স্বদেশ
শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে ঢুকে জাতীয় সঙ্গীত লিখতে বললেন। সকলে গোটা গোটা দানা দানা অক্ষরে লিখে ফেললো প্রিয় সঙ্গীত। অঘ্রাণী ইস্কুল ব্যাগ থেকে সাদা পৃষ্ঠা বের করে স্বদেশের মুখ এঁকে নিচ দিয়ে লিখে দিল—আমি তোমায় ভালোবাসি। শ্রেণীশিক্ষক ভেরিগুড কিংবা টিক চিহ্নের আদলে একটি রেখার ওপর আরেকটি রেখা এঁটে দিয়ে অঘ্রাণীর চোখ-মুখের দিকে তাকালো।
ছুটিঘণ্টা বেজে উঠতেই ঢঙ ঢঙ, শিক্ষক ভাবতে লাগলো—আহা! কি সুন্দর স্বদেশেরে মুখ—রঙ রঙ।
পাঠ
পৃথিবীর পাঠশালায় জননী পাঠ করে ফিনকি দিয়ে ওঠা ভাতের বুদ্বুদ; আর পাখিরা পাঠ করে পালক থেকে খসে যাওয়া একেকটা অক্ষরের ব্যাকরণ। তাদের চোখ ও ঠোটের দীর্ঘশ্বাসে আকাশ-বাতাস বোবা হয়ে যায়—
আহা! বেচারা পাখি…
অই যে দেখছো ট্যাকে বসা লোকটা; উনি আমার বাপ! অই ব্যাটা পাঠ করে জীবনের মন্ত্র—পোলাডার লাল কোর্তা, মাইয়্যাডার স্নো, কাইল কিস্তি!
পৃথিবীতে কেউ কেউ শুধু পাঠই করে, নুনের স্বাদ পায় না। তাই পাঠ চুকাতে গিয়ে হোচট খায় পিচ্ছিল পথে। ভেঙে যায় সংসারের ঘাড়, কেটে যায় দম্ভের ঠোট, পাণ্ডুর হয় বেহিসেবি হাঁড়ি। তবু ন্যাড়া কুকুরের মতন লাল জিহ্বা বের করে কিংবা ল্যাংড়া পায়ে দৌড়াতে চায় অন্তহীন বৃত্তে। পাঠ চলে নিজস্ব নিয়মে…
ব্রিকফিল্ডের লাল ইট
অতঃপর মাটি ব্রিকফিল্ডে নিজেদের
. ভাঙে
. গড়ে
আপডেট হবে বলে পৃথক পৃথক
. জ্বলে
. পোড়ে
লাল আগুনে খেউড়ি-খিস্তি খেয়ে
. লাল লাল ইট হয়
. শক্ত-সুশক্ত হয়
আকাশ ছোঁবে বলে ব্রিকফিল্ডের লাল ইট একত্রিত হয়ে সুউচ্চ টাওয়ার হয়। অথচ আকাশ ছোঁয়া হয় না। শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোদে পোড়ে বৃষ্টিতে ভেজে আর তাদের দেহে একদল কাউয়া বসে কা কা কা করে, যাদের আমরা কাক বলে চিনি।
রাহা বনের সাতটি হরিণ
পিতামহের রক্ত নিঃশেষে বিভাজ্য হলে—
দখিনে গড়ে ওঠে রাহাবন
অই বনের চারপাশে বাঘের মগজ
ভেতরে সাতটি হরিণ—নির্ঘুম ও অন্ধকারে
. ঢিবিঢিবি
যৌথ প্রযোজনায় তারা বড় হয়, মাঠে যায়
পাঠশালায় রপ্ত করে কৌশলী চোখ
আর তারাও একদিন—
পৃথক বনে নিমগ্ন হয়ে ভাগ করে আয়ু
মেঘের গম্ভুজ থেকে
রোদচশমার গল্প পাঠিয়ে বাঘ
কিনে নেয় একটি হরিণ
বনের লাল আবডালে বারোটি চোখ
এখনো আছে সামাজিক সমাবেশে।
তুলসি গাছটি
রোদে শুকাও ভেজা ব্রা আর চুলের ঢেউ। জাবরকাটা গাভীর চোখের মতো তোমার চোখ উড়তে থাকে ফড়িঙডানায়। মাঝে মাঝে পুড়ে যাও রৌদ্রক্ষুধাতাপে। ফড়িঙের দল বিশ্রাম নেয় ব্রা কিঙবা উঠোন কোণে দাঁড়িয়ে থাকা তুলসি গাছটির বুকে। তুমি ফড়িঙ ধরতে গিয়ে ভেঙে ফেলো তুলসি গাছের ডানা কিংবা পুজো করো ডানাকাটা ভোরে।
উঠোন কোণে আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা এই তুলসি গাছটি অনেকজন শঙ্খচূড় ইমাম।