তোমার মতো দু’চোখ হারাবো
সড়কের বাতিরানিভে গেলেই
স্বরের পাখিরা জেগে ওঠে ভোরের চোখে
উঁকি দেয় আলো দালানের ফাঁকে ফাঁকে
ও দালান তোমার গায়ে ইট-সুড়কির বালাই নেই
আমার দালানের ভাষা বোঝে গেছো আলোরা আগেই
অন্তর্জাল
আমি এক ব্যাকুল বালক
অসংখ্য দুপুর দৌড়িয়েছি
চড়ুইয়ের বাদামি পাখার পিছনে
সেই কৈশোরে দিয়েছি পাখার পরীক্ষা
তুমি ছিলে অন্তর্মুখী নারী
মাড়াওনি চৌচালা-ঘর-চৌকাঠ
ভাবি, যদি অন্তর্জাল থাকতো তখন
তাহলে তুমি ঢুকে যেতে ঘর থেকে মনঘরে
তুমি তো পুরনো মনঘরেই রেখেছে বেঁধে মন
এখনকার মনগুলো জড়িয়ে গেছে অন্তর্জালের জালে
প্রেমের দানা কুড়াতে এখন আর লাগে না বনেদি প্রশিক্ষণ
এক রাত অন্ধকার
রবি ঠাকুরের শিলাইদহ থেকে
আমি একটি রাত কিনেছিলাম
কুঠির পাশে পেতেছিলাম একটি দ্বিতল ঘর
সেই এক অন্ধকার নির্ঘম রাতে— আমি একা
একা খেলেছি অদৃশ্য ইঁদুর বিড়াল আর বাদুড়ের সাথে
ডিমলাইটের ভিতর ভয় ভয় খেলায় আমার সঙ্গে মেতেছিল মশারি
অবশেষে ছোপ ছোপ ছোপ ছোপ রক্তে ভেসে গেছে মোজাইক করা মেঝে
তুমি কি বুঝো নির্জন নির্ঘুম এক অন্ধকারে একটি রাত কি ভয়াবহ হয়ে উঠে?
টিনঘর
বৃষ্টিরা খেলুক তোমার বুকের ভিতর
ও টিনঘর, তুমি বাজাও তোমার সুর
তোমার স্বরের ভিতর বেঁধে দাও আমার বুক
ধুক ধুক উঠুক আওয়াজ, বাজুক নৃত্যের নূপুর
পাড়ের ভাঙন দেখে আমিও খাস জমি খুঁজেছিলাম
বনজ বৃক্ষের গন্ধ নিয়ে আমিও নারীর বেদনা বুঝেছিলাম
ও নারী, তুমি মুখর বৃষ্টিতে ভিজে মাদকতা ছড়িয়ে দাও মনে
‘কোমেন’ দুর্বল হলেও ডুবে গেছে অসংখ্য টিনঘর, ঘাসঘর, মনঘর
কমলা খাওয়ার দুপুর
বলেছিলাম- আমাকে কয়েকটি মাঘী পূর্ণিমা দাও
বলেছিলাম- তোমাকে এনে দিবো বেতের ফল
জীবনানন্দের চিলগুলো উড়ে যাবে পৌষের রাতে
পূর্ণিমার ভিতর কালি নদীর সন্ধ্যারা লুকিয়ে ছিল
আমাদের মধ্যে শুধু সম্পর্কহীন মধ্য-বিরতি ছিল
আমরা কেবল কমলা খাওয়ার দুপুর পেয়েছিলাম
এ যাত্রায় আমরা আর সন্ধ্যার পাড় ছুঁয়ে দিবো না
শামুক অথবা ঝিনুকেরা ঘুমাক সমুদ্র ফেনার শরীরে