কবির মৃত্যু হলেও
কবির মৃত্যু হলেও
কবিতার মৃত্যু হয় না
কবিতা মৃত্যুকে শাসন করে
কবিতা মৃত্যুকে ভয় পায় না
বরং মৃত্যুই
কবিতাকে ভয় পায়
কবির মৃত্যু হলে
কবিতার শব্দেরা প্রতিবাদ করে
মৃত্যু-শোকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়
কবিতার প্রতিটি স্তবক-অনুচ্ছেদ
কবিতার অসম পঙ্ক্তিগুলো
প্রশিক্ষিত সৈনিকের মতো
গড়ে তোলে প্রতিরোধব্যূহ
কবির মৃত্যু হলেও
কবিতা কখনো নত হয় না
কবিতা কখনো হয় না পিতৃহীন
কবির মৃত্যু হলেও
কবিতার উপমা-উৎপ্রেক্ষা-অনুপ্রাস
নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে
কবির মৃত্যু হলেও
কবিতা অমিত শক্তিতে
কবিকে দেয় সহস্র জন্ম-জন্মান্তর।
কবি শঙ্খ ঘোষ
তিনি চলে গেলেও থেকে যান
বাবরের প্রার্থনায়
তিনি চলে গেলে
আমাদের মাথায়
বৃষ্টির আকাশ ভেঙে পড়ে
পায়ের তলা থেকে শক্ত ভিত সরে যায়
তবু থেকে যান
পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ
তিনি চলে গেলেও থেকে যান
চলে যাওয়া তাঁর নিয়তি নির্ধারিত
কিন্তু থেকে যাওয়া তাঁর দায়
তিনি মন্ত্র উচ্চারণ করেন
মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয়
আমাদের মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
আমাদের সুখ ঢেকে যায়
আমাদের সন্তাপ ঢেকে যায়
তিনি চলে গেলেও থেকে যান
বাবরের প্রার্থনায়।
কবির ফটোগ্রাফ
কবির কবিতার খাতা
আজ স্তব্ধ
কবির উপমা-চিত্রকল্পগুলো আজ
বিপন্নতা বোধ করে
কবির কলম আজ
নিঃসঙ্গ একা শোকাহত কেবল
কবির পাজামা-পাঞ্জাবি বিষণ্ন
আটকে থাকে
বন্ধ আলমারির হ্যাঙারে
পত্রিকায় ছাপা কবির কবিতাগুলো আজ
শোকবার্তা হয়ে যায়
কেবল অনন্তকালের জন্য দেয়ালে
উঠে যায়
কবির হাসিমুখ ফটোগ্রাফ।
কী লিখে যাই এপিটাফে
কী লিখে যাই এপিটাফে
মৃত্যু মিশে থাকে
ধোঁয়াশা উষ্ণ হাতের কফির কাপে
জীবন নিছক খেলা
জোয়ার-ভাটার নাচে
মৃত্যু উড়ন্ত চিল—কাছে আসে কালবেলা
স্বাগত জানাই শিষ্টাচারে
আড়ষ্টতা কিছু নেই
যে কাছে আসার সে তো কাছে আসবেই
আঙুলে জড়িয়ে মৃত্যু
মৃত্যু আমার ঠোঁটে
চুমু খেতে চায়—তবু প্রতিদিন সূর্য ওঠে।